India Pakistan War Tension

যুদ্ধের জিগির তুলে আতঙ্কে, প্রাণভয়ে চাকরি ছাড়ার হিড়িক পাক সেনায়? মুখে কুলুপ আঁটল ইসলামাবাদ

ভারতকে যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে আতঙ্কে ভুগছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের সেনাবাহিনী থেকে একের পর এক অফিসার ও জওয়ান প্রাণভয়ে ইস্তফা দিচ্ছেন দাবি করে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি চিঠি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:
০১ ১৯

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর এ হেন মুখোমুখি সংঘাতের আতঙ্ক দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তেই বিপাকে ইসলামাবাদ। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে পাক সেনাবাহিনীতে পড়ে গিয়েছে চাকরি ছা়ড়ার হিড়িক। তবে বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ।

০২ ১৯

সম্প্রতি দাবি করা হয়, পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে পাঠানো একটি চিঠি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে দু’দিনে অফিসার ও জওয়ান মিলিয়ে দেড় হাজার জন চাকরি ছেড়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাহিনীর অবস্থা বর্ণনা করেছেন পেশোয়ারের ১২ নম্বর কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওমর আহমেদ বোখারি। যদিও এর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। চিঠির বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ইসলামাবাদ।

Advertisement
০৩ ১৯

ভাইরাল হওয়া ওই চিঠির ডান দিকের উপরের অংশে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওমর আহমেদ বোখারির নাম রয়েছে। চিঠি অনুযায়ী, বালোচিস্তানের কোয়েটার ১২ নম্বর কোর থেকে ১২০ জন অফিসার এবং ৪০০ জন জওয়ান চাকরি ছেড়েছেন। মূলত পশ্চিমে আফগানিস্তান সীমান্তে মোতায়েন থাকা পাক ফৌজের পদাতিক বাহিনীর উপর প্রভাব পড়ছে।

০৪ ১৯

একই ভাবে উত্তরাঞ্চলের ফোর্স কমান্ড থেকে ৮০ জন অফিসার ও ৩০০ জন জওয়ান এবং মঙ্গলার এক নম্বর কোর থেকে ৫০ জন অফিসার ও ৫০০ জন জওয়ান চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে ভাইরাল হওয়া চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। এর প্রভাব উত্তরাঞ্চলের মাউন্টেন ব্যাটেলিয়ান, মেকানাইজ় ইনফ্যান্ট্রি এবং গোলন্দাজ বাহিনীতে পড়তে চলেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

০৫ ১৯

হঠাৎ করে সৈনিকদের এ ভাবে গণহারে ইস্তফার কারণ হিসাবে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কাকেই দায়ী করা হয়েছে ওই চিঠিতে। এ ছাড়া সেখানে পারিবারিক চাপ এবং এই ঘটনার জেরে বাহিনীর মনোবল যে তলানিতে চলে গিয়েছে, তা-ও স্পষ্ট ভাবে লেখা হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে পাক প্রশাসন।

০৬ ১৯

অন্য দিকে, ওই তারিখেই পাক সেনার জনসংযোগ শাখার (পড়ুন ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্‌স বা আইএসপিআর) ডিরেক্টর জেনারেল তথা মেজর জেনারেল ফয়সল মেহমুদ মালিকের সই করা একটি উপদেশনামা সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে বাহিনীর উঁচু থেকে নিচু সমস্ত পদমর্যাদার আধিকারিকদের মনোবল বজায় রাখতে এবং জাতির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া এই চিঠিরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।

০৭ ১৯

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ইসলামাবাদের উপর নয়াদিল্লি চাপ বাড়াতেই সমাজমাধ্যমে জেনারেল মুনিরকে নিয়ে একাধিক খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তেই পাক সেনাপ্রধান দেশ ছেড়ে চম্পট দিয়েছেন বলে জল্পনা তীব্র হয়েছে। সেই কারণেই গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না, এমন দাবিও করা হয়।

০৮ ১৯

এ ব্যাপারে স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলিও একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনগুলি অনুযায়ী, সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। আর তাই তাঁর নাম ‘মিসিং ইন অ্যাকশন’ বা এমআইএতে নাকি রেখেছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর।

০৯ ১৯

স্থানীয় সূত্রে জেনারেল মুনিরকে নিয়ে আরও একটি খবর সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেটি হল, রাওয়ালপিন্ডির একটি বাঙ্কারে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কিছু অফিসারকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জেনারেল মুনির। যদিও এই দুই জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক সেনাপ্রধান যে বহাল তবিয়তে আছেন, তা প্রমাণ করতে তাঁর ছবি প্রকাশ করেছে শাহবাজ় শরিফ সরকার।

১০ ১৯

গত ২৭ এপ্রিল জেনারেল মুনিরের একটি গ্রুপ ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সেখানে একগুচ্ছ সেনা অফিসার এবং প্রধানমন্ত্রী শরিফের সঙ্গে পাক সেনাপ্রধানকে সামনের সারিতে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল ওই ছবি অ্যাবটাবাদের সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

১১ ১৯

এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা ছবির নীচে পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর লিখেছে, ‘‘২৬ এপ্রিল অ্যাবটাবাদের কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমির (পিএমএ) ১৫১তম কোর্সের স্নাতক সেনা অফিসারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ শাহবাজ় শরিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির।’’ উল্লেখ্য, ২০১১ সালে এই অ্যাবটাবাদ এলাকাতেই কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার শীর্ষনেতা ওসামা বিন লাদেনকে ফৌজি অপারেশন চালিয়ে নিকেশ করে আমেরিকা।

১২ ১৯

ইসলামাবাদ জেনারেল মুনিরের গ্রুপ ছবি প্রকাশ করলেও তাঁকে নিয়ে বিতর্ক থামছে না। ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার আবহে তিনি পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। একই রাস্তায় বাহিনীর অন্যান্য আধিকারিকেরা হাঁটছেন বলে খবর প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও এ সব নিয়ে মুখে রা কাটছে না রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর।

১৩ ১৯

অন্য দিকে, পহেলগাঁও হামলার তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোটা অপারেশনের নেতৃত্বে পাক জঙ্গি হাশিম মুসা ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। পাক সেনাবাহিনীতে একটা সময়ে কমান্ডো হিসাবে কাজ করতেন এই হাশিম মুশা। পরে লশকর-এ-ত্যায়বা জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দেন তিনি।

১৪ ১৯

সূত্রের খবর, জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তাবাহিনী এবং কাশ্মীরি নন, এমন ব্যক্তিদের উপর হামলা চালানোর দায়িত্ব ছিল মুসার উপর। শুধু পহেলগাঁওই নয়, গত বছরে বারামুলা-সহ কাশ্মীরের দুই জায়গায় হামলার নেপথ্যেও ছিলেন মুসা। তদন্তকারীদের সন্দেহ, কী ভাবে, কোন পথে হামলা চালানো হবে, তার নীল নকশা (ব্লুপ্রিন্ট) মুসারই তৈরি করা।

১৫ ১৯

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যে জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে মুসা ছাড়াও রয়েছেন আলি ভাই ওরফে তালহা এবং স্থানীয় জঙ্গি আদিল ঠোকর। পহেলগাঁওয়ে হামলার আগে সোপোরে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়েছিলেন এই কট্টরপন্থী পাক জঙ্গি। ওই সংঘর্ষে আরও দুই জঙ্গি আরবাজ় মীর এবং জুনেইদ ভাটের মৃত্যু হয়। গোটা ঘটনার সঙ্গে পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের যোগসাজশ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।

১৬ ১৯

এই সমস্ত কারণেই পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই ভারতীয় ফৌজের প্রত্যাঘাতের ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছে ইসলামাবাদ। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ দাবি করেন, ‘‘আমরা আমাদের বাহিনীকে তৈরি রাখছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার সেই পথেই হাঁটছে।’’

১৭ ১৯

শরিফ সরকারের মন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, পরমাণু হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অস্তিত্বের উপর যদি সরাসরি হুমকি আসে, কেবল তখনই আণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।’’ পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বাহিনীর নির্দিষ্ট কিছু কোর এবং ইউনিটকে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

১৮ ১৯

অন্য দিকে, এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ভারতকে শান্ত করতে কী কী করণীয় তা নিয়ে ভাই তথা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ়কে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরই পূর্বসূরি নওয়াজ় শরিফ। তাঁর দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ় (পিএমএল-এন)-এর একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’।

১৯ ১৯

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চে পাকিস্তানের বালোচিস্তানে জ়াফর এক্সপ্রেস অপহরণ করে বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। ওই ঘটনার পর ইসলামাবাদের সেনাবাহিনীতে ইস্তফার ধুম পড়ছিল বলে খবর প্রকাশ্যে আসে। তখনও বিষয়টি এড়িয়ে যান জেনারেল মুনির-সহ রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement