প্রাক্-বর্ষার বৃষ্টি কৃষক ও তার বোনা ফসলের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। বিশেষ করে কৃষিনির্ভর দেশে প্রাক্-বর্ষার বৃষ্টি রোপণ করা ফসলের জন্য আশীর্বাদ বলে ধরে নেওয়া হয়। কুর্নুলের এক গ্রামের এক কৃষকের ভাগ্য মুহূর্তে বদলে দিল আকাশ থেকে নেমে আসা বারিধারা। চাষের জমিতে কাজ করতে গিয়ে এক লহমায় ভাগ্য বদলে গেল কৃষক পরিবারটির।
ভেজা মাটি সরাতেই মিলল কয়েক লক্ষের ধন। বহুমূল্য এক খণ্ড পাথর বদলে দিল কৃষকের ভাগ্য। জমিতে কোদাল চালাতেই পায়ে ঠেকেছিল শক্ত এক পাথরের টুকরো। হোঁচট খেয়ে পড়ে যান তিনি। সেই পাথরখণ্ডটি তুলে স্থানীয় এক রত্ন ব্যবসায়ীর কাছে নিয়ে গিয়ে দেখাতেই তিনিও অবাক হয়ে যান। সেই পাথরটি ছিল পৃথিবীর সেরা রত্নের অন্যতম, বেশ বড়সড় একটি হিরে।
রত্ন ব্যবসায়ীর কাছে দেড় লক্ষ টাকায় তিনি পাথরটি বিক্রি করে দেন। চাষের কাজ করতে গিয়ে মূল্যবান রত্ন পাওয়ার খবরটি আশপাশের এলাকায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি কুবেরের ধন হাতে পাওয়ার আশায় আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন জড়ো হতে থাকেন তুগ্গলি এলাকায়।
তুগ্গলি মণ্ডল এলাকার ওই অখ্যাত কৃষিজীবীর হাতে লক্ষাধিক টাকা চলে আসার পর হিরের আশায় বুক বাঁধছেন পড়শি এলাকার দিনমজুর ও কৃষকেরা। তাঁরা বিভিন্ন জমিতে খুঁজে চলেছেন মূল্যবান পাথর।
তুগ্গলি মণ্ডলের জোন্নাগিরি গ্রামটি এমন একটি অঞ্চল, যেখানে এর আগেও বর্ষার সময়ে হিরে খুঁজে পাওয়ার নজির রয়েছে। এখানকার বহু কৃষকই চাষের কাজের জন্য কোদাল চালানোর সময় মাটির নীচ থেকে হিরের সন্ধান পেয়েছেন। বর্ষা নামলেই তাই শুরু হয় হিরে খোঁজার ‘প্রতিযোগিতা’।
গ্রীষ্মের রুক্ষ জমিতে অঝোরে বৃষ্টি নামলে নরম মাটি সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে হিরে-সহ নানা দামি রত্ন। মূলত অন্ধ্রের অনন্তপুর এবং কুর্নুল জেলার মধ্যেকার এলাকায় হিরের খোঁজ মেলে। পুরস্কারও মেলে হাতেনাতে। সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে ২০২১ সালেও জোন্নাগিরি গ্রামে মোট ২ কোটি ৪ লক্ষ টাকার হিরে খুঁজে পেয়েছিলেন তিন জন।
তারও আগে ২০১৯ সালে ৬০ লক্ষ টাকার হিরে খুঁজে পান এক কৃষক। ২০২০ সালে অন্ধ্রের দুই বাসিন্দাও এই হিরে পেয়েছিলেন। হিরের আসল দাম বুঝতে না পেরে তাঁরা সেগুলিকে অনেক কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সে দু’টির দাম পাঁচ এবং ছ’লক্ষ টাকা হলেও মোটে দেড় লক্ষ এবং ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, গ্রামের অনেকেই পুরো পরিবার নিয়ে মাঠেঘাটে হিরের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাঠের মাঝেই দিনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করছেন তাঁরা। কিশোর-কিশোরীরাও তাদের পরিবারে সঙ্গে রত্নপাথরের সন্ধানে ব্যস্ত। শিশুদের সঙ্গে করে আনছেন কিছু বাবা-মাও। সঙ্গে থাকছে খাবার এবং অন্য জিনিসপত্র।
২০২২ সালে একটি হিরে খুঁজে পাওয়ার পর এক কৃষিজীবীর হাতে এসেছিল কড়কড়ে ৪০ লক্ষ টাকা। আবার ৩০ ক্যারাটের হিরে মেলায় অন্য এক কৃষক ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন।
অন্ধ্রের আর একটি অঞ্চল রায়লসীমা এলাকায় দামি রত্নের খোঁজ পাওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন অনেকে। মধ্যযুগে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রমরমার সময় হিরে-জহরতের জন্য খ্যাতি ছিল রায়লসীমা অঞ্চলের। দামি রত্নের কেনাবেচার ধরনে বদল এসেছে। তবে দশকের পর দশক ধরে কুর্নুল জেলার তুগ্গলি, জোন্নাগিরি, মদ্দিকেরা এবং অনন্তপুরের বজ্রকরুর এলাকায় বর্ষাকালে মাঠে ঘুরে ঘুরে ‘হিরের ফসল’ তোলেন বাসিন্দারা।
হিরে খোঁজার মরসুমে ফয়দা তোলেন অন্ধ্রের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। কারণ, হিরের টানে বর্ষায় এই সমস্ত অঞ্চলে ঘাঁটি গড়েন অনেকেই। স্থানীয়েরা ছাড়া পড়শি রাজ্য কর্নাটক, তেলঙ্গানা থেকেও ভিড় করেন অনেকে।
মূলত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হিরের খোঁজে ভিড় করেন হাজার হাজার স্থানীয় এবং ভিন্রাজ্যের বাসিন্দা।
বর্ষার মরসুমেই অন্ধ্রের জমিতে হিরে ‘ফলে’ কেন? তার কারণ খুঁজতে অন্ধ্রের মাটিতে সে ভাবে কোনও গবেষণা হয়নি। তবে একমাত্র বৃষ্টির মরসুমেই জমির উপরে উঠে আসে দামি পাথরগুলি। খনি বিশেষজ্ঞ এবং ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এই এলাকাগুলিতে সরকারি উদ্যোগে গবেষণা চালানো উচিত।