২ নভেম্বর। ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালের খেলা শেষ। ম্যাচ জেতার পর ছুটে এসে স্মৃতি মন্ধানাকে মাঠের মধ্যেই জড়িয়ে ধরলেন উচ্ছ্বসিত এক তরুণ। কানাঘুষো, চলতি মাসেই সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন ক্রিকেটতারকা স্মৃতি মন্ধানা। পাত্র ৬ বছরের পুরনো প্রেমিক পলাশ মুচ্ছল।
সম্প্রতি বিশ্বকাপ জয়ের পরে বহুকাঙ্ক্ষিত ট্রফিটি নিয়ে একসঙ্গে পোজ়ও দিয়েছেন এই জুটি। জয়ের মুহূর্তকে ভাগাভাগি করে উদ্যাপন করেছেন। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমেও।
স্মৃতিদের বিশ্বকাপ জয় দেখে হবু স্ত্রীর দিকে ছুটে আসেন পলাশ। ভারতীয় মহিলা দলের সহ-অধিনায়কের গায়ে জড়িয়ে দেন ভারতীয় পতাকা। জড়িয়ে ধরেন একে অপরকে। তার পর খানিক চোখে চোখেই সারা হয়ে যায় অব্যক্ত ভালবাসার কথা।
স্মৃতির হবু স্বামী পলাশ ক্রিকেটদুনিয়ার মানুষ নন। বিনোদনজগতের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে পলাশের। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপর দখল রয়েছে তাঁর। হিন্দি চলচ্চিত্রের উঠতি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে নাম উচ্চারিত হয় পলাশের।
‘তেরে বিন্ লাদেন’, ‘সুইটি ওয়েড্স এনআরআই’ ছবিতে সুর দিয়েছেন পলাশ। ‘সুইটি ওয়েড্স এনআরআই’তে ‘জিন্দেগি বনা লুঁ’ এই গানটি গেয়েছেনও তিনি। পলাশের দিদি পলক মুচ্ছল বলিউডি সিনেমার খ্যাতনামী গায়িকা। অরিজিৎ সিংহ ও তাঁর দিদি পলকের গাওয়া ‘তু হ্যায় আশিকি’ গানটির সুরকার পলাশ।
সঙ্গীতকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার আগে অভিনয়জগতে পা রাখার চেষ্টা করেছিলেন পলাশ। তাতে অবশ্য নিরাশ হতে হয় তাঁকে। ‘খেলেঁ হাম জি জান সে’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেতা হিসাবে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন পলাশ।
২০১৯ সাল থেকে সম্পর্কে রয়েছেন স্মৃতি ও পলাশ। প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে গোড়া থেকে রাখঢাক ছিল তারকাজুটির। খুব কমই জনসমক্ষে একসঙ্গে দেখা যেত তাঁদের। একসঙ্গে তাঁদের দু’জনের ছবি প্রথম প্রকাশিত হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে। তবে দীর্ঘ দিন ধরেই পলাশ এবং স্মৃতির সম্পর্ক নিয়ে চর্চা চলছিল। দু’জনের কেউই সে কথা স্বীকার করেননি।
শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যেরাই জানতেন এই সম্পর্কের কথা। একে অপরের প্রেমে পড়লেও দু’জনেই কেরিয়ারের দিকে মনোযোগী হয়ে পড়েন। স্মৃতি ক্রিকেটে ও পলাশ বলিউডে নিজের জমি শক্ত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
এক ‘কমন ফ্রেন্ডের’ মারফত আলাপ হয়েছিল স্মৃতি ও পলাশের। সঙ্গীত ও খেলাধুলায় একে অপরের আগ্রহই তাঁদের বন্ধুত্বের কারণ। পরে সেই বন্ধুত্ব বদলে যায় প্রেমের রসায়নে। ২০২৪ সালে পলাশ তাঁদের সম্পর্কের পাঁচ বছর উদ্যাপনের মিষ্টি ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন। তার পরই তাঁদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে।
২২ মে স্মৃতি প্রথম সমাজমাধ্যমে পলাশের সঙ্গে ছবি দিয়েছিলেন। সে দিন ছিল পলাশের জন্মদিন। তার ঠিক দু’মাসের মাথায় স্মৃতির ২৯তম জন্মদিনে সমাজমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান পলাশ। তাতে স্মৃতিকে নিজের শক্তি এবং সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রথম থেকে তুমিই আমার শান্তি এবং উচ্ছ্বাস। আমার সবচেয়ে বড় ‘চিয়ারলিডার’।’’
প্রেমিকের সঙ্গে ‘জাতীয় ক্রাশ’ স্মৃতির ছবি ভাইরাল হওয়ার পর হাজার হাজার ভক্তের মন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। কারণ ক্রিকেটদুনিয়া ছাড়াও সমাজমাধ্যমে স্মৃতির লক্ষ লক্ষ অনুরাগী ছড়িয়ে রয়েছে। স্মৃতি এবং পলাশের বিয়ে খবর নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, পলাশ একান্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানে স্মৃতিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর উদ্দেশে একটি রোম্যান্টিক গানও উৎসর্গ করেছিলেন। বাগ্দান পর্বটি ঘনিষ্ঠ ও পারিবারিক বৃত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
১৯৯৫ সালের ২২ মে মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের একটি মারোয়াড়ি পরিবারে জন্ম পলাশের। মা গৃহবধূ ও বাবা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ইনদওর থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন পলাশ। ছোট থেকেই গানবাজনার পরিবেশে বড় হয়েছেন পলাশ ও তাঁর দিদি পলক। ২০১৩ সাল পর্যন্ত দু’জনে মিলে সঙ্গীতের অনুষ্ঠান করে ২৫ লক্ষ টাকার বন্দোবস্ত করেন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত ৮৮৫ জন শিশুর চিকিৎসার জন্য সেই টাকা ব্যবহার করা হয়েছে।
ক্রিকেটতারকার সঙ্গে বিয়ের খবরে সিলমোহর দেন সুরকার স্বয়ং। গত অক্টোবরে ইনদওরের প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে পলাশকে প্রশ্ন করা হয় স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে। পরিচালক পলাশ বলেন, “খুব শীঘ্রই ও ইনদওরের পুত্রবধূ হতে চলেছে। এটুকুই আমার বলার।”
ইনদওরের পুত্রবধূ হতে চললেও তারকাজুটির বিয়ের আসর বসবে মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলীতে। সেটিই কনের ইচ্ছা। কারণ ওখানেই স্মৃতির পৈতৃক বাড়ি। একটু বড় হতেই স্মৃতি চলে আসেন মাধবনগরে। এটি সাঙ্গলীর শহরতলি এলাকা। সেখানেই স্মৃতি তাঁর পড়াশোনা শেষ করেন। সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান মেনেই বিয়ে হবে পলাশ ও স্মৃতির।
পলাশ ও স্মৃতির সম্পর্ককে প্রথম থেকেই খোলাখুলি ভাবে মেনে নিয়েছিল মুচ্ছল ও মন্ধানা পরিবার। খুশি মনেই দুই পরিবারের সম্মতিতে চার হাত এক হতে চলেছে পাত্র-পাত্রীর।
স্মৃতি সম্পর্কে হবু ননদ পলক প্রকাশ্যে তাঁর বিশেষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘স্মৃতি আমাদের পরিবারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব অসাধারণ এবং আমাদের সম্পর্ক কেবল ননদ-ভাইবৌয়ের নয়, বরং ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো।’’
স্মৃতি এই মুহূর্তে ভারতের অন্যতম ধনী ক্রিকেটতারকা। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে চুক্তি থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকা পান। এ ছাড়াও টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য ম্যাচপ্রতি পান ১৫ লক্ষ টাকা। ‘ওয়ান ডে’ খেলায় ম্যাচপ্রতি ৬ লক্ষ টাকা পান। এ ছাড়াও ‘উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ’-এ তাঁর সঙ্গে বেঙ্গালুরু ৩.৪ কোটি টাকা দিয়ে চুক্তি করে।
সব মিলিয়ে স্মৃতির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৫ কোটির কাছাকাছি। অন্য দিকে মুম্বইয়ের একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ক্রিকেটতারকার হবু স্বামী পলাশের সম্পদও ৩০ থেকে ৪০ কোটির মধ্যে। মাত্র ১৮ বছরেই সবচেয়ে কমবয়সি সুরকার তথা সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন পলাশ। সম্প্রতি তিনি বলিউডের সবচেয়ে কমবয়সি সুরকার হিসাবে গোল্ডেন বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম লিখিয়েছেন।