India vs Pakistan Navy

আরব সাগরে যুদ্ধের দামামা, রুদ্রমূর্তিতে ভারতীয় রণতরী, প্রস্তুতি ঝালিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ পাক নৌসেনার

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আবহে করাচি নৌঘাঁটি সংলগ্ন আরব সাগরে যুদ্ধপোত মোতায়েন করল পাকিস্তান। শুধু তা-ই নয়, গুলি ছুড়ে মহড়ার মাধ্যমে নয়াদিল্লির ‘সমুদ্ররক্ষক’দের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তারা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:
০১ ২০

আরব সাগরে যুদ্ধের দামামা! রুদ্রমূর্তিতে ভারতীয় রণতরীগুলি করাচি নৌঘাঁটির মুখোমুখি হতেই পাল্টা চাপ বাড়ানোর কৌশল নিল পাকিস্তান। তড়িঘড়ি যাবতীয় যুদ্ধপোতকে ওই এলাকায় মোতায়েন করেছে ইসলামাবাদ। শুধু তা-ই নয়, গুলি ছুড়ে মহড়ার নামে নয়াদিল্লির ‘সমুদ্ররক্ষক’দের পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে তারা। ফলে পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলার সূত্রপাত আরব সাগরে হওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

০২ ২০

পাক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র হতেই করাচি নৌঘাঁটি এলাকায় যাবতীয় যুদ্ধপোত মোতায়েন করে ইসলামাবাদ। গত ২৬ এবং ২৭ এপ্রিল সেখানকার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জ়োনে গুলি ছুড়ে যুদ্ধাভ্যাস চালায় ওই সমস্ত রণতরী। মহড়ার সময় পাক নৌবাহিনীর একাধিক পদস্থ আধিকারিক সেখানে হাজির ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ২০

দক্ষিণ-পশ্চিম করাচির আরব সাগরে পাক নৌসেনার ওই মহড়াকে ‘শক্তি প্রদর্শন’ হিসাবেই দেখছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। এতে কোনও ডুবোজাহাজ অংশ নিয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। তবে সূত্রের খবর, যুদ্ধাভ্যাসের সময় বেশ কয়েকটি লড়াকু কপ্টারকে নামিয়েছিল ইসলামাবাদ। রণতরীগুলিকে হাই অ্যালার্টে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের নৌকমান্ডারেরা।

০৪ ২০

এই আবহে আবার ভারতীয় বিমানবাহী যুদ্ধপোত আইএনএস বিক্রান্তকে নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে করাচি-ভিত্তিক পাক সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। তাদের দাবি, পাকিস্তানের জলসীমার কাছাকাছি আসতেই বিক্রান্তকে তাড়া করে ইসলামাবাদের নৌবাহিনী। ফলে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হয় ভারতের বিমানবাহী রণতরী। কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে এর প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি ট্রিবিউনের।

০৫ ২০

কিন্তু, খবর প্রকাশের কিছু ক্ষণের মধ্যে সামনে চলে আসে আসল সত্যি। জানা যায়, যে কৃত্রিম উপগ্রহের ছবির কথা বলা হচ্ছে সেটি বেশ পুরনো। শুধু তা-ই নয়, ছবিটিতে পাক রণতরীর কোনও অস্তিত্ব নেই। বিক্রান্তের সঙ্গে থাকা ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির একটি ভারতীয় যুদ্ধজাহাজকে পাকিস্তানের বলে চালানোর চেষ্টা করেছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। বিমানবাহী রণতরী যে আপাতত করাচি নৌঘাঁটির নাকের ডগায় মোতায়েন থাকবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

০৬ ২০

গত ২৩ এপ্রিল আইএনএস বিক্রান্তকে আরব সাগরে রওনা করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। করাচি বন্দরের কাছে পৌঁছে বিমানবাহী রণতরীটির সঙ্গে থাকা আইএনএস সুরাট যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসকারী একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়। এ ছাড়া কলকাতা ও নীলগিরি শ্রেণির ডেস্ট্রয়ার এবং ফ্রিগেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজকেও আরব সাগরে মোতায়েন করেছে নয়াদিল্লি।

০৭ ২০

যুদ্ধজাহাজ ধ্বংসকারী হাতিয়ারের পাশাপাশি করাচি বন্দরের একেবারে সামনে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনীর এই সমস্ত যুদ্ধপোত। এতে পাক ‘সমুদ্রযোদ্ধা’দের রক্তচাপ যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। কারণে, ধারে ও ভারে এগিয়ে থাকায় ভারতীয় নৌসেনার সঙ্গে এঁটে ওঠা যে দুঃসাধ্য, তা হাড়ে হাড়ে জানে ইসলামাবাদ।

০৮ ২০

সূত্রের খবর, বিমানবাহী রণতরী, ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেটের পাশাপাশি আরব সাগরে পরমাণু শক্তিচালিত এবং আণবিক অস্ত্রে সজ্জিত আইএনএস অরিহান্ত এবং আইএনএস আরিঘাটকে মোতায়েন করেছে ভারতীয় নৌসেনা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নৌবাহিনীর এক অফিসার বলেন, ‘‘যে কোনও পরিস্থিতির জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত, তা প্রদর্শনের জন্য আমাদের রণতরীগুলি মহড়ায় যোগ দিয়েছিল। মহড়া সফল হয়েছে। যে কোনও অপারেশনের জন্য আমরা প্রস্তুত।’’

০৯ ২০

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সৈন্যশক্তির দিক থেকে কোন দেশ কতটা শক্তিশালী, সেই সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’। মোট ১৪৫টি দেশের মধ্যে সেখানে ভারতকে চতুর্থ স্থানে রেখেছে এই সমীক্ষক সংস্থা। গত বছরের নিরিখে নয়াদিল্লি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও অবনমন হয়েছে পাকিস্তানের। তালিকায় ১২ নম্বর স্থানে জায়গা পেয়েছে ইসলামাবাদ।

১০ ২০

‘গ্লোবার ফায়ারপাওয়ার’ জানিয়েছে, ভারতীয় নৌসেনার রয়েছে মোট ২৯৩টি রণতরী। এর মধ্যে বিমানবাহী যুদ্ধপোতের সংখ্যা দুই। এই ধরনের আরও একটি রণতরী তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট এবং ১৮টি করভেট ব্যবহার করেন এ দেশের জলযোদ্ধারা।

১১ ২০

ভারতীয় নৌসেনায় মোট ডুবোজাহাজের সংখ্যা ১৮। এর মধ্যে তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত এবং পরমাণু হাতিয়ারে সজ্জিত ডুবোজাহাজ। পাক নৌবাহিনীর হাতে থাকা মোট রণতরীর সংখ্যা ১২১। ইসলামাবাদের কোনও বিমানবাহী রণতরী ও ডেস্ট্রয়ার নেই। মাত্র ৮টি ডুবোজাহাজ এবং ৯টি করে ফ্রিগেট ও করভেট ব্যবহার করে তারা। এর মধ্যে একটি ডুবোজাহাজও পরমাণু অস্ত্রে সজ্জিত নয়।

১২ ২০

বর্তমানে ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়েড’ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে ভারত। অর্থাৎ, জল, স্থল এবং আকাশ— তিন জায়গা থেকে পরমাণু হামলার ক্ষমতা রয়েছে নয়াদিল্লির। এমনকি সমুদ্রের গভীরে থেকেও আইএনএস অরিহান্ত এবং আইএনএস অরিঘাটের মতো ডুবোজাহাজ থেকে আণবিক আক্রমণ চালাতে পারে ভারতের নৌসেনা। এই ক্ষমতা পাকিস্তানের নেই।

১৩ ২০

১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় এ দেশের নৌসেনা। ওই সময় করাচি বন্দরে হামলা চালিয়ে ইসলামাবাদের একাধিক যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়েছিল ভারতের ‘সমুদ্ররক্ষক’রা। এতে পাক নৌসেনা একরকম ধ্বংসই হয়ে গিয়েছিল।

১৪ ২০

করাচি বন্দর আক্রমণ করতে ’৭১ সালের ডিসেম্বরে ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ এবং ‘অপারেশন পাইথন’ নামের পরপর দু’টি অভিযান চালায় ভারতীয় নৌসেনা। ওই সময় প্রতি-আক্রমণ চালাতে আমেরিকার থেকে পাওয়া পিএনএস গাজি নামের একটি ডুবোজাহাজ পাঠিয়েছিল পাকিস্তান। বিশাখাপত্তনমের কাছে আইএনএস রাজপুত নামের একটি যুদ্ধজাহাজ সেটিকেও ডুবিয়ে দেয়।

১৫ ২০

এ ছাড়া সেই সময়কার বিমানবাহী রণতরীগুলি থেকে একাধিক আক্রমণ পরিচালনা করেন ভারতীয় নৌসেনা। সেগুলি ঠেকানো ইসলামাবাদে পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফলে যুদ্ধে ৯৩ হাজারের বেশি পাক সৈনিক আত্মসমর্পণ করে। দেশ ভেঙে জন্ম হয় নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের, নাম বাংলাদেশ।

১৬ ২০

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালায় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। তাতে প্রাণ হারান এক বিদেশি-সহ ২৬ জন। ওই ঘটনার পর থেকেই বদলার আগুনে ফুঁসছে গোটা দেশ। এ ব্যাপারে প্রত্যাঘাত শানাতে ফৌজের তিন শাখাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাহিনী সবুজ সঙ্কেত পেতেই যুদ্ধের আতঙ্কে কাঁপছে পাকিস্তান।

১৭ ২০

অন্য দিকে চুপ করে বসে নেই ইসলামাবাদও। গত ২৯ এপ্রিল গভীর রাতে (স্থানীয় সময় অনুসারে রাত ২টো) আপৎকালীন সাংবাদিক বৈঠক করেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা-তথ্য পেয়েছি যে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করছে।” ইতিমধ্যেই পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির একাধিক নেতা-মন্ত্রী নয়াদিল্লিকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছেন।

১৮ ২০

ইসলামাবাদের ওই হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিতে নারাজ নয়াদিল্লি। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলাকে অবশ্য গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। এ ব্যাপারে যাবতীয় ফাঁকফোকর ঢেকে ফেলতে সাত বছর পরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ পুনর্গঠন করল মোদী সরকার। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং বা ‘র’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর অলোক জোশী উপদেষ্টা পর্ষদের প্রধান করা হচ্ছে।

১৯ ২০

প্রধানমন্ত্রী মোদীর জমানায় সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে এত দিন পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালই কার্যত একচ্ছত্র দায়িত্ব পালন করেছেন। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের জেরে তাঁর ভূমিকা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের তরফে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

২০ ২০

এ হেন সংঘাতের আবহে যুদ্ধের উস্কানি কিন্তু সমানে দিয়ে চলেছে ইসলামাবাদ। জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে পাক সেনা। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর টানা ছ’দিন সেখানে গুলিবর্ষণ করেছে তাঁরা। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় ফৌজ। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে লড়াইকে উপত্যকা থেকে আরব সাগরে টেনে নামাতে পারে ভারতীয় নৌসেনা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement