প্রকৃতিতে যৌনতা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। প্রায় সব নতুন প্রজন্মই পৃথিবীর আলো দেখে যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে। মনুষ্য সমাজে মানুষ নিজের সঙ্গীর সঙ্গে মিলনের সময় বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে থাকেন। পৃথিবীতে এমন কিছু অদ্ভুত যৌনমিলনের প্রথা রয়েছে, যা জানলে আপনি অবাক হতে পারেন। প্রাণীকুলের মধ্যেও মিলনের আগে এমন সব অদ্ভুত কৌশল চোখে পড়ে যা বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটায়।
প্রাণীজগতের কিছু প্রজাতি মিলনের আগে বা পরে বা কখনও মিলনের মাঝেই নানা অদ্ভুত আচরণ করে থাকে। কেউ মিলনসঙ্গীকে প্রীত করতে প্রাণপাত করে ফেলে, কেউ আবার সঙ্গমের মাঝেই সঙ্গীকে উদরস্থ করে ফেলে। কেউ আবার সঙ্গী বেছে নেওয়ার আগে সঙ্গীর প্রস্রাবও আস্বাদন করে।
জিরাফ। তাদের সঙ্গমের ধারণাটি মনুষ্য সমাজের কাছে বেশ খাপছাড়া। তাদের নির্দিষ্ট কোনও প্রজনন ঋতু থাকে না এবং সঙ্গমের জন্য কেউ কাউকে ডাকও দেয় না। তা হলে জিরাফেরা কী ভাবে জানতে পারে প্রেমের জন্য উপযুক্ত সময় কোনটা? তারা সঙ্গমের জন্য প্রস্তুত বলে সঙ্গীকে কোনও ইঙ্গিতও দেয় না। তা হলে সঙ্গমের জন্য কী ভাবে সঙ্গী নির্বাচন করে জিরাফেরা?
পুরুষ জিরাফ স্ত্রী জিরাফের প্রস্রাব মুখে নিয়ে দেখে বুঝতে পারে যে সে ভাল সঙ্গী কি না। জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় এটিকে ‘ফ্লেহমেন সিকোয়েন্স’ বলা হয়ে থাকে। পুরুষ জিরাফটি স্ত্রী জিরাফের কাছে আসে এবং তার পর পিঠে মুখ ঘষে যত ক্ষণ না সে প্রস্রাব করে।
পুরুষটি তার সামনের পা দিয়ে স্ত্রীর পিছনের পায়ে টোকা দিয়ে অথবা তার পিঠে চিবুক রেখে সঙ্গমের জন্য ইঙ্গিত দেয়। যদি পুরুষ জিরাফটির কাছে প্রস্রাবের স্বাদ আশাব্যঞ্জক বলে মনে হয়, তবে যত ক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রী জিরাফটি এক জায়গায় স্থির হয়ে না দাঁড়ায়, তত ক্ষণ পুরুষটি স্ত্রী জিরাফকে অনুসরণ করতে থাকে। পিছু পিছু ঘুরে সঙ্গিনীকে সাধ্য-সাধনার সময়কাল কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে।
জিরাফ বহুগামী, অর্থাৎ একটি প্রভাবশালী পুরুষ জিরাফ দলের মধ্যে একাধিক স্ত্রী জিরাফের সঙ্গে সঙ্গম করে থাকে। স্ত্রী জিরাফ যৌনক্ষমতা অর্জন করে প্রায় চার-পাঁচ বছর বয়সে। একটি পুরুষ জিরাফ যৌনতায় সক্ষম হয় ছ’-সাত বছর বয়সে।
গবেষকেরা দেখেছেন যে জিরাফের ফেরোমন-শনাক্তকারী অঙ্গটি নাকের চেয়ে মুখেই শক্তিশালী সংযোগ ঘটায়। এই কারণেই পুরুষ জিরাফ প্রস্রাবের স্রোত জিভে আটকে রেখে কার সঙ্গে সঙ্গম করতে হবে তা নির্ধারণ করে। সঙ্গমে ইচ্ছুক স্ত্রী জিরাফের প্রস্রাব মুখে গেলেই পুরুষটি তার ঠোঁট কুঁচকে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়।
মুখের ছাদের দু’টি খোলা অংশে স্ত্রী জিরাফের গন্ধ টেনে নেয় পুরুষটি। মুখ থেকে গন্ধটি ভোমেরোনাসাল অঙ্গে যায়। এই অঙ্গটি ফেরোমোনকে শনাক্ত করে। ফেরোমোন হল জীবদেহ নিঃসৃত একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা মিলনকালে সম্ভাব্য সঙ্গীদের আকর্ষণ করে। ফেরোমোনগুলি বিশেষ গ্রন্থি বা টিস্যু থেকে নিঃসৃত হয়। যেমন ত্বকে, মলদ্বারের কাছে।
যখন একটি পুরুষ জিরাফ তার প্রস্রাবে সঠিক রাসায়নিক সঙ্কেত বা গন্ধ পায় না, তখন সে সেই স্ত্রী জিরাফটিকে একা রেখে অন্য কারও কাছে চলে যায়। আবার অন্য এক স্ত্রী জিরাফের কাছে গিয়ে পুরুষ জিরাফটি তার পিছনের অংশে হালকা খোঁচা বা ধাক্কা দিয়ে তাকে মূত্রত্যাগে উৎসাহিত করে। চাইলেই যে কাঙ্ক্ষিত সঙ্গিনী মেলে এমনটাও নয়।
পুরুষ জিরাফ মিলনেচ্ছুক হলেও স্ত্রী জিরাফ তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতেই পছন্দ করে। সঙ্গী বেছে নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অন্য জিরাফেরাও। তাদের হাত থেকে প্রেয়সীকে রক্ষা করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার পিছনে ছুটে যেতে হয়। স্ত্রী জিরাফও মজা দেখার জন্য দুই বা ততোধিক পুরুষ জিরাফকে লড়াইয়ের ময়দানে ঠেলে দেয়।
জিরাফেরা কোনও স্ত্রী জিরাফকে পাওয়ার জন্য যখন লড়াই করে তখন একে অপরের উপর উঠে তাদের ঘাড় চেপে ধরে। যত ক্ষণ না এক জন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়, তত ক্ষণ এই লড়াই চলে। একে অপরের দিকে মাথা এবং ঘাড় ঠেলে প্রতিদ্বন্দ্বী জিরাফকে আঘাত করার চেষ্টা করে। এই লড়াই কখনও কখনও আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে।
গবেষণা বলছে, স্ত্রী জিরাফ সাধারণত বয়স্ক পুরুষদের পছন্দ করে। সাধারণত কমপক্ষে সাত বছরের বেশি বয়সি পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হয় তারা। বিপরীত দিকে পুরুষেরাও কমবয়সি স্ত্রী জিরাফকে পছন্দ করে। উভয় লিঙ্গের জিরাফের একে অপরকে পছন্দ হলে স্ত্রী জিরাফটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
স্ত্রী জিরাফটি দাঁড়িয়ে পড়লেই পুরুষটি সহবাসে লিপ্ত হয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় জিরাফের মিলনপর্ব।
জিরাফের গোষ্ঠীতেও সমকামিতার উপস্থিতি রয়েছে। পুরুষ জিরাফেরা প্রায়শই একে অপরকে তাদের ঘাড় দিয়ে আদর করে। সেটি কখনও কখনও লড়াই হিসাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। তার পর একে অপরের সঙ্গে সঙ্গমও করে বলে জানা গিয়েছে গবেষণায়।
অনুমান করা হয় যে ৭৫ থেকে ৯৪ শতাংশ সময় একটি পুরুষ জিরাফ অন্য পুরুষ জিরাফের সঙ্গে মিলিত হয়। স্ত্রী জিরাফও মাঝেমাঝে সমলিঙ্গের প্রেমে পড়ে, প্রায় ১ শতাংশ স্ত্রী জিরাফের যৌনমিলন দুটি স্ত্রীর মধ্যে ঘটে। যদিও সেটি খুবই বিরল।