কেরিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর মতো ওয়েব সিরিজ়। বলিপাড়ায় পা রেখেই ইমরান হাশমির মতো নায়কের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। বলিউডে কেরিয়ার গড়তে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি শ্রেয়া ধন্বন্তরিকে।
১৯৮৮ সালের ৩০ নভেম্বরে হায়দরাবাদে জন্ম শ্রেয়ার। দু’মাস বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে দুবাইয়ে চলে যান তিনি। বাবার বদলির চাকরি থাকার দরুন পশ্চিম এশিয়ার নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন শ্রেয়া।
১৭ বছর পশ্চিম এশিয়ার নানা জায়গায় থাকার কারণে স্কুলজীবনের অধিকাংশ সময় বিদেশেই কাটিয়েছেন শ্রেয়া। উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে ফিরে আসেন তিনি। তাঁর পরিবার দিল্লিতে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করে।
তেলঙ্গানার এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ‘ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস’ নিয়ে স্নাতক হন শ্রেয়া। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। চার বছর বয়স থেকে মঞ্চে নাটক করতেন তিনি। ভরতনাট্যম, কুচিপুডি এবং কত্থকের মতো শাস্ত্রীয় নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন শ্রেয়া।
কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা চলাকালীন একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন শ্রেয়া। সেই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে সর্বভারতীয় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন শ্রেয়া।
কলেজের পড়়াশোনা শেষ করার পর দিল্লির প্রতিভা অন্বেষণকারী (ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট) এক সংস্থায় চাকরি করতে শুরু করেন শ্রেয়া। তার পর বলি অভিনেত্রী ভূমি পেডনেকরের পরামর্শে মুম্বই চলে যান তিনি। সেই সময় যশরাজ ফিল্মসের ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কাস্টিং ডিরেক্টর’ ছিলেন ভূমি।
মুম্বইয়ে রোজগারের জন্য মডেলিং জগতে পা রাখেন শ্রেয়া। কিন্তু কম সময়ের মধ্যে সেই ক্ষেত্রে পরিচিতি গড়ে ফেলেন তিনি। একের পর এক সংস্থার তরফে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করার প্রস্তাব পেতে শুরু করেন শ্রেয়া।
বলিপাড়ায় গুঞ্জন শোনা যায়, মুম্বইয়ের এক জায়গায় গাড়িতে চেপে অডিশন দিতে গিয়েছিলেন শ্রেয়া। কিন্তু গাড়ির ভাড়ার জন্য এত টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল যে, টানা তিন দিন অনাহারে কাটিয়েছিলেন তিনি।
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’, ‘স্ক্যাম ১৯৯২’, ‘মুম্বই ডায়েরিজ় ২৬/১১’ এবং ‘গান্স অ্যান্ড গুলাব্স’-এর মতো একাধিক ওয়েব সিরিজ়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে শ্রেয়াকে। ২০১৯ সালে বড় পর্দায় পদার্পণ করেন তিনি।
২০১৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হোয়াই চিট ইন্ডিয়া’ নামের একটি হিন্দি ছবি। সেই ছবিতে ইমরান হাশমির সঙ্গে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শ্রেয়া। তা ছাড়া ‘চুপ: রিভেঞ্জ অফ দ্য আর্টিস্ট’, ‘লুপ লাপেতা’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
সদ্য ওটিটির পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর তৃতীয় সিজ়ন। এই সিজ়নে শ্রেয়ার সঙ্গে তাঁর সহ-অভিনেতা হরমন সিংহের সম্পর্কের রসায়ন দর্শকের মনে ধরেছে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে, হরমনের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন শ্রেয়া।
সমাজমাধ্যমের পাতায় শ্রেয়ার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে নায়িকার প্রশংসা করেছিলেন হরমন। ছবিটি পোস্ট করে শ্রেয়াকে ‘প্রিয় বান্ধবী’ বলে সম্বোধন করেছিলেন তিনি। শ্রেয়াও তাঁকে ‘আত্মজন’ বলে সম্বোধন করেন। তা নিয়েই শুরু হয় জল্পনা। পরে জানা যায়, নেহাত মজার খাতিরেই এমন মন্তব্য করেছিলেন তাঁরা। পেশাগত সম্পর্ক ছাড়া তাঁদের মধ্যে অন্য কোনও সম্পর্ক নেই।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, অন্য এক সহ-অভিনেতার সঙ্গে নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন শ্রেয়া। ‘নৌসিখিয়ে’ নামের একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য ভোপালে গিয়েছিলেন নায়িকা। সেই ছবির সহ-অভিনেতা অভিমন্যু দাসানির সঙ্গে নাকি দারুণ সখ্য তৈরি হয়েছিল শ্রেয়ার।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, ভোপালে থাকাকালীন নাকি অভিমন্যুর সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হয়ে পড়ে শ্রেয়ার। তাঁরা নাকি সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে, এই প্রসঙ্গে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি।
চলতি বছরের জুলাই মাসে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেছিলেন শ্রেয়া। হলিউড ছবি ‘সুপারম্যান’ থেকে ৩৩ সেকেন্ডের চুমুর দৃশ্য বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে তা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নায়িকা। সিবিএফসি (সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন)-কে কটাক্ষ করে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘তাঁরা চান আমরা যেন চোরাই পথে সিনেমা না দেখি। পয়সা খরচ করে প্রেক্ষাগৃহে যাই। কিন্তু আমরা নিজেদের টাকা খরচ করে কী দেখতে চাই, তা পুরোপুরি আমাদের সিদ্ধান্ত। ৩৩ সেকেন্ডের চুমুর দৃশ্য মুছে ফেলার কারণ কী?’’ সিবিএফসির এই সিদ্ধান্তকে ভর্ৎসনা করেছেন নায়িকা।
সমাজমাধ্যমে নিজের অনুগামী মহল তৈরি করে ফেলেছেন শ্রেয়া। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ১১ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।