রাজধানী দিল্লিতে জলাতঙ্ক সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়ে সম্প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে মামলাটি ছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চে।
গত সোমবারের শুনানিতে দুই বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, রাজধানী দিল্লির লোকালয় থেকে পথকুকুরদের অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে। পথকুকুরদের জন্য নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করতেও বলা হয়।
শীর্ষ আদালত এ-ও জানায়, এই কাজের সঙ্গে কোনও আপস করা যাবে না। কোনও সংগঠন এই কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপেরও নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই চলছে। চলছে মামলা-মোকদ্দমাও।
কিন্তু জানা আছে কি পৃথিবীতে এমনও দেশ রয়েছে, যেখানে পথকুকুরদের বিশেষ নিরাপত্তা দেয় সে দেশের সরকার। এমনকি, সে দেশে পথকুকুরদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশবাহিনীও রয়েছে।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও দেশটির নাম নেদারল্যান্ডস। নেদারল্যান্ডস এমন একটি দেশ যেখানে পথকুকুরদের দেখভাল করা হয় খুব যত্ন সহকারে। কুকুর-হত্যা একটি গুরুতর অপরাধ বলেও বিবেচিত হয় সে দেশে।
পথকুকুরদের নিরাপত্তা দিতে নেদারল্যান্ডসে পুলিশবাহিনীতে একটি বিশেষ শাখা রয়েছে। পথকুকুরদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেয় সেই বাহিনী। তাদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে।
পথকুকুরদের দেখভালের জন্য একটি বিস্তৃত কৌশল ব্যবহার করে নেদারল্যান্ডস। তার মধ্যে রয়েছে পথকুকুরদের সুরক্ষা দেওয়া, তাদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা এবং আইনি সুরক্ষা প্রদান করার মতো বিষয়।
নেদারল্যান্ডসে পথকুকুরদের ধরে জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রেও পাঠানো হয় তাদের। সেখানে তাদের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ভালমন্দ খাওয়ানোও হয়।
মানবিক পদ্ধতিতে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও আছে নেদারল্যান্ডসে। সে দেশে এ-ও নিশ্চিত করা হয় যে, সব পথকুকুরই যেন কোনও না কোনও ঠিকানা পায়।
বিশেষ প্রজাতির বিদেশি কুকুর না কিনে মানুষ যাতে পথকুকুরদের দত্তক নেন তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয় নেদারল্যান্ডসে। মানুষকে পথকুকুর দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করার জন্য বিদেশি কুকুর কেনার উপর মোটা কর চাপিয়েছে সে দেশের সরকার। এর ফলে অনেক মানুষই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পথকুকুরদের দত্তক নেন।
পথকুকুরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ২৪ ঘণ্টা সজাগ থাকে বিশেষ পুলিশবাহিনীও। পথকুকুরদের উপর হওয়া অত্যাচারের ঘটনার তদন্ত করার পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও হয়।
বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত ওই বাহিনীর কর্মীরা পথকুকুরদের উপর হওয়া নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। শুধু কুকুর নয়, অন্য প্রাণীদের উদ্ধারেও কাজ করে ওই বাহিনী।
সমস্ত কুকুরের জন্মের সাত সপ্তাহের মধ্যে মাইক্রোচিপিং (মাইক্রোচিপিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে প্রাণীদের চামড়ার নীচে একটি ছোট ইলেকট্রনিক চিপ স্থাপন করানো হয়, যাতে তাদের একটি অনন্য শনাক্তকরণ নম্বর দেওয়া যায়) করা হয় নেদারল্যান্ডসে।
আট সপ্তাহের মধ্যে একটি জাতীয় তথ্যভান্ডারে তথ্য নথিভুক্ত করা হয়। মাইক্রোচিপিংয়ের কারণে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া কুকুরগুলিকে সহজে খুঁজে বার করে তাদের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়। এমনকি কুকুরদের ট্র্যাক করতেও ওই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নেদারল্যান্ডসে পশুচিকিৎসাকেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। জরুরি পরিষেবাও দেওয়া হয় আক্রান্ত পথকুকুরদের। কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি পথকুকুরদের যাতে পথে থাকতে না হয়, তা-ও নিশ্চিত করার চেষ্টা করে নেদারল্যান্ডস।