বর্তমানে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রজগতের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের তালিকায় শীর্ষে। এমনকি, মনের মতো পারিশ্রমিক না পাওয়ায় তিনি নাকি অভিনয়ের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিচ্ছেন— সেই নায়িকাই টাকাপয়সা না থাকার কারণে রিকশায় চেপে ডেটে যেতেন। মুম্বই আসার পর মডেল-অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলি অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। কিন্তু নায়িকার সঙ্গে সম্পর্ক নাকি ভেঙে দিয়েছিলেন সেই তরুণ। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করলেন মুজ়াম্মিল ইব্রাহিম।
সম্প্রতি একটি বহুলপরিচিত পডকাস্ট শোয়ে অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় মুজ়াম্মিলকে। সেই অনুষ্ঠানে কেরিয়ার, সম্পর্ক নিয়ে নিজের জীবনের বহু অজানা কথাই আলোচনা করেছেন তিনি। দীপিকার সঙ্গে দু’বছর নাকি তিনি সম্পর্কে ছিলেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভাঙার নেপথ্যে ছিলেন মুজ়াম্মিল নিজেই। পডকাস্টে কথোপকথনের সময় এমনটাই জানান মডেল-অভিনেতা।
১৯৮৬ সালের অগস্ট মাসে জম্মু এবং কাশ্মীরের শ্রীনগরে জন্ম মুজ়াম্মিলের। শ্রীনগরে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য নয়াদিল্লি চলে যান তিনি। সেখানকার একটি কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভর্তি হন মুজ়াম্মিল। কিন্তু মাঝপথেই পড়াশোনায় ছেদ পড়ে।
শ্রীনগরে বাবা-মা, ভাই এবং দুই বোনকে নিয়ে থাকতেন মুজ়াম্মিল। ছোট থেকেই সাঁতার শিখতেন তিনি। দু’বার জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীও হয়েছেন তিনি। এক সহপাঠীকে পুকুরে ডুবে যেতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মুজ়াম্মিল। তার পর সেই বন্ধুকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। তখন মুজ়াম্মিলের বয়স মাত্র সাত বছর। সেই কারণে ১৯৯৩ সালে ‘জীবন রক্ষা পদক’ পেয়েছিলেন তিনি।
২০০৯ সালের ঘটনা। গোয়ায় ঘুরতে গিয়েছিলেন মুজ়াম্মিল। গোয়ার সমুদ্রে স্নান করার সময় ৬০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা জলে ডুবে যাচ্ছিলেন। তা দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে বৃদ্ধাকে মৃত্যুর মুখ থেকে উদ্ধার করেছিলেন মুজ়াম্মিল। এই বীরত্বের জন্য তাঁকে ‘গডফ্রে ফিলিপ্স ন্যাশনাল ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ডস’ প্রদান করা হয়।
২০০৩ সালে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন মুজ়াম্মিল। তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নপূরণের জন্য আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। তখন তাঁর মাত্র ১৮ বছর বয়স। প্রথম বর্ষ শেষ হতে না হতেই কলেজজীবনে ইতি টানেন মুজ়াম্মিল।
কম সময়ের মধ্যেই মডেলিংয়ের দুনিয়ার পরিচিতি গড়ে ফেলেন মুজ়াম্মিল। পেশাগত সূত্রেই তাঁর আলাপ হয় দীপিকার সঙ্গে। মুম্বইয়ে মডেলিং জগতের মাধ্যমেই পথ চলা শুরু হয়েছিল দীপিকার। মুজ়াম্মিলের দাবি, সেই সময় নাকি তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন দীপিকা।
পডকাস্টে মুজ়াম্মিল বলেন, ‘‘দীপিকা তখন সবেমাত্র ওর কেরিয়ার শুরু করেছে। আমি তখন ওর চেয়ে বেশি রোজগার করতাম। দীপিকা মানুষ হিসাবে খুবই ভাল এবং আত্মবিশ্বাসী। এমনও দিন গিয়েছে যখন আমাদের দু’জনের কাছেই পয়সা নেই। তবুও আমরা মুম্বইয়ের বৃষ্টিতে ভিজে, রিকশায় চেপে ডেটে গিয়েছি। এমন ভাবে প্রচুর ভাল সময় কাটিয়েছিলাম আমরা।’’
দীপিকাই নাকি মুজ়াম্মিলকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। টানা দু’বছর দীপিকার সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর নায়িকার সঙ্গে সম্পর্কে দাঁড়ি টেনেছিলেন মুজ়াম্মিল নিজেই। পডকাস্টে সে কথাই বললেন তিনি। মডেল-অভিনেতা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দীপিকার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। এমনকি, ওর বিয়ে হওয়ার আগেও আমরা মাঝেমধ্যে কথা বলতাম। এখন ও বড় তারকা হয়ে গিয়েছে। ওর সমস্ত সিনেমা দেখি আমি। দীপিকার কাজের অনুরাগী আমি।’’
দীপিকা যদিও মুজ়াম্মিলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। তবে মুজ়াম্মিলের দাবি, তিনি নাকি বাঙালি পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ের কাছে ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবির জন্য দীপিকার নাম উল্লেখ করেছিলেন। মডেল-অভিনেতা বলেন, ‘‘অয়নের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। ও বলেছিল যে, ছবিতে নয়নার চরিত্রের জন্য দীপিকাই উপযুক্ত। আমিও ওকে একই কথা বলেছিলাম।’’
মুজ়াম্মিলের দাবি, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিতে অভিনয়ের কথা ছিল তাঁর। অয়ন তাঁকে নাকি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। সেই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল আদিত্য রায় কপূরকে।
মুজ়াম্মিল বলেন, ‘‘অয়ন আমায় বলেছিল যে, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিতে আমার কথা ভেবে একটি চরিত্র নির্মাণ করেছে। আমায় চিত্রনাট্যের খসড়া পাঠাবে বলেও কথা দিয়েছিল। কিন্তু পরে কিছুই আর হল না। তা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিও চলেছিল আমাদের। পরে জানতে পেরেছিলাম, কাস্টিং এজেন্টদের কার্যকলাপের জন্যই আর আমার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব আসেনি।’’
একাধিক মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয়ের পাশাপাশি বহু নামকরা পোশাক পরিকল্পকের ফ্যাশন শোয়ে হেঁটেছেন মুজ়াম্মিল। বড় পর্দায়ও অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
২০০৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে পূজা ভট্টের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘ধোকা’ নামের একটি হিন্দি ছবি। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল মুজ়াম্মিলকে। তার পর ‘হর্ন ওকে প্লিজ়’ এবং ‘উইল ইউ ম্যারি মি?’র মতো কমেডি ঘরানার ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০১২ সালের পর আর অবশ্য বড় পর্দায় দেখা যায়নি মুজ়াম্মিলকে। ওটিটির পর্দায় কেরিয়ার গড়তে শুরু করেছেন মুজ়াম্মিল। ‘স্পেশ্যাল অপস’ নামের ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি শরীরচর্চা করতে ভালবাসেন মুজ়াম্মিল। তাইকোন্ডো, আইকিডোর মতো বহু রকমের মার্শাল আর্টসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মডেল-অভিনেতা।
সমাজমাধ্যমেও অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন মুজ়াম্মিল। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ১ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।