১৫ বছর আগে মুক্তি পাওয়া যে ছবি দেখে আজও চোখের কোণে জল চিকচিক করে, আজও নিজের অজান্তেই মন ভাল হয়ে যায়, সেই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে তাঁর একটি সংলাপ এমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে, ১৫ বছর পরেও তা লোকের মুখে মুখে ফেরে। ‘আরে, কহেনা কয়া চাহতে হো?’ এই সংলাপটির নেপথ্যে যে রাগী অধ্যাপক ছিলেন, ‘থ্রি ইডিয়ট্স’-এর সেই অভিনেতা অচ্যুত পোতদার না-ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন।
সোমবার ঠাণের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অচ্যুত। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। আর চার দিন পরেই ৯২ বছরে পা দিতেন তিনি। কিন্তু ৯২তম জন্মদিন পালন করা হল না তাঁর।
১৯৩৪ সালের ২২ অগস্ট জন্ম অচ্যুতের। মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে ছেলেবেলার অধিকাংশ সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। স্নাতক হওয়ার পর তিনি মধ্যপ্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন।
১৯৬১ সালে অর্থনীতিতে মেজর নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন অচ্যুত। প্রথম স্থানের অধিকারী হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদকও পেয়েছিলেন তিনি।
পড়াশোনা শেষ করার পর মধ্যপ্রদেশের রীওয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন অচ্যুত। কিন্তু শিক্ষকতার সঙ্গে বেশি দিন যোগ ছিল না তাঁর। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ভারত-চিন যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
ষাটের দশকে দুই দেশের যুদ্ধ চলাকালীন ভারতে একটি আপৎকালীন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন অচ্যুত। ১৯৬৭ সালে ক্যাপ্টেন পদে থাকার সময় সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
অবসরগ্রহণের পর ‘ইন্ডিয়ান অয়েল’ সংস্থায় উচ্চপদে চাকরি শুরু করেছিলেন অচ্যুত। টানা ২৫ বছর সেই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি বহু নাটকে অভিনয় করেছিলেন। ২৬টি নাটকের পাশাপাশি একাধিক বিজ্ঞাপনেও অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন অচ্যুত।
নাটকের মঞ্চ ছেড়ে ছোট পর্দায় মরাঠী ধারাবাহিকে অভিনয় করা শুরু করেছিলেন অচ্যুত। ৪৪ বছর বয়স থেকে পুরোদমে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। অভিনয়কে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তবে কাজের জন্য কখনও হাত পাততে রাজি ছিলেন না তিনি।
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, অচ্যুতের কাছে যে কোনও চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব এলে তিনি ফেরাতেন না। সব রকম চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি ছিলেন তিনি। বলিউডের জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা বিধু বিনোদ চোপড়ার একাধিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল অচ্যুতকে।
১৯৯২ সালে ৫৮ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন অচ্যুত । ১২৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। হিন্দি ভাষার ছবির পাশাপাশি বেশ কিছু মরাঠী ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। তালিকায় রয়েছে ‘আক্রোশ’, ‘তেজাব’, ‘পরিন্দা’, ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’, ‘দিলওয়ালে’ থেকে ‘দবং ২’, ‘লগে রহো মুন্নাভাই’, ‘পরিণীতা’-সহ একগুচ্ছ ছবি।
বড়পর্দায় বহু ছবিতে নায়িকাদের বাবার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেত অচ্যুতকে। তবে রাজকুমার হিরানির ‘থ্রি ইডিয়ট্স’ তাঁর অভিনয়জীবনে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছিল।
২০০৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে রাজকুমারের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘থ্রি ইডিয়ট্স’। আমির খান, আর মাধবন, শরমন জোশী, বোমান ইরানি, ওমি বৈদ্য, করিনা কপূর খান, মোনা সিংহের মতো তারকারা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই ছবিতে। তবে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কড়া অধ্যাপক হিসাবে দর্শকের মন জয় করে ফেলেছিলেন অচ্যুত।
দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন অচ্যুৎ। মঙ্গলবার ঠাণেতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুতে শোকাহত সমগ্র বলিপাড়া। আমির খান, জ্যাকি শ্রফ, বোমান ইরানি-সহ বলিউডের বহু তারকাই তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন।