তিন-চার দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার ট্র্যাভেল প্ল্যান হোক অথবা জিমে গিয়ে কী ধরনের শরীরচর্চা করলে চটজলদি মেদ ঝরতে পারে তার তালিকা— চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনের উপকারিতা অস্বীকার করার নয়। কথাবার্তা চলাকালীন আবার সেই চ্যাটবক্সে ভেসে ওঠে নানা ধরনের ‘ইমোটিকন’।
অনেকে আবার সময় কাটানোর জন্য চ্যাটজিপিটির সঙ্গে খোশগল্পও জু়ড়ে ফেলেন। মনের মধ্যে জমা কৌতূহল থেকে, আবার খানিকটা মজার ছলেও চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে মেতে ওঠেন কেউ কেউ। কিন্তু মজা করতে গিয়ে অজান্তেই নিজের বিপদ ডেকে আনতে পারেন নেটব্যবহারকারীরা।
এমন কিছু প্রশ্ন রয়েছে যেগুলি চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করার অর্থই সমূহ বিপদের আশঙ্কা। সেই প্রশ্নগুলি এড়িয়ে গেলে বিপদ থেকেও দূরে থাকা যায়। চ্যাটজিপিটির অ্যালগরিদম কী অথবা তার ডেটাসেটে কী কী রয়েছে— এমন প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেবে না চ্যাটজিপিটি।
কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফির কোডিং কী ভাবে লেখা হয় বা এমন কোনও জটিল প্রযুক্তিগত বিষয়ে বিশদ জানতে গেলে চ্যাটজিপিটির থেকে উত্তর পাওয়া যায় না। সে হয়তো উল্লেখ্য বিষয়ের ধারণা দিতে পারে। কিন্তু তার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা উচিত নয়। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়াই ভরসাযোগ্য।
ক্ষতিকর চিন্তাভাবনা পোষণ করে না চ্যাটজিপিটি। তাই এই ধরনের কোনও পরামর্শ চাইলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না সে। কেউ যদি অন্যের ক্ষতি করার উপায় জানতে চান, তা হলে তাঁকে সেই উত্তর দেবে না চ্যাটজিপিটি।
ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থেকে মনগড়া কোনও প্রশ্ন করলে চ্যাটজিপিটি বেশি ক্ষণ সে বিষয় নিয়ে তর্ক চালাবে না। বরং কোনও রকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়া তথ্যনির্ভর উত্তর দেবে সে। কিন্তু ব্যবহারকারীর চিন্তাভাবনার সঙ্গে সব সময় সহমত পোষণ করার কোনও রকম বাধ্যবাধকতা নেই চ্যাটজিপিটির।
‘জীবনের প্রকৃত অর্থ কী?’— এই ধরনের জীবনদর্শন নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলে তথ্যনির্ভর এবং বাস্তবের সঙ্গে জড়িত উত্তরই দেবে চ্যাটজিপিটি।
কারও ফোন নম্বর অথবা ব্যাঙ্কের তথ্য জানতে চাইলেও চ্যাটজিপিটি তার উত্তর দেবে না। কারণ, এই প্রশ্নগুলির সঙ্গে ব্যক্তিগত অধিকারের প্রসঙ্গ জড়িত।
আবহাওয়া সংক্রান্ত খোঁজখবর নিতে চাইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর তেমন ভরসা না রাখাই শ্রেয়। এই বিষয়ে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসের উপর নজর রাখা প্রয়োজন।
২০৩০ সালে শেয়ার বাজারের ওঠাপড়া কেমন হতে পারে— এই ধরনের অনাগত ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে পাওয়া যাবে না।
অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই রোগের চিকিৎসার পরামর্শ অথবা আইনি পরামর্শ চাইতে গেলে চ্যাটজিপিটিকে এড়িয়ে চলাই ভাল। তার চেয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া অধিক প্রয়োজনীয়।
অস্ত্র বানানোর পদ্ধতি অথবা হ্যাকিংয়ের নিয়মকানুন জানতে চাইলেও চ্যাটজিপিটি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টও নিজে থেকে লগআউট হয়ে যেতে পারে।
উন্নততর যন্ত্রনির্ভর প্রযুক্তি হলেও চ্যাটজিপিটি শেষ পর্যন্ত মানববুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত। যে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গুগ্ল সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিতে হয়, সে সব প্রশ্নের উত্তর চটজলদি দিতে পারে চ্যাটজিপিটি। হাতের মুঠোয় জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর পেয়ে যাওয়ার নেশায় চ্যাটজিপিটির সঙ্গেই কথা বলতে থাকেন অনেকে।
কিন্তু সেই আবেগে ভেসে গিয়ে কখনও নিজের নাম, পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ইমেল আইডি, নিজের আর্থিক অবস্থা, পাসওয়ার্ডের মতো ব্যক্তিগত তথ্য জানানো উচিত নয় চ্যাটজিপিটিকে। যে হেতু পুরো বিষয়টিই আগে থেকে প্রোগ্রামিং করা, সে হেতু তৃতীয় পক্ষের নজরদারি বজায় থাকে সেখানে।
তা ছাড়াও ডিজিটাল দুনিয়ার আনাচকানাচে হানা দিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। চ্যাটজিপিটির আনাচকানাচেও হ্যাকারেরা ওত পেতে থাকতে পারেন। তাই এ সব প্রশ্ন এবং তথ্য ফাঁস করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাই ভাল।