বিজ্ঞান আশীর্বাদ না কি অভিশাপ? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)-এর যুগে সেই প্রশ্ন বার বার উঠে আসছে। এআই যে অনেক চাকরি কেড়ে নেবে, তা নিয়েও আশঙ্কা ছড়িয়েছে দিকে দিকে।
চাকরির বাজার ইতিমধ্যেই দখল করতে শুরু করেছে এআই। তীব্র হয়েছে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে বহু সংস্থাই কর্মী সঙ্কোচনের পথে হাঁটছে।
এর মধ্যেই এআই নিয়ে নতুন করে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে বিশ্বের অন্যতম তাবড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফ্ট।
কোন ধরনের কর্মক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে এআই, তা-ই উঠেছে মাইক্রোসফ্টের একটি নতুন গবেষণায়। আধুনিক কর্মক্ষেত্র কী ভাবে ‘অটোমেশন’ নির্ভর হয়ে পড়বে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে গবেষণাটি।
আমেরিকায় মাইক্রোসফ্টের কোপাইলট চ্যাটবটের সঙ্গে ২ লক্ষেরও বেশি প্রশ্নোত্তর পর্বের উপর ভিত্তি করে ওই গবেষণাটি করা হয়েছে। পরীক্ষার পর খতিয়ে দেখা হয়েছে, কোন পেশাগুলি এআই-এর ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণায় উঠে এসেছে যে, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং যোগাযোগ নির্ভর চাকরিগুলির উপর সর্বাধিক প্রভাব ফেলতে পারে কৃত্রিম মেধা।
তা হলে এআইয়ের হুমকির মুখে কোন চাকরিগুলি রয়েছে? মাইক্রোসফ্টের ওই নতুন গবেষণা অনুযায়ী, তালিকার সবচেয়ে উপরে রয়েছে দোভাষী এবং অনুবাদকের চাকরি।
তালিকায় তার পরেই রয়েছে ইতিহাস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে করা চাকরির ক্ষেত্র। এ ছাড়াও যাত্রী সহায়ক এবং সেবা বিক্রয় প্রতিনিধি (সার্ভিস সেল্স রিপ্রেজ়েনটেটিভ)-রাও তালিকায় এর পরে রয়েছেন।
মাইক্রোসফ্টের গবেষণা বলছে, লেখকদেরও চাকরি খেতে পারে এআই। গ্রাহক পরিষেবা নির্বাহী (কাস্টমার সার্ভিস এক্জ়িকিউটিভ) এবং টেলিফোন অপারেটরেরাও চাকরি হারাতে পারেন এআইয়ের রমরমায়।
গবেষণা অনুযায়ী, বাকি যে সব চাকরি এআইয়ের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছেন টিকিট এজেন্ট, রেডিয়ো হোস্ট, টেলিমার্কেটার, খবর বিশ্লেষক, রাজনৈতিক পরিসংখ্যানবিদ, জনসংযোগ আধিকারিক এবং তথ্য বিশেষজ্ঞেরাও (ডেটা সায়েন্টিস্ট)।
শিক্ষা এবং যোগাযোগ থেকে শুরু করে অর্থ, আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) ক্ষেত্র ও প্রযুক্তি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই-এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে বলেই মাইক্রোসফ্টের সেই গবেষণায় উঠে এসেছে।
কিন্তু কেন এই চাকরিগুলি ঝুঁকির মুখে রয়েছে? গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন, এই চাকরিগুলিতে এমন কাজ করতে হয়, যেমন বিষয়বস্তু খসড়া করা, প্রচুর পরিমাণে তথ্যের হিসাব রাখা বা নিয়মিত জনসংযোগ করা— যা এআই খুব সহজেই করতে পারবে।
মাইক্রোসফ্ট কোপাইলট এবং চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম মেধা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন শিল্পে এই ধরনের কাজ শুরু করছে। আর সে কারণেই চাকরিগুলি হুমকির মুখে রয়েছে বলে গবেষকেরা মনে করছেন।
তবে চাকরিগুলি সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে যাবে কি না তা নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করেনি ওই গবেষণা। পরিবর্তে এটি জোর দিয়ে জানিয়েছে যে, এআই যে ভাবে দ্রুত গুরুত্ব বাড়াচ্ছে, তাতে ওই কর্মক্ষেত্রগুলিতে কৃত্রিম মেধার উপর প্রভাব পড়তে পারে।
ওই কর্মক্ষেত্রগুলি কী ভাবে এআইয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে তার উপরও নির্ভর করবে বিষয়টি। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার মনে করছেন, এআই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং নতুন কেরিয়ারের পথ প্রশস্ত করবে।
তবে গবেষণাটি এ-ও স্পষ্ট করেছে এখনই আশঙ্কার কারণ নেই। এমনকি, দোভাষী এবং অনুবাদকের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় থাকা ব্যক্তিরাও আপাতত নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এআই কী ভাবে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা শেখার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া উচিত ওই চাকুরিজীবীদের। তাতে দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে। চাকরি হারানোর ঝুঁকি থেকেও নিস্তার মিলতে পারে।