বলিউডের ‘শাহেনশা’ বলে কথা! ‘বিগ বি’ অমিতাভ বচ্চন একাই ইন্ডাস্ট্রি কাঁপাতে পারেন। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারে নাকি সৌভাগ্যের ছোঁয়া দিয়েছিলেন নদিয়ার এক কন্যা। সেই বাঙালি নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে নাকি অমিতাভের লক্ষ্মীলাভ হয়েছিল। এখন অবশ্য বলিপাড়া থেকে দূরে রয়েছেন সেই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। সম্প্রতি একটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাঁকে।
হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের বহু নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন অমিতাভ। বলিপাড়া সূত্রে খবর, বর্ষীয়ান অভিনেত্রী হেমা মালিনীর সঙ্গে জুটি বেঁধে সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ। দুই তারকা একসঙ্গে ১৬টি ছবিতে অভিনয় করেছেন বলে জানা যায়। তবে সেই ছবিগুলির অধিকাংশই বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি।
বলি অভিনেত্রী পরভিন ববির সঙ্গে ১১টি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অমিতাভকে। সেই জুটি দর্শকের প্রশংসা পেলেও বক্স অফিসে সেই জুটির একাধিক ছবি উপার্জনের মুখ বিশেষ দেখেনি।
স্ত্রী জয়া বচ্চনের সঙ্গে শুধু বাস্তবেই নয়, ক্যামেরার সামনেও জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন অমিতাভ। বলিপাড়া সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত জয়ার সঙ্গে মোট ন’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন ‘শাহেনশা’। কিন্তু ধর্মপত্নীও কেরিয়ারের দিক দিয়ে অমিতাভের ‘লাকি চার্ম’ হয়ে উঠতে পারেননি।
বলিপাড়ায় বহুলচর্চিত অমিতাভ এবং রেখার প্রেম। বড় পর্দার এই তারকা জুটিকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন দর্শক। রেখার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত মোট ন’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিতাভ। কিন্তু সব ছবি বক্স অফিসে হিট হয়নি।
অনেকে মনে করেন, অমিতাভের কেরিয়ারের ‘লাকি চার্ম’ হলেন রাখি গুলজ়ার। অমিতাভের সঙ্গে মোট ১৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন রাখি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই ছবিগুলির মধ্যে মাত্র দু’টি ছবি মুক্তির পর বক্স অফিসে তেমন লাভ করতে পারেনি।
বক্স অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘কভি কভি’, ‘শক্তি’, ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’, ‘ত্রিশূল’, ‘বরসাত কি এক রাত’, ‘এক রিশতা: দ্য বন্ড অফ লভ’ নামের একাধিক ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের মন কেড়েছেন অমিতাভ এবং রাখি। এর মধ্যে একমাত্র ‘রেশমা অউর শেরা’ ব্যবসা করতে পারেনি। মুক্তির সময়ে ‘শান’ ভাল ব্যবসা না করতে পারলেও পরে তা সুপারহিট হয়।
অমিতাভের সঙ্গে অভিনীত ১৩টি ছবির মধ্যে ১২টি ছবিই হিট রাখির। তাই বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে অমিতাভের কেরিয়ারের ‘লাকি চার্ম’ বলা হয়ে থাকে। অবশ্য এই তালিকায় নাম রয়েছে এক বলি নায়কেরও।
বলিপাড়ার নায়কদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে অভিনয় করলেও বড় পর্দায় অমিতাভের সঙ্গে শশী কপূরের রসায়ন পছন্দের ছিল দর্শকের। অমিতাভ তাঁর কেরিয়ারে শশীর সঙ্গে মোট ১২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার দিনেই জন্ম হয় রাখির। তাঁর বাবা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) ব্যবসা করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার রানাঘাটে পরিবার নিয়ে চলে আসেন তিনি।
রাখির পৈতৃক পদবি মজুমদার। অবশ্য ছবিতে অভিনয় শুরুর সময়ে রাখি কোনও পদবি ব্যবহার করতেন না। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার তেমন আগ্রহ ছিল না তাঁর। শোনা যায়, পারিবারিক অর্থাভাবের কারণে অভিনয় শুরু করেন রাখি।
১৯৬৩ সালে বাঙালি পরিচালক অজয় বিশ্বাসকে বিয়ে করেন রাখি। পরিবারের পছন্দে বিয়ে হলেও সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। বিয়ের দু’বছর পর ১৯৬৫ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
বিবাহবিচ্ছেদের পর জোরকদমে অভিনয় শুরু করেন রাখি। ১৯৬৭ সালে ‘বধূবরণ’ নামের বাংলা ছবির হাত ধরে অভিনয়জগতে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। তিন বছরের মধ্যে বলিউড থেকে ডাক পান।
১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জীবন মৃত্যু’ নামের হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান রাখি। কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবিতে ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। একাধিক হিন্দি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন রাখি।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাখির কেরিয়ার নতুন মোড় নেয়। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কভি কভি’ এবং ‘তপস্যা’ নামের দু’টি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে রাখি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। একাধিক নারীকেন্দ্রিক ছবির মুখ হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি।
সত্তর থেকে আশির দশকের সর্বাধিক উপার্জনকারী বলি অভিনেত্রীর তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেন রাখি। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিয়েও সেরে ফেলেন অভিনেত্রী। কবি, গীতিকার, সাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক গুলজ়ারকে ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন রাখি। বিয়ের পর নিজের নামের পাশে বসিয়ে দেন ‘গুলজ়ার’-এর নাম।
বিয়ের পর ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রাখি। কন্যা মেঘনার নামের পাশেও ‘গুলজ়ার’-এর নাম ব্যবহার করা হয়। মেঘনার যখন মাত্র এক বছর বয়স, তখন আলাদা হয়ে যান গুলজ়ার এবং রাখি। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে, গুলজ়ারের মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি রাখি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, বিয়ের পর রাখির অভিনয় নিয়ে আপত্তি ছিল গুলজ়ারের। তা মেনে নিতে পারেননি রাখী। ১৯৭৪ সালে দু’জনের ছাদ আলাদা হলেও খাতায়কলমে বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি তাঁদের। মেঘনা যেন কখনও বাবা-মায়ের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত না হন, তা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত।
নব্বইয়ের দশক থেকে ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘আনাড়ি’, ‘খলনায়ক’, ‘বাজিগর’, ‘কর্ণ অর্জুন’, ‘বর্ডার’, ‘দিল কা রিশতা’ এবং ‘এক রিশতা: দ্য বন্ড অফ লভ’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে মায়ের ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রাখিকে। তবে ধীরে ধীরে বড় পর্দার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে তাঁর।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, নব্বইয়ের দশকে মুক্তি পাওয়া ‘প্যার তো হোনা হি থা’ এবং ‘দিল কয়া করে’ ছবিতে পোশাক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন রাখি। এমনকি, ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তাকত’ ছবিতে কিশোর কুমারের সঙ্গে একটি গান করেন তিনি।
২০০৩ সালে বাঙালি পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘শুভ মহরৎ’ নামের বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় রাখিকে। তার পর প্রায় ২২ বছরের বিরতি। দীর্ঘ বিরতির পর আবার বাংলা ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখা যাবে রাখির অভিনয়।
চলতি বছরের গরমের ছুটিতে ‘মাদার্স ডে’-র আগে মুক্তি পেতে চলেছে ‘আমার বস্’। নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘আমার বস্’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে রাখিকে। এই ছবিতে রাখির পুত্রের চরিত্রে অভিনয় করবেন শিবপ্রসাদ।
বর্তমান ইঁদুরদৌড়ের যুগে কর্পোরেট সংস্থার উচ্চপদ ধরে রাখার লড়াইয়ে অনেক সময় সন্তানদের কাছে যেন উপেক্ষিত হয়ে পড়েন তাঁদের বাবা-মায়েরা। ‘আমার বস্’ ছবিতে মা-ছেলের সম্পর্কের এই সমীকরণকে তুলে ধরবেন রাখি-শিবপ্রসাদ। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে এই ছবির বিশেষ প্রদর্শন হবে রাজ্যসভায়। ৩ মে বেলা ১১টার সময় সংসদের গ্রন্থাগার ভবনের বালযোগী প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে এই ছবি।