prolific polygamy Joseph Smith

কেউ বন্ধুর স্ত্রী, কেউ শিষ্যের সন্তান! কিশোরী থেকে বৃদ্ধা, ৪০ জনকে বিয়ে করেছিলেন গির্জার প্রতিষ্ঠাতা

জোসেফ স্মিথ ৪০ জন মহিলার পাণিগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে এক জনের বয়স ১৪ বছরেরও কম ছিল। তাঁর প্রথমা স্ত্রী এমা স্মিথ স্বামীর এই বহুগামিতা মেনে নিতে পারেননি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৫৭
Share:
০১ ১৪

নিজে ছিলেন গির্জার প্রতিষ্ঠাতা। নিউ ইয়র্কে মরমন গির্জা ও মরমনবাদের জন্ম হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। তিনি জোসেফ স্মিথ। মরমন ধর্ম, যা ‘চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস’ নামেও পরিচিত। জোসেফ স্মিথ এই ধর্মের মূল প্রবক্তা। স্মিথের মস্তিষ্কপ্রসূত এই স্বতন্ত্র ধর্মীয় আন্দোলন মূলধারার খ্রিস্ট ধর্মের তুলনায় ভিন্ন।

০২ ১৪

১৮৩০ সালে স্মিথ ‘বুক অফ মরমন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। একটি সোনালি ফলকে পাওয়া প্রাচীন লেখা থেকে তিনি এই বই লিখেছেন বলে দাবি করেন। জোসেফের দাবি, ১৮২৩ সালে এক জন দেবদূতের আদেশে নিকটবর্তী পাহাড়ে লুকোনো ফলকগুলির সন্ধান শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ চার বছর খোঁজাখুঁজির শেষে ১৮২৭ সালে ফলকগুলি পাওয়ার পর গ্রন্থ রচনায় হাত দেন।

Advertisement
০৩ ১৪

‘বুক অফ মরমন’কে প্রাথমিক ভাবে ইজ়রায়েলিদের ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস বলে দাবি করা হয়। বলা হয়, মরমন নাম্নী ব্যক্তি ছিলেন ধর্মপ্রচারক, যিনি প্রাচ্য ছেড়ে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। মরমনের অনুগামীদের দাবি, আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসীদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করেন তিনি। মরমন ধর্মের কথা উঠলে সবচেয়ে বিতর্কিত যে বিষয়টি উঠে আসে তা হল বহুবিবাহ।

০৪ ১৪

উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে গির্জার পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহ ব্যাপক ভাবে প্রচলিত ছিল। যদিও এই একাধিক বিবাহের ঘটনা সর্বসমক্ষে স্বীকার করার নিয়ম ছিল না মরমন মতবাদ মেনে চলা পুরুষদের। মরমন ধর্মের হোতা জোসেফ নিজেই ৪০ জন দার পরিগ্রহণ করেছিলেন বলে স্বীকার করে নেন গির্জা কর্তৃপক্ষ।

০৫ ১৪

১৮৯০ সালে গির্জা আনুষ্ঠানিক ভাবে বহুবিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে। আমেরিকার সরকারের প্রবল চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন মরমন গির্জা কর্তৃপক্ষ। আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস’ নামে পরিচিত এই গির্জা বহুবিবাহকে অস্বীকার করে। বহুবিবাহবাদীদের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনার কথা জানা যায়। এমনকি একাধিক বিয়ে যাঁরা করেছিলেন তাঁদের সম্পত্তি পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করেছিল।

০৬ ১৪

জোসেফ স্মিথ ৪০ জন মহিলার পাণিগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে এক জনের বয়স ১৪ বছরের কম ছিল। ‘চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস’ একবিংশ শতাব্দীতে এসে তা স্বীকার করে। তাঁর প্রথমা স্ত্রী এমা স্মিথ স্বামীর এই বহুগামিতা মেনে নিতে পারেননি।

০৭ ১৪

জোসেফের প্রথম চারটি বিয়ে মেনে নিলেও পরে সেই চার সতীনকে বাড়িতে স্থান দিতে চাননি এমা। স্মিথ যাঁদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তাঁদের অনেকেই অন্য পুরুষের বিবাহিতা স্ত্রী ছিলেন বলে পরবর্তী কালে প্রকাশিত হয়। ৬০ বছরের বৃদ্ধাকেও বিয়ে করেছিলেন মরমন ধর্মের প্রবক্তা স্মিথ। কেউ কেউ আবার স্মিথের বন্ধুদের স্ত্রী ছিলেন।

০৮ ১৪

পরের দিকে স্ত্রীকে না জানিয়েই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেন স্মিথ। এমা সম্ভবত তাঁর স্বামীর বহুবিবাহের সম্পূর্ণ পরিধি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলেন না। কারণ নানা অজুহাতে প্রায়ই বাড়িতে থাকতেন না স্মিথ। তাঁর অনুগামীদের নির্দেশ দেওয়া ছিল অন্য স্ত্রীদের কাছে লেখা তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিগুলি ধ্বংস করে ফেলার।

০৯ ১৪

১৮৩১ সালে স্মিথের পুরনো নিয়ম অধ্যয়নের সময় থেকে বহুবিবাহের সূত্রপাত। আব্রাহাম, ডেভিড এবং সলমন-সহ প্রধান বাইবেলের ব্যক্তিত্বদের একাধিক স্ত্রী ছিল। মরমন গির্জার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, জীবন শেষ হয়ে গেলেও বিয়ের আয়ু ফুরিয়ে যায় না। মৃত্যুর পরেও তা স্থায়ী হতে পারে।

১০ ১৪

১৮৩১ সালের মধ্যে স্মিথ তাঁর ভবিষ্যৎ স্ত্রীদের বেশির ভাগকেই বেছে নিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই কিশোরী ছিল। বিবাহের কথা বাইরে যাতে চাউর না হয়, তাই তিনি ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মেয়েদের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করতেন। ১২ বছর ধরে প্রভাব বিস্তার করে একের পর এক বিয়ে করেছিলেন তিনি।

১১ ১৪

মরমন পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ঢালাও বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে গির্জার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহকাল তো বটেই, পরকালের পুণ্যের লোভ দেখিয়ে স্মিথ বিবাহযোগ্য পাত্রীদের পরিবারকে প্রভাবিত করতেন বলে জানা গিয়েছে।

১২ ১৪

স্মিথের ২৫তম স্ত্রী হেলেন মার কিমবল দাবি করেছিলেন, স্মিথ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যদি তিনি বিয়ে করতে রাজি থাকেন, তা হলে এটি তাঁর পরিবারের সমস্ত আত্মীয়ের আত্মার চিরন্তন মুক্তির পথকে সুগম করে তুলবে। শুধু নিজের মুক্তির জন্য নয়, বরং তাঁর পুরো পরিবারের স্বর্গবাসের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হেলেন। আর তাই মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন স্মিথকে।

১৩ ১৪

মরমন গির্জা দাবি করেছিল যে, স্মিথের এই বহুবিবাহের নেপথ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা ছিল না। গির্জার প্রবন্ধ অনুসারে, স্মিথ একাধিক বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু ১৮৩৪ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্যে তিন বার এক জন দেবদূত স্মিথের কাছে আবির্ভূত হওয়ার পর তিনি নতিস্বীকার করেন। স্মিথ জানিয়েছিলেন, দেবদূতের সঙ্গে তাঁর শেষ সাক্ষাতে তিনি একটি তরবারি নিয়ে এসেছিলেন। দেবদূতের কথা না মেনে নিলে তিনি তা দিয়ে স্মিথকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

১৪ ১৪

১৮৪৪ সালের জুন মাসে, ইলিনয়ের কার্থেজ কারাগারে মরমন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ৩৮ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর স্মিথের বিধবা স্ত্রী এমা, তাঁর ছেলে তৃতীয় জোসেফ স্মিথ এবং ‘চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট অফ ল্যাটার-ডে সেন্টস’-এর বেশির ভাগ সদস্য বহুবিবাহের প্রমাণ খণ্ডন করার জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করেছিলেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement