বৃহস্পতিবার রাত থেকে জম্মু এবং পঞ্জাবে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু সেই সব ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে ভারত। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, জম্মু এবং পঞ্জাবের একাধিক জায়গা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় পাকিস্তান।
কিন্তু সেই হামলা ভেস্তে দিয়েছে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস ৪০০ ট্রায়াম্ফ। খবর, পাল্টা আঘাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান। পাকিস্তানের দু’টি জেএফ ১৭ যুদ্ধবিমানও ধ্বংস করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ড্রোনের মাধ্যমেও হামলা চালানো হয়েছিল পাকিস্তানের তরফে। তা-ও প্রতিহত করা হয়েছে। আখনুরে একটি ড্রোনকে গুলি করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এক দিকে যেমন সামরিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়াচ্ছে পাকিস্তান, তেমনই আবার অনলাইনেও ভারতের বিরুদ্ধে অন্য এক অস্ত্রে শান দিচ্ছে তারা।
আর সেই অস্ত্র হল ভুয়ো খবর। সংঘাতের আবহে ভারতীয়দের বিভ্রান্ত করতে একাধিক ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
ভারত-পাক সংঘাতের আবহে ‘প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো’ (পিআইবি)-এর ‘ফ্যাক্ট চেক’ শাখা সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক বিভ্রান্তিকর এবং ভুয়ো খবর শনাক্ত করে তা খণ্ডন করেছে। ওই সব খবরের অনেকগুলিই বিভিন্ন পাকিস্তানি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
৮ মে রাত ১০টা থেকে ৯ মে সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পিআইবি একাধিক ভাইরাল ভিডিয়ো এবং পোস্টের সত্যতা যাচাই করেছে। তারা নিশ্চিত করেছে যে ভিডিয়ো এবং পোস্টগুলি হয় বিকৃত, নয় ভুয়ো। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মিথ্যা খবরের সেই ঝুলি।
বৃহস্পতিবার রাতে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে পঞ্জাবের জলন্ধরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। কিন্তু পরে দেখা যায় সেই খবর এবং ভিডিয়ো ভুয়ো। জলন্ধরের ডেপুটি কমিশনারও খবরটি ভুয়ো বলে নিশ্চিত করেন।
সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে আবার দাবি করা হয় যে, পাক হামলায় ‘২০ রাজ ব্যাটালিয়ন’ পরিচালিত একটি ভারতীয় সেনাছাউনি ধ্বংস করা হয়েছে। সেই দাবি এবং দাবির সপক্ষে পোস্ট করা ভিডিয়ো মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। ‘২০ রাজ ব্যাটালিয়ন’ নামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনও ইউনিট নেই বলেও প্রকাশ্যে এসেছে।
২০২০ সালের লেবাননের রাজধানী বেইরুটের একটি বিস্ফোরণের ভিডিয়ো বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে দাবি করা হয় যে সেটি ভারতের উপর পাক হামলার ভিডিয়ো। পোস্টে দাবি করা হয়, ভিডিয়োটি ভারতের উপর পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার ভিডিয়ো। সমাজমাধ্যমে ব্যাপক শেয়ার হয় সেই ভিডিয়ো। পরে দেখা যায় সেই ভিডিয়ো ভুয়ো।
রাজৌরিতে আত্মঘাতী হামলা নিয়েও গুজব ছড়ায় সমাজমাধ্যমে। বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয় যে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজৌরির সেনাব্রিগেডের উপর ফিদায়েঁ হামলা চালানো হয়েছে।
সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়ে অচিরেই। কিন্তু পরে পিআইবি নিশ্চিত করেছে যে, রাজৌরিতে ফিদায়েঁ হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। ভিডিয়োটিও ভুয়ো। মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভয়ের আবহ তৈরির জন্য পোস্ট করা হয়েছে সেই ভিডিয়ো।
সংঘাতের আবহে বৃহস্পতিবার সেনাকর্তার নাম করে একটি চিঠিও ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। পিআইবি স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ওই নামের কোনও ব্যক্তি সেনার উঁচু পদে নেই। চিঠিটিও ভুয়ো।
ভারতের বিমানবন্দরগুলিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সরকারের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলেও গুজব ছড়ায় সমাজমাধ্যমে। সেই খবরের জেরে হইচই পড়ে যায়। পরে দেখা যায় খবরটি মিথ্যা এবং সরকারের তরফে ও রকম কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি।
গুজরাতের হজ়ীরা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে দাবি করেও একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। কিন্তু তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।
ভিডিয়ো খতিয়ে দেখে এ-ও জানা যায় যে, ভিডিয়োটি ২০২১ সালের জুলাই মাসের একটি তেলের ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণের ভিডিয়ো।
এ রকমই কয়েকটি ভুয়ো খবর শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে সেগুলি বিভ্রান্তও করেছে নেটাগরিকদের। জানা গিয়েছে, সেই সব পোস্টের অনেকগুলিই পাকিস্তানের চাল। আর মিথ্যা খবরের সেই ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে নয়াদিল্লি।