২৪২ জনকে নিয়ে গুজরাতের অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই-১৭১। ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেঙে পড়ে লন্ডনগামী বিমানটি। ধাক্কা খায় বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ভবনে। এক জন ছাড়া বিমানের সকল যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত যাত্রী ৩৮ বছরের বিশ্বাস কুমার রমেশ। ২৪২ জনের মধ্যে বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। রমেশ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খুব বেশি চোট তাঁর লাগেনি। রমেশের সঙ্গে দেখা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বৃহস্পতিবারের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন রোশনি রাজেন্দ্র সোনঘারে। বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার কেবিন ক্রু ছিলেন তিনি। তবে তাঁর অন্য পরিচয়ও ছিল। ভ্রমণপ্রভাবী (ট্রাভেল ইনফ্লুয়েন্সার) হিসাবে সমাজমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে জনপ্রিয় ছিলেন রোশনি।
রোশনি-সহ বিমানটিতে থাকা ১২ জন কেবিন ক্রু সদস্যই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। রোশনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন মহারাষ্ট্রের ডোম্বিভিলির বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি রবীন্দ্র চহ্বন।
এক্স হ্যান্ডলে বিজেপি বিধায়ক লেখেন, ‘‘অহমদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় ডোম্বিভলির কন্যা রোশনি সোনঘারের মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। একজন নিবেদিতপ্রাণ বিমান ক্রু সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর অকালমৃত্যু হৃদয়বিদারক। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
২৭ বছর বয়সি রোশনি ডোম্বিভিলির বাসিন্দা ছিলেন। ডোম্বিভিলির রাজাজি পথের মাধবী বাংলো এলাকায় তাঁর বাড়ি। বাবা-মা এবং ভাইকে নিয়ে ছিল তাঁর পরিবার। রোশনিরা আগে মুম্বইয়ে থাকতেন। বছর দুয়েক আগে ডোম্বিভালিতে চলে আসেন তাঁরা।
সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ায় যোগদান করেছিলেন রোশনি। বিমানসেবিকা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রোশনির এক আত্মীয় সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বিমানসেবিকা হওয়া রোশনির ‘স্বপ্ন’ ছিল। উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর থেকেই কেবিন ক্রু হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই রোশনি মেধাবী এবং বুদ্ধিমতী ছিলেন বলে তাঁর আত্মীয়েরা জানিয়েছেন। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ আবার জানিয়েছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার পোশাক ছিল রোশনির কাছে গর্বের বিষয়।
ভ্রমণপ্রভাবী হিসাবেও নাম করেছিলেন রোশনি। জীবনযাত্রার ছবি নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতেন তিনি। তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজারেরও বেশি। স্বভাবতই রোশনির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর অনুরাগীরা।
রোশনির মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছেন তাঁর আত্মীয়-পরিজনেরা। তাঁর মা-বাবা এবং ভাই দুর্ঘটনার কথা শুনে বৃহস্পতিবারই অহমদাবাদের উদ্দেশে রওনা দেন।
রোশনি ছাড়া বিমানের বাকি কেবিন ক্রুরা ছিলেন শ্রদ্ধা ধবন, অপর্ণা মহাদিক, সইনিতা চক্রবর্তী, এনগান্থোই কংব্রাইলতপাম শর্মা, দীপক পাঠক, মৈথিলি পাতিল, ইরফান শেখ, ল্যামনুনথেম সিংসন এবং মনীষা থাপা।
বিমানটি চালনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল এবং সহকারী পাইলট ক্লাইভ কুন্দর। তাঁদের দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে।
অহমদাবাদের পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মোট ২০৪টি মৃতদেহ এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।
এআই-১৭১ অহমদাবাদ বিমানবন্দরের রানওয়ে ২৩ থেকে যাত্রা শুরু করে মেঘানী নগরের একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসের উপর ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় বেশ কয়েক জন ডাক্তারি পড়ুয়া মারা গিয়েছেন। সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।
ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে, কী ভাবে বিমানটি উড়ান শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যে দ্রুত গতিতে নীচে নেমে লোকালয়ে ভেঙে পড়ে। দেখা গিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরুর পর লোকালয়ের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। বেশ নীচ দিয়ে উড়তে দেখা গিয়েছে সেটিকে।
কিছুটা উড়ে যাওয়ার পরেই লোকালয়ের উপরে ভেঙে পড়ে বিমানটি। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, আগুনের শিখা আকাশের অনেক উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
ভয়ঙ্কর সেই ভিডিয়োই প্রকাশ্যে এসেছে। মৃত্যু হয়েছে ২৪১ জন যাত্রীর। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে থাকা এক জন মাত্র যাত্রী, বিশ্বাস কুমার রমেশ দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছেন। তিনি বিমানের ১১এ সিটে বসেছিলেন।