লালু প্রসাদ যাদবকে নিজের একটি কিডনি দান করতে চলেছেন তাঁর মেয়ে রোহিণী আচার্য। সোমবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর মেয়ের কিডনি লালুর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে।
শনিবারই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন লালু এবং রোহিণী। হাসপাতাল থেকে বাবার সঙ্গে ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁরা তৈরি।
দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু। সঙ্গে রয়েছে আরও একাধিক শারীরিক সমস্যা। তাঁকে আগেও চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি চিকিৎসকরা জানান, লালুর কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। এর পরেই নভেম্বরের শুরুতে জানা যায়, লালু-কন্যা রোহিণী নিজের একটি কিডনি দিয়ে বাবাকে সুস্থ করে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লালু এবং তাঁর স্ত্রী তথা বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবীর মেজো মেয়ে রোহিণী। তিনি সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা। ভারতীয় নাগরিক হলেও পাকাপাকি ভাবে সিঙ্গাপুরেই থাকেন রোহিণী।
২০০২ সালে রোহিণীর বিয়ে হয় সমরেশ সিংহের সঙ্গে। তিনি পেশায় এক জন সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বিয়ের আগে আমেরিকায় থাকতেন সমরেশ। পরে রোহিণীর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে থিতু হন।
সংবাদমাধ্যমে রোহিণী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী সমরেশও লালুকে কিডনি দিতে চেয়েছিলেন। শ্বশুরকে কিডনি দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
রোহিণী দাবি করেছেন, কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন তিনি এবং তাঁর স্বামী। কিন্তু দেখা যায়, সমরেশের হার্টের সমস্যা রয়েছে। কিডনি দেওয়ার ধকল তিনি নিতে পারবেন না।
রোহিণীর স্বামী সমরেশ সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি সংস্থায় ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসাবে কর্মরত। সমরেশের বাবা রণবিজয় সিংহ অবসরপ্রাপ্ত আয়কর আধিকারিক। তিনি লালু প্রসাদের কলেজের বন্ধুও বটে।
রোহিণী বরাবরই সমাজমাধ্যমে সক্রিয়। লালু-কন্যা হিসাবেই তিনি বেশি পরিচিত। নানা সময়ে নানা বিষয়ে সমাজমাধ্যমে তাঁকে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক বিষয়ে রোহিণীর মন্তব্যের কারণে অনেকে তাঁকে ‘ঠোঁটকাটা’ বলে থাকেন।
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুকে জেলে পাঠানোর পর বিচারব্যবস্থার উপর একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রোহিণী।
একের পর এক টুইট করে রোহিণী কটাক্ষে জর্জরিত করেছিলেন রাজনৈতিক নেতাদের। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার থেকে শুরু করে অমিত শাহ, এমনকি রোহিণীর আক্রমণ থেকে বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
‘ঠোঁটকাটা’ রোহিণীর রোষের মুখে পড়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতও। কোভিডের সময় যখন গঙ্গায় দেহ ভাসতে দেখা গিয়েছিল, কঙ্গনা বলেছিলেন নাইজেরিয়ার ছবি দেখিয়ে গঙ্গার বলে দাবি করা হচ্ছে। এই মন্তব্যের পর অভিনেত্রীকে সটান ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ এবং ‘অন্ধ’ বলে মন্তব্য করেন রোহিণী।
রোহিণীর বিয়ে নিয়েও কম শোরগোল হয়নি। ২০০২ সালে সমরেশের সঙ্গে তাঁর বিয়ের সময় শিরোনামে উঠেছিলেন লালু-কন্যা।
অভিযোগ ছিল, বিয়ের সময় রোহিণীর কাকা সুভাষ যাদব নাকি একটি শো-রুম থেকে ৫০টি গাড়ি জোর করে তুলে নিয়েছিলেন। বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে আসার জন্য সেই গাড়িগুলি ব্যবহৃত হয়েছিল। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গাড়ি নেওয়া হয় বলে দাবি।
পরে অবশ্য সব ক’টি গাড়িই আবার ওই শো-রুমে ফেরত দিয়ে দিয়েছিল যাদব পরিবার। কিন্তু বিতর্ক তাতে থামেনি।
সমাজমাধ্যমে পারিবারিক নানা ছবি এবং ভিডিয়োও হামেশাই পোস্ট করে থাকেন রোহিণী। বলেন, ‘‘আমার মা এবং বাবা আমার কাছে ভগবান। আমি ওঁদের জন্য যে কোনও কাজ করতে পারি।’’
বাবাকে কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রোহিণী জানান, এক খণ্ড মাংসপিণ্ড তিনি তাঁর বাবাকে দিচ্ছেন মাত্র। এটা কোনও বড় বিষয় নয়। লালুর কিডনি প্রতিস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছেন তিনিও।