পেশাগত সূত্রে আলাপ। সহ-অভিনেতার সঙ্গে প্রেম। এক দিকে সম্পর্ক নিয়ে কোনও ভবিষ্যৎ দেখতে ভয় পেতেন, অন্য দিকে শুটিংয়ের পর মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন। দিনের পর দিন নায়কের এমন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন অভিনেত্রী নীতু কপূর। ফোন করে প্রেমিককে যখন বকাবকি করছেন, তখন ও পার থেকে ভেসে এসেছিল হবু শ্বশুরের কণ্ঠ। কিন্তু রাজের গলা চিনতে পারেননি নীতু। ঋষি কপূরের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজ কপূরকেই বকুনি দিয়েছিলেন নায়িকা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৭৪ সালে ‘জেহরিলা ইনসান’ ছবির সেটে প্রথম দেখা হয় ঋষি এবং নীতুর। সেই সময় নীতুর বয়স মাত্র ১৪ বছর। ঋষি তখন ‘ববি’ ছবিতে অভিনয় করে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। শুটিংয়ের সেট থেকে বন্ধুত্ব হয় দু’জনের।
সত্তরের দশকে একাধিক হিন্দি ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন ঋষি এবং নীতু। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ঋষি বলেছিলেন, ‘‘নীতুর সঙ্গে আমার এমন বন্ধুত্ব ছিল যে, আমি মদ খেয়ে এসে ওর কাছে আমার পুরনো প্রেমিকাকে নিয়ে কান্নাকাটি করতাম। ওকে বলতাম যে, ও যেন আমার পুরনো প্রেমিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। মেয়েটিকে একটি টেলিগ্রাম করতেও বলেছিলাম।’’
ঋষি জানিয়েছিলেন, একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য ইউরোপ গিয়েছিলেন তিনি। অন্য ছবির শুটিংয়ের জন্য কাশ্মীরে ছিলেন নীতু। ইউরোপে যাওয়ার পর ঋষি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তিনি নীতুকে ভালবেসে ফেলেছেন। মনের কথা জানিয়ে ইউরোপ থেকে কাশ্মীরে টেলিগ্রাম করে অভিনেতা লিখেছিলেন, ‘‘নীতু, তোমার কথা খুব মনে পড়ছে।’’
দীর্ঘ দিন সম্পর্কে ছিলেন নীতু এবং ঋষি। তবে সম্পর্কে থাকলেও বিয়ে নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি নীতুকে দিতেন না অভিনেতা। কানাঘুষো শোনা যায়, বিয়ে করলে পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা ভেবেই নাকি সংসার নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা করতে চাইতেন না ঋষি।
বলিউডের গুঞ্জন, শুটিংয়ের পর নাকি অধিকাংশ সময় মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতেন ঋষি। এই বিষয়টি একদম অপছন্দ ছিল নীতুর। অন্য দিকে সম্পর্ক নিয়েও থিতু হতে পারছিলেন না তিনি। সব মিলিয়ে ঋষির উপর রেগে গিয়েছিলেন নায়িকা।
রাজ কপূরের কন্যা ঋতু নন্দের লেখা একটি বই থেকে জানা যায় যে, ঋষির স্বভাব নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য ফোন করেছিলেন নীতু। ফোন করে রাগের চোটে বকাবকি করতে শুরু করেন নীতু।
নীতুর কথায়, ‘‘আমি তখন ঋষিকে ডেট করছিলাম। ও তখন বাড়ি ফিরছিল। অত্যধিক মদ খেয়েছিল ও। আমি খুবই রেগে গিয়েছিলাম। রেগেমেগে ওকে ফোন করি। ফোন করেই চিৎকার-চেঁচামেচি করতে শুরু করি।’’
কিন্তু ফোনের ও পার থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে এলেও প্রথমে বুঝতে পারেননি নীতু। সম্বিৎ ফিরতেই চমকে ওঠেন। এ যে তাঁর প্রেমিকের গলা নয়, কণ্ঠস্বর অন্য। তবে এত ক্ষণ কাকে রাগের মাথায় বকাবকি করলেন তিনি?
ঋষি নন, আসলে নীতু তাঁর হবু শ্বশুর রাজকে বকাবকি করে ফেলেছিলেন। ঋষিকে ফোন করলেও সেই ফোন ধরেছিলেন ঋষির বাবা। তা খেয়ালই করেননি নীতু। ফোন ধরেই কথা বলতে শুরু করেছিলেন তিনি।
নীতু বলেন, ‘‘ফোনের ও পার থেকে তখন বাবার (রাজ কপূর) গলা শুনতে পাই। বাবা একটা কথাই বলেছিলেন। রাগের সুরে তিনি আমায় বলেছিলেন, ‘বাবা আর ছেলের গলা যে আলাদা তা শুনে বুঝতে পারো না?’’’
নীতুর দাবি, রাজ এবং ঋষির কণ্ঠস্বর প্রায় একই রকম। ফোনে তাই রাজের গলা শুনে তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। নীতু ভেবেছিলেন যে, ঋষির সঙ্গেই কথা বলছেন তিনি। তাই রাগারাগি চালিয়ে যেতে থাকেন নায়িকা।
নীতুও আরও জানিয়েছিলেন যে, ঋষির মতো তাঁর বাবা রাজও নাকি সুরাপান করতেন। এক বার একটি পার্টিতে নাকি নীতুকেই স্ত্রী ভেবে ভুল করে ফেলেছিলেন রাজ।
নীতু বলেন, ‘‘আমরা সবাই জানতাম যে, স্ত্রীকে ভীষণ ভালবাসতেন বাবা। তাই আমায় যখন তাঁর স্ত্রীর নাম ধরে ডেকেছিলেন তখন আমার ভাল লেগেছিল। এটি তো আমার কাছে প্রশংসা পাওয়ার মতো।’’
১৯৮০ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন ঋষি এবং নীতু। বিয়ের কয়েক বছর পর অভিনয় থেকে বিরতি নিয়েছিলেন নীতু। যদিও আবার বড় পর্দায় ফেরেন। ২০২০ সালে ৬৭ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঋষি।