Mistakes of Pakistan

এলোমেলো অর্থনীতি, ঋণে জর্জরিত সরকার, অতীতের কোন তিন ভুলে টলমল আজকের পাকিস্তান?

পাকিস্তানের অর্থনীতি বরাবরই বিপর্যস্ত। কখনও রাষ্ট্রপুঞ্জ, কখনও কোনও না কোনও মিত্র দেশের কাছে হাত পাততে হয় ইসলামাবাদকে। দেশটি নিজের ভুলেই আজকের মতো পরিস্থিতি ডেকে এনেছে বার বার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ ০৯:০৯
Share:
০১ ২০

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি পাকিস্তান। গত কয়েক মাস ধরে দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়েছে। গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবেছে ইসলামাবাদ। ঋণগ্রহণেও এসেছে বাধা।

০২ ২০

আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিলে দেশটির সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি এতই খারাপ হয়েছে যে, এ বছর হজের কোটা তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান।

Advertisement
০৩ ২০

অর্থনৈতিক সঙ্কটে দীর্ণ পাকিস্তানে মূল্যবৃদ্ধির মাত্রা আকাশ ছুঁয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হু হু করে বেড়েছে। আটা, ময়দা কিংবা দুধের প্যাকেটের জন্য সাধারণ মানুষ কাড়াকাড়ি করছেন, দেখা গিয়েছে সেই ছবিও।

০৪ ২০

কিন্তু পাকিস্তানের এই দীর্ণতার কারণ কী? কেন দেশ চালাতে বিদেশি ঋণের উপর ভরসা করে থাকতে হয় দেশটিকে? অর্থনৈতিক সঙ্কটের নেপথ্যে ইসলামাবাদের কোন কোন ভুল দায়ী?

০৫ ২০

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এই দৈন্যের নেপথ্যে অবদান আছে দেশের সেনাবাহিনীর। পাকিস্তানে সঙ্কট চললেও সেখানে সেনা অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের অর্থ বা সম্পদের অভাব নেই।

০৬ ২০

পাকিস্তানে সরকারের চেয়েও সেনা বেশি শক্তিশালী। সে দেশে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বেশি। সামরিক খাতে পাকিস্তান যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, তা দেশে সঙ্কট সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট।

০৭ ২০

১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন্ম হয় পাকিস্তানের। তার দু’মাসের মধ্যে কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তানের প্রথম যুদ্ধ হয়েছিল। পাক সরকার সেই থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক সামর্থ্য বৃদ্ধির দিকে বাড়তি নজর দিয়ে এসেছে।

০৮ ২০

১৯৫৪ সালে ‘ডকট্রিন অফ নেসেসিটি’-র মাধ্যমে পাকিস্তানে সেনার হাতে বিশেষ কিছু ক্ষমতা যায়। ‘ডকট্রিন অফ নেসেসিটি’ আসলে একটি রোমান আইন, যা প্রয়োগ করে বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনা সরকারকে টপকে শাসনভার গ্রহণ করে নিতে পারে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর আবার নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পাক সুপ্রিম কোর্টও সেনার এই ক্ষমতা স্বীকার করে।

০৯ ২০

এই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেই পাকিস্তানের সেনা দিনের পর দিন তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। যা গণতান্ত্রিক দেশকে ঠেলে দিয়েছে অন্ধকারে। সেনাপ্রধানেরা বার বার বিশেষ ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করিয়েছেন। পার্লামেন্ট তুলে দিয়েছেন।

১০ ২০

পাকিস্তানের সেনার এই ক্ষমতার কারণেই দেশটিকে টানা ৩২ বছর সেনা শাসনের অধীনে কাটাতে হয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে নির্বাচন হয়নি। একটা সময়ে পাকিস্তানের মানুষও রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে সেনাকেই ভরসা করতে শুরু করেন।

১১ ২০

পাকিস্তান সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে দেশটিতে দিনের পর দিন বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দেশভাগের সময় পাকিস্তান পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পঞ্জাব, সিন্ধ, উত্তর-পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার প্রদেশ এবং বালুচিস্তান। ১৯৫৫ সালে একটি বিল পাশ করে বাংলাকে বাদ দিয়ে বাকি প্রদেশগুলিকে একীভূত করা হয়। প্রদেশের বাসিন্দারা এই বিলকে ভাল চোখে দেখেননি।

১২ ২০

বিভিন্ন প্রদেশের বাসিন্দারা পাক সরকারের এই সিদ্ধান্তে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েন। তাঁরা মনে করেন, সব প্রদেশকে একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে তাঁদের স্বতন্ত্র পরিচয় অস্বীকার করা হচ্ছে। সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন বোধ গড়ে উঠেছিল বালুচিস্তান এবং সিন্ধের মতো প্রদেশে।

১৩ ২০

১৯৬০ সালে করাচি থেকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে স্থানান্তরিত করা হয়। সিন্ধ প্রদেশের মানুষ এই সিদ্ধান্তকেও ভাল চোখে দেখেননি। বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও অভিযোগ ছিল, পশ্চিম পঞ্জাবকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের যাবতীয় উন্নয়ন আবর্তিত হয়েছে।

১৪ ২০

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সঙ্কটের অন্যতম বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণ লুকিয়ে আছে বাংলাদেশ পর্বে। পাকিস্তানের রফতানি পণ্যের অর্ধেক আসত পূর্ববঙ্গ (পূর্ব পাকিস্তান) থেকেই। অন্য দিকে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমদানি হত বেশি।

১৫ ২০

বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বড়সড় ধাক্কা খায় দেশের বাণিজ্য। অনেকে বলেন, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনীতির কাঠামোই ভেঙে গিয়েছিল। আর কখনও তা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

১৬ ২০

পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য সন্ত্রাসবাদকেও দায়ী করা হয়। যার সূচনা মূলত ১৯৭৭ সালে। ওই বছর জিয়া উল হক পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের আসনে বসেন।

১৭ ২০

এই প্রেসিডেন্টের সময়কালেই আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি হয়। যাতে বলা হয়, সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ পাকিস্তানে বিদ্রোহীদের একটি গোষ্ঠী তৈরি করবে। যারা আফগানিস্তানে গিয়ে আমেরিকার পক্ষে লড়াই করবে। ফলে আমেরিকান সেনাকে আর আফগানিস্তানে যেতে হবে না।

১৮ ২০

এই গোষ্ঠী তৈরির জন্য আমেরিকা থেকে লাগাতার অস্ত্র এবং সামরিক খাতে ব্যয়ের জন্য অর্থসাহায্য আসতে থাকে পাকিস্তানে। তা-ই পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দেয় বলে মনে করেন অনেকে। এই সময়েই তালিবানের জন্ম।

১৯ ২০

নব্বইয়ের দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়লে এই গোষ্ঠীর জন্য আমেরিকার অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি ধর্মের ভিত্তিতে অন্য নিশানা স্থির করে। একের পর এক হামলা করে নিজেদের শক্তি চেনাতে শুরু করে।

২০ ২০

অতীতের এই সব টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্যেই পাকিস্তানের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে। দেশের অর্থনীতি বরাবরই অগোছালো। রাজনীতিও টালমাটাল গদি ছেড়ে স্থিতিশীল হতে পারেনি কখনও।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement