মডেলিংয়ের জগতে ছিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কিন্তু বড় পর্দায় তেমন পসার জমাতে পারেননি তরুণ। যে দেহসৌষ্ঠবের জন্য মডেল হিসাবে তিনি নজর কেড়েছিলেন, তা-ই অভিনয়ের ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়াল বাধা। চেহারা দেখে যে পরিচালকেরা ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই একে একে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎ বলিপাড়া থেকে ‘উধাও’ হয়ে কী করছেন দীপক মলহোত্র?
১৯৬৪ সালে বেঙ্গালুরুতে জন্ম দীপকের। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। ১৯৮৫ সালে স্নাতক হন তিনি। আশি থেকে নব্বইয়ের দশকে মডেলিংয়ের জগতে কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দীপক।
বেঙ্গালুরুর নামী পোশাকের সংস্থায় মডেলিং করে কেরিয়ার শুরু করেন দীপক। তার পর ছোট পর্দার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। সেখান থেকেই বড় পর্দায় অভিনয়ের ডাক পান তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, গৌতম রাজাধ্যক্ষ নামের মুম্বইয়ের এক আলোকচিত্রী ছবিনির্মাতা রাহুল রাওয়াইলের কাছে দীপকের হয়ে সুপারিশ করেন। ‘বেখুদি’ ছবির মুখ্যচরিত্রে দীপককে অভিনয়ের প্রস্তাবও দেন রাহুল। কিন্তু পরে সেই কথা ফিরিয়ে নেন বলি পরিচালক।
বড় পর্দায় কেরিয়ার গড়ার জন্য বেঙ্গালুরু ছেড়ে মুম্বই চলে যান দীপক। ১৯৯১ সালে যশ চোপড়ার ‘লমহে’ ছবিতে অনিল কপূর এবং শ্রীদেবীর সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান দীপক। কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবি বলে কথা! সেই সুযোগ কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি তিনি।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, ১৯৯২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ‘চমৎকার’ ছবিতেও অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় দীপককে। কিন্তু ‘লমহে’র কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন দীপক। পরে দীপকের ছেড়ে দেওয়া চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় শাহরুখ খানকে।
বলিউডের গুঞ্জন, অভিনেতা হিসাবে দীপককে প্রথমে মনে ধরেছিল যশের। তাই ‘ডর’ ছবিতে নায়কের চরিত্রের জন্যও মনে মনে দীপককে পছন্দ করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখার পর মত বদলে ফেলেছিলেন যশ।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ‘লমহে’ ছবি মুক্তি পাওয়ার পর সমালোচনায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দীপকের অভিনয়কে। দীপকের চালচলনের মধ্যে বিদেশি হাবভাব, কথা বলার ধরন, এমনকি সংলাপ বলার পদ্ধতিও মনে ধরেনি দর্শকের।
দীপককে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শোনার পর ‘ডর’ ছবিতে আর অভিনয়ের প্রস্তাব দেননি যশ। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সানি দেওলকে।
১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সূর্যবংশী’ ছবিতে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সলমন খানকে। বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, এই চরিত্রের জন্য দীপককে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল দীপকের।
একই বছর ১৯৯২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জুনুন’। পূজা ভট্টের বিপরীতে এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় রাহুল রায়কে। বলিপাড়ার জনশ্রুতি, এই ছবি থেকেও নাকি দীপককে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তেজস্বিনী’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় দীপককে। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কর্তব্যম’ নামের তেলুগু ভাষার ছবির হিন্দি রিমেক সেটি। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই বলিপাড়া থেকে ‘উধাও’ হয়ে যান দীপক।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, চিত্রনাট্য অনুযায়ী ‘লমহে’ ছবিতে শ্রীদেবীকে উদ্দেশ করে ‘পল্লো’ বলে বার বার ডাকতে হয়েছিল দীপককে। কিন্তু সেই সংলাপ ছিল ভাবলেশহীন। দীপকের মধ্যেও কোনও রকম অভিব্যক্তি দেখা যায়নি। এই একটি সংলাপের জন্যই নাকি দীপকের কেরিয়ার শুরু হওয়ার আগেই ডুবে গিয়েছিল।
কাজের সুযোগ না পাওয়ায় মুম্বই ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেন দীপক। সেখানে গিয়ে নিজের নামও পরিবর্তন করে ফেলেন তিনি। নিউ ইয়র্ক সিটিতে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডিজ়াইনিং নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।
নিজের নাম পরিবর্তন করে দিনো মার্টেলি রাখেন দীপক। ২০১৮ সালে বিদেশেই একটি পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি। বর্তমানে ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ২০০৩ সালে মুম্বইয়ের কোলাবায় একটি ক্যাফে খুলেছিলেন দীপক। কিন্তু কিছু দিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। অভিনয়জগৎ থেকে শতহস্ত দূরে রয়েছেন তিনি।
১১ বছর সম্পর্কে থাকার পর ১৯৯৮ সালে লুবনা অ্যাডামকে বিয়ে করেন দীপক। পেশায় মডেল এবং ফ্যাশন কোরিয়োগ্রাফার তিনি। বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই পুত্র নিয়ে নিউ ইয়র্কে থাকেন দীপক।