Pakistan-Saudi Arabia Defence Pact

ইহুদিদের ধ্বংস করতে আরবে পরমাণু বোমা রাখবে ইসলামাবাদ! পাক-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে কতটা বিপদে ভারত?

সৌদি আরবের সঙ্গে সামরিক সমঝোতা হতে না হতেই পরমাণু হাতিয়ার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজ়া আসিফ। ফলে ভারত ও ইজ়রায়েলের উপর চাপ বাড়ল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:২০
Share:
০১ ১৮

পাকিস্তান-সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা চুক্তি ঘিরে পশ্চিম এশিয়ায় শোরগোল। সংশ্লিষ্ট সমঝোতায় রিয়াধকে পরমাণু নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে ইসলামাবাদ। শুধু তা-ই নয়, অন্য আরব দেশগুলিকে তাঁদের ‘আণবিক সুরক্ষা ছাতা’র তলায় আনতেও আগ্রহী ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী। পাক সরকার ও ফৌজের এ-হেন পদক্ষেপে ভুরু কুঁচকেছে নয়াদিল্লি ও ইজ়রায়েল। অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে আগুন নিয়ে খেলার শামিল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৮

চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর উপসাগরীয় আরব দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চুক্তিতে সই করেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। এর পোশাকি নাম ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’। এর পরই ওই সমঝোতার চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতে ওঠেন কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। ইতিমধ্যেই এর বেশ কয়েকটি ‘ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। সেগুলি ভারত ও ইজ়রায়েলের রক্তচাপ যে কয়েক গুণ বাড়াবে তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি, এই চুক্তির জন্য ইসলামাবাদ বড় বিপদের মুখে পড়তে চলেছে বলেও স্পষ্ট করেছেন তাঁরা।

Advertisement
০৩ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা চুক্তিটিকে ঢাল করে ফের একবার সীমান্তপার সন্ত্রাসের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’ বা আইএসআই। সে ক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র বা গুজরাত— উত্তর পশ্চিম ভারতের একাধিক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রক্তাক্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে বাড়তে পারে মাদকের চোরাচালান। কাশ্মীরের পাশাপাশি খালিস্তান আন্দোলনের তীব্র বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ।

০৪ ১৮

এ দেশের সাবেক সেনাকর্তাদের অনুমান, এই প্রতিরক্ষা চুক্তিকে সামনে রেখে সৌদি আরবের থেকে বিপুল পরিমাণে আর্থিক সাহায্য আদায় করতে সক্ষম হবে পাকিস্তান। ফলে ইসলামাবাদের সামনে থাকছে আগামী দিনে সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করার বড় সুযোগ। অর্থের জোগান বাড়লেই যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার অত্যাধুনিক হাতিয়ার কেনার দিকে যে রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা ঝুঁকবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে এই সব অস্ত্র ব্যবহার করে ভারতের চরম ক্ষতি করতে পারবেন তাঁরা।

০৫ ১৮

উল্লেখ্য, বর্তমানে মার্কিন হাতিয়ারের অন্যতম বড় ক্রেতা হল সৌদি আরব। রিয়াধের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একাধিক লড়াকু জেট, দূরপাল্লার কামান এবং ট্যাঙ্ক। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধের সময়ে সেগুলি পাক সেনার হাতে তুলে দিতে পারে পশ্চিম এশিয়ার ওই আরব রাষ্ট্র। পাশাপাশি, ইসলামাবাদের চাপে অপরিশোধিত খনিজ তেলের সরবরাহ তারা বন্ধ করলে নয়াদিল্লির যে জ্বালানি সঙ্কট বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তা-ই নয়, পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজ়া আসিফের দাবি, প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে থাকবে রিয়াধের বাহিনী।

০৬ ১৮

চলতি আর্থিক বছরে (পড়ুন ২০২৫-’২৬) প্রতিরক্ষা খাতে ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। সামরিক খাতে খরচের নিরিখে নয়াদিল্লির ধারেকাছে নেই দেউলিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তান। উল্টে ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রাভান্ডার’ বা আইএমএফের (ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড) থেকে ঋণ দিতে বেশ কিছু কঠোর নিয়ম মানতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। ফলে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি করা রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের পক্ষে অসম্ভব। অন্য দিকে ফৌজকে শক্তিশালী করতে মোটা টাকা খরচ করে সৌদি প্রশাসন।

০৭ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, আরব দেশটির খোলাখুলি সমর্থন পেলে পাক সেনার শক্তি বৃদ্ধি হবে কয়েক গুণ। তখন জঙ্গি হামলা বা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষে জবাব দেওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ, একসঙ্গে দু’টি দেশের সঙ্গে লড়তে হবে নয়াদিল্লির বাহিনীকে, যাদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা খরচ এ দেশের প্রায় সমান। যদিও এর উল্টো যুক্তি রয়েছে। পাক-সৌদি সামরিক সমঝোতাকে ‘অস্তিত্বের সঙ্কট’ হিসাবে দেখতে পারে ইজ়রায়েল। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো খাতে বইতে পারে হাওয়া।

০৮ ১৮

১৯৯৮ সালে পরমাণু বোমার পরীক্ষা করে পাকিস্তান। এ বছরের জুনে প্রকাশ করা রিপোর্টে ইসলামাবাদের কাছে ১৭০টি আণবিক হাতিয়ার আছে বলে দাবি করেছে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সুইডিশ নজরদারি সংস্থা ‘স্টকহোলম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা সিপ্রি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা গণবিধ্বংসী ওই অস্ত্র আরবভূমিতে মোতায়েন করলে ইহুদিদের পক্ষে তা মেনে নেওয়া অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থে রিয়াধ এবং ইসলামাবাদকে যে তেল আভিভ নিশানা করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

০৯ ১৮

পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া কোনও রাষ্ট্রের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকুক, তা কখনওই চায়নি ইজ়রায়েল। বহু বার প্রকাশ্যেই ইহুদি নেতৃত্বকে এ কথা বলতে শোনা গিয়েছে। গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকে ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইসলামাবাদের আণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের পরিকল্পনা করেছিল তেল আভিভ। যদিও নানা কারণে সেই অভিযান দিনের আলো দেখেনি। সাবেক সেনাকর্তারা মনে করেন, রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা রিয়াধে গণবিধ্বংসী হাতিয়ার মোতায়েন করলে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ করবে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ।

১০ ১৮

গত কয়েক বছর ধরে পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা করছে ইরান। এ ব্যাপারে তেহরান সাফল্য পেলে ইহুদিভূমি যে অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তাই গুপ্তহত্যায় সাবেক পারস্য দেশের একের পর এক আণবিক গবেষককে সরিয়ে দেওয়ার রাস্তা নেয় মোসাদ। এ বছরের জুনে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে বিমান হামলা চালায় ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা। সেই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’। তাতেও প্রাণ হারান ইরানের একগুচ্ছ প্রতিরক্ষা গবেষক এবং শীর্ষ সেনা অফিসার।

১১ ১৮

বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, পাক পরমাণু হাতিয়ার সৌদি আরবে মোতায়েন হলে ইজ়রায়েলের দিক থেকে একই রকমের পদক্ষেপ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বেছে বেছে ইসলামাবাদ ও রিয়াধের সেনাকর্তাদের নিকেশ করতে পারে মোসাদ। প্রয়োজনে ওই দুই দেশে সামরিক অভিযান চালাতেও পিছপা হবে না তারা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, দু’টি জায়গাতেই মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে চোখে পড়ার মতো। সংঘাত পরিস্থিতিতে তাঁদের সমর্থন পুরোপুরি ভাবে পাবে পশ্চিম এশিয়ার ইহুদি রাষ্ট্র।

১২ ১৮

ইসলামীয় দেশগুলির মধ্যে একমাত্র পাকিস্তানের কাছেই রয়েছে পরমাণু বোমা। অন্য দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সন্ত্রাসবাদকে সঙ্গে নিয়ে এগোচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার আরব দুনিয়া। সেখানে ইসলামাবাদের আণবিক হাতিয়ার মোতায়েনের ফল মারাত্মক হতে পারে। বিভিন্ন হাত ঘুরে ওই গণবিধ্বংসী অস্ত্র হিজ়বুল্লা, দায়েশ বা হুথির মতো সংগঠনের হাতে গিয়ে পড়লে ফল হবে মারাত্মক। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমি দেশ।

১৩ ১৮

সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিবেশী ইয়েমেন এবং পারস্য উপসাগরের কোলের দেশ ইরানের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। পাক পরমাণু হাতিয়ার রিয়াধ হাতে পেলে আণবিক কর্মসূচিতে গতি আনতে পারে তেহরান। পাশাপাশি, তাঁদের মদতপুষ্ট প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের আরব দেশটির উপর আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে পাকিস্তান। এর ক্ষতিকর প্রভাব এসে পড়বে ইসলামাবাদের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে।

১৪ ১৮

কূটনীতিকদের কথায়, পাক-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি আগামী দিনে ইজ়রায়েল এবং ভারতকে আরও কাছাকাছি আসতে সাহায্য করবে। দু’তরফে সামরিক সমঝোতা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে নয়াদিল্লিকে। কারণ, সারা বছর আরব দেশগুলির সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজেদের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখতে হচ্ছে ইহুদিদের। এ দেশের সেই সমস্যা নেই। ফলে ইসলামাবাদ এবং রিয়াধের মতো প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়া যথেষ্ট কঠিন।

১৫ ১৮

তবে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে যৌথ উদ্যোগে অত্যাধুনিক হাতিয়ার তৈরির মতো সামরিক সমঝোতা ভারত ও ইজ়রায়েলের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইহুদিদের তৈরি বহু অস্ত্র বর্তমানে ব্যবহার করে এ দেশের বাহিনী। তার মধ্যে রয়েছে হেরপ ও হেরন ড্রোন, টাভোর অ্যাসল্ট রাইফেল, বারাক-৮ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং রেডার। আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন এ দেশের সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ।

১৬ ১৮

সৌদি আরবের সঙ্গে হওয়া চুক্তির পর গণমাধ্যমে এই নিয়ে মুখ খোলেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজ়া আসিফ। ‘জিয়ো নিউজ়’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঙ্কটের সময়ে ইসলামাবাদের পরমাণু অস্ত্রের সহায়তাও রিয়াধ পাবে কি না, এই প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। জবাবে আসিফ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই। আমাদের কাছে যা আছে, আমাদের যতটা ক্ষমতা, এই চুক্তির অধীনে সবটাই ব্যবহার করা যাবে।’’

১৭ ১৮

এর পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রের ব্যাপারে ইসলামাবাদ খুবই দায়িত্বশীল বলে উল্লেখ করেছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যদিও সংবাদসংস্থা ‘রয়টার্স’কে সম্পূর্ণ অন্য কথা বলেছেন তিনি। সেখান তাঁর বক্তব্য ছিল, পরমাণু অস্ত্রের বিষয়টি পাক-সৌদি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। ‘রয়টার্স’কে আসিফ বলেছেন, ‘‘আগ্রাসনের জন্য এই চুক্তিকে ব্যবহারের ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে যদি কোনও পক্ষকে হুমকি দেওয়া হয়, তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

১৮ ১৮

পশ্চিম এশিয়ার একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ হল ইজ়রায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের আশীর্বাদ সবসময়ে পেয়ে এসেছে তারা। ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্মের সময় থেকেই তাদের আগলে রেখেছে ওয়াশিংটন। ফলে রিয়াধ-ইসলামাবাদের চুক্তি নিয়ে তেল আভিভের আতঙ্ক কাটাতে দু’টি দেশের উপরেই নানা রকমের পদক্ষেপ করতে পারে মার্কিন প্রশাসন। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement