Titanic

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে আটকেছিল ডুবোযান, মৃত্যুমুখ থেকে সাংবাদিককে ফেরায় ‘অদৃশ্য শক্তি’

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের খাঁজে আটকে পড়ে নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গোনাও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন আমেরিকার প্রাক্তন সাংবাদিক। কী ভাবে তা সম্ভব হল?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৩
Share:
০১ ১৯

ডুবোযান টাইটানের মতোই হাল হতে বসেছিল। প্রায় ২৩ বছর আগে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের খাঁজে আটকে পড়ে নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রহর গোনাও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন আমেরিকার সাংবাদিক। কী ভাবে তা সম্ভব হল?

০২ ১৯

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে বেরিয়ে আর ফিরতে পারেননি টাইটান ডুবোযানের পাঁচ যাত্রী। অতলান্তিকের গভীরে নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর ২২ জুন টাইটনের ধ্বংসাবশেষ মিলেছিল। সেই সঙ্গে মিলেছিল কয়েকটি দেহাংশ।

Advertisement
০৩ ১৯

দেহাংশগুলি টাইটনের পাঁচ যাত্রীর কি না, তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে প্রায় একই পরিণতি হতে পারত সাংবাদিক মাইকেল গিলেনের। সম্প্রতি সে অভিজ্ঞতার কথাই শুনিয়েছেন তিনি।

০৪ ১৯

অধুনা পদার্থবিদ গিলেন এককালে আমেরিকার প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‘এবিসি’-তে বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাতেন। প্রায় ১৪ বছর ধরে সে কাজ করেছেন তিনি। টেলিভিশনেও সাংবাদিকতা করেছেন। ‘বেস্টসেলার’ বইয়ের লেখক হিসাবেও পরিচিত রয়েছে তাঁর।

০৫ ১৯

গিলেনই প্রথম সাংবাদিক যিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছ থেকে খবর করার জন্য দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে ডুবোযানে চড়ে অতলান্তিকের গভীর পাড়ি দেন। সেটি ছিল ২০০০ সাল।

০৬ ১৯

গিলেনের অভিযানের বহু বছর পর ১৮ জুন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করতে ওশানগেট সংস্থার ডুবোযান টাইটনের করে অতলান্তিকের অতলে গিয়েছিলেন পাঁচ যাত্রী।

০৭ ১৯

ওই ডুবোযানটিতে ছিলেন ওশানগেট সংস্থার মুখ্য আধিকারিক স্টকটন রাশ, ব্রিটেনের ধনকুবের হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী তথা সে দেশের অন্যতম ধনী শাহজ়াদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান এবং ফরাসি নাবিক পল-হেনরি নাজিওলে।

০৮ ১৯

তবে অভিযান শুরুর পৌনে দু’ঘণ্টার মধ্যেই টাইটনের সঙ্গে সহযোগী জাহাজ পোলার প্রিন্সের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২২ জুন কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে টাইটনের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় ১,৬০০ ফুট দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার গভীরে ছিল ডুবোযানটি।

০৯ ১৯

এই দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেছে আমেরিকা এবং কানাডার দু’টি সংস্থা। টাইটনের ধ্বংসাবশেষের কাছ থেকে উদ্ধার দেহাংশগুলিকে চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে। মনে করা হচ্ছে, সমুদ্রের জলের প্রবল চাপে টুকরো হয়ে গিয়েছে টাইটানিয়াম এবং কার্বন ফাইবারের তৈরি ডুবোযান।

১০ ১৯

গিলেন জানিয়েছেন, ২০০০ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে পৌঁছেছিল তাঁদের ডুবোযান ‘মির ১’। ১৯৮৭ সালে রাশিয়ার তৈরি ওই ডুবোযানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ব্রায়ান এবং রুশ চালক ভিক্টর।

১১ ১৯

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের খাঁজে কী ভাবে আটকে গিয়েছিলেন গিলেনরা? সে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে টুইটার হ্যান্ডলে একটি ফুটেজ় পোস্ট করেছেন গিলেন। সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিজ়িটাল মাধ্যমের সাহায্যে কিছু মুহূর্ত তৈরি করিয়েছেন তিনি।

১২ ১৯

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি সাক্ষাৎকারে গিলেন জানিয়েছেন, অতলান্তিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে এগোনোর সময় আচমকাই জলের প্রবল স্রোত তাঁদের ডুবোযানটিকে টেনে নিয়ে যায়।

১৩ ১৯

মুহূর্তের মধ্যে টাইটানিকের প্রপেলারগুলির দিকে এগোতে থাকে ডুবোযানটি। ওই প্রপেলারগুলির এক-একটির ওজন ২১ টন। টাইটানিকের পিছনের দিকে ওই প্রপেলারের নীচে একটি খাঁজে আটকে পড়ে ডুবোযানটি। নিশ্চিত মৃত্যুমুখে সে ভাবেই পেরিয়ে গিয়েছিল প্রায় আধ ঘণ্টা। খাঁজ থেকে বেরোনোর জন্য ডুবোযানটিকে বার বার আগুপিছু করার চেষ্টা শুরু করে দেন তাঁরা। তবে বৃথা চেষ্টা!

১৪ ১৯

ওই ঘটনার বহু বছর পর এর বিবরণ দিয়ে একটি বই লিখেছিলেন গিলেন। ‘বিলিভিং ইজ় সিয়িং’ নামের ওই ‘বেস্টসেলার’-এ গিলেন লিখেছেন, ‘‘মনে হচ্ছিল, আমরা অতি দ্রুত গতিতে প্রপেলারের দিকে এগোচ্ছিলাম। সে গতি ক্রমশ বাড়ছিল।’’

১৫ ১৯

হঠাৎই প্রচণ্ড আওয়াজ। ডুবোযানের ভিতর থেকেও গিলেনরা টের পেয়েছিলেন, জলের স্রোতে প্রবল শব্দে কিছু একটা ভেঙে পড়ছে। তিনি জানিয়েছেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে বিশালাকার টুকরো ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল তাঁদের ডুবোযানটির উপর।

১৬ ১৯

নিজের বইয়ে গিলেন লিখেছিলেন, ‘‘পরে জানতে পারি, দুর্ঘটনাবশত সমুদ্রের অতলে স্রোতের মধ্যে আটকে পড়েছিল ডুবোযানটি। মুহূর্তের মধ্যে টাইটানিকের প্রপেলারে গিয়ে ধাক্কা মারে ‘মির ১’। একটা গর্ত থেকে দেখতে পেলাম, সেটির উপর টাইটানিকে মরচে ধরা অংশ ভেঙে পড়ছে।’’

১৭ ১৯

‘‘আমরা কি আটকে পড়েছি?’’ ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলেন গিলেনের এক সঙ্গী। গিলেন জানিয়েছেন, মৃত্যুমুখে আটকে পড়ে অন্তিম মুহূর্তের অপেক্ষা শুরু করে দিয়েছিলেন।

১৮ ১৯

সে সময় গিলেনদের মনে হয়েছিল, ওই খাঁজ থেকে আর বেরোতে পারবেন না। গিলেনের দাবি, সে সময় আচমকাই এক ‘অদৃশ্য শক্তি’র প্রবেশ হয়েছিল ডুবোযানে। তিনি লিখেছেন, ‘‘মুহূর্তের মধ্যে সব নিস্তব্ধ। আচমকাই (ডুবোযানের) ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। মনে হল, আমরা আবার ভাসতে শুরু করেছি।’’

১৯ ১৯

অতলান্তিকের অতল থেকে ডুবোযানটি উপরে উঠে এসেছিল। কী ভাবে তা সম্ভব হয়েছিল? গিলেন জানিয়েছেন, আজ পর্যন্ত তা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি তিনি। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী গিলেন লিখেছেন, ‘‘জীবনকে বিদায় জানানোর মুহূর্তে ঈশ্বরের উপস্থিতি এবং শান্তি উপলব্ধি করেছিলাম।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement