পরিবারের সঙ্গে রয়েছে রাজনীতির যোগ। বাবা এবং ঠাকুরদা দু’জনেই রাজনীতিবিদ। তবে পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নেন বলি তারকা। দীর্ঘকালীন প্রেমিকাকে বিয়ে করেও বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর। কারণ, তাঁদের সম্পর্কে ‘তৃতীয় ব্যক্তি’ হয়ে পড়েছিল অভিনেতার পোষ্যেরা। এখন কী করেন অরুণোদয় সিংহ?
১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্যপ্রদেশে জন্ম অরুণোদয়ের। বাবা-মা এবং দুই বোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। তাঁর ঠাকুরদা অর্জুন সিংহ ছিলেন আশির দশকের কংগ্রেসের দাপুটে নেতা। দু’বার মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
অরুণোদয়ের বাবাও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু রাজনীতির জগৎ কোনও দিনই টানেনি অরুণোদয়কে। বরং শৈশব থেকে ফিল্মিদুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ ছিল তাঁর। ১৯৫৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অন দ্য ওয়াটারফ্রন্ট’ ছবিতে হলি অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডোর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন অরুণোদয়। তাঁর অভিনয় দেখেই বলিজগতে কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১৩ বছর বয়স থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেন অরুণোদয়। স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি নাটকে অভিনয় করতেন তিনি। তামিলনাড়ুর স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় যান তিনি।
আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মেজর করেন অরুণোদয়। তার পর অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করবেন বলে নিউ ইয়র্কের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর আবার ভারতে ফিরে আসেন তিনি।
এর পর মুম্বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অডিশন দিতে শুরু করেন অরুণোদয়। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিকন্দর’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখেন তিনি। তার পর ‘আয়েশা’, ‘জিস্ম ২’, ‘ইয়ে শালি জ়িন্দেগি’, ‘ম্যায় তেরা হিরো’, ‘মহেঞ্জোদাড়ো’ নামের একাধিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অরুণোদয়কে।
অভিনয়জীবনে বিশেষ সফল না হলেও অরুণোদয়ের সঙ্গে জড়িয়েছিল একাধিক অভিনেত্রীর নাম। ‘ইয়ে শালি জিন্দেগি’ ছবিতে অরুণোদয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বলি নায়িকা অদিতি রাও হায়দরী। সেই ছবিতে অদিতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেও অভিনয় করেন অরুণোদয়। কানাঘুষো শোনা যায়, অদিতির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘ইয়ে শালি জিন্দেগি’ ছবির শুটিংয়ের দৌলতে অদিতির সঙ্গে আলাপ হয় অরুণোদয়ের। বড় পর্দায় প্রেমের অভিনয় করতে করতে বাস্তবেও প্রেমে পড়ে যান তাঁরা। তবে সেই প্রেম বেশি দিন টেকেনি।
অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, অদিতি চেয়েছিলেন অরুণোদয় যেন তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে স্থিতিশীল হন। কিন্তু সম্পর্ক নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য তেমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিতেন না অভিনেতা। তাই সেই সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যান অদিতি।
লি এলটন নামের এক তরুণীর সঙ্গেও নাম জড়িয়ে পড়ে অরুণোদয়ের। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ২০১৩ সালে গোয়ায় গিয়ে লিয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় অরুণোদয়ের। গোয়ার একটি রেস্তরাঁর মালিক ছিলেন লি। তিন বছর লিয়ের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর ২০১৬ সালে তাঁকে বিয়ে করেন অরুণোদয়।
কিন্তু বিবাহিত জীবন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি অরুণোদয়ের। তিন বছর সংসার করার পর বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন অরুণোদয় এবং লি। সমাজমাধ্যমে বিচ্ছেদের খবর ঘোষণা করে অভিনেতা লিখেছিলেন, ‘‘আমরা দু’জনেই ভালবাসতে পারি। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে আমরা একসঙ্গে চলতে পারি না। দু’জনে সব রকম চেষ্টা করেছিলাম সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার। কিন্তু তা সফল হয়নি। দু’জনের মতামত আর মেলাতে পারিনি। আমরা দু’জনেই ভাল থাকতে চাই। সুন্দর ভবিষ্যতের আশা রেখে নিজেদের পথ আলাদা করে নিচ্ছি আমরা।’’
বলিপাড়ার জনশ্রুতি, অরুণোদয়ের পশুপ্রেমের কারণেই নাকি তাঁদের ঘর ভেঙে যায়। অভিনেতার বাড়িতে পোষ্য কুকুর ছিল। সর্ব ক্ষণ পোষ্যদের নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন না লি। অন্য দিকে, অরুণোদয়ের পোষ্যপ্রীতি ছিল মারাত্মক। তাই দীর্ঘকালীন প্রেমিকাকে বিয়ের পরেও এক ছাদের তলায় থাকতে না পেরে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন অভিনেতা।
বলিউডের অধিকাংশের দাবি, ১৩ বছরের ছোট অভিনেত্রীর সঙ্গে নাকি বিবাহবিচ্ছেদের পর সম্পর্কে জড়িয়ে প়ড়েন অরুণোদয়। নায়িকার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ছবিশিকারিদের ক্যামেরায়ও ধরা পড়েন দুই তারকা।
শোনা যায়, বলি নায়িকা তারা সুতারিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে গোপনে সম্পর্কে রয়েছেন অরুণোদয়। কানাঘুষো ছড়ানোর প্রায় দেড় বছর পর তারা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, অরুণোদয় তাঁর খুব কাছের বন্ধু। তবে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে নেই।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ব্ল্যাকমেল’ নামের হিন্দি ছবিতে শেষ অভিনয় দেখা যায় অরুণোদয়ের। তার পর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে। হিন্দি ছবিতে দেখা না গেলেও ওটিটির পর্দায় কেরিয়ার শুরু করেন তিনি।
২০১৮ সালে ‘অপহরণ’ নামের ওয়েব সিরিজ়ের মাধ্যমে ওটিটির পর্দায় অভিনয় শুরু করেন অরুণোদয়। ২০২২ সালে ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ নামের ওয়েব সিরিজ়ের পর দু’বছর আর কোথাও অভিনয় করেননি তিনি। চলতি মাসে ওটিটির পর্দায় ‘কন্নেদা’ নামের একটি সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাঁকে।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগীমহল গড়ে তুলেছেন অরুণোদয়। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় অভিনেতার অনুগামীর সংখ্যা দেড় লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।