Pakistan Main Battle Tank

‘শাঁসালো খদ্দের’কেই ধোঁকা! নিম্নমানের ট্যাঙ্ক গছিয়ে পাকিস্তানের ফৌজকে ভিতর থেকে ফোঁপরা করছে ‘বন্ধু’ চিন

চিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘অল-খালিদ’ ট্যাঙ্কের উৎপাদন করছে পাকিস্তান। একে ইসলামাবাদের স্থলবাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার বলা যেতে পারে। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট ট্যাঙ্কটির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাওয়ালপিন্ডির এক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:২৭
Share:
০১ ১৮

একের পর চিনা হাতিয়ারে ঘর বোঝাই করছে পাকিস্তান। বেজিঙের অস্ত্র ব্যবসায় ইসলামাবাদকে ‘শাঁসালো খদ্দের’ বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু গুণমানে কতটা ভাল ড্রাগনের তৈরি মারণাস্ত্র? যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার আদৌ কি কোনও ক্ষমতা রয়েছে এগুলির? সম্প্রতি এই বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির এক সাবেক ফৌজি অফিসারকে। তাঁর দেওয়া বিবৃতিতে স্বস্তি পেয়েছে ভারতও।

০২ ১৮

পাক ফৌজের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল তারিখ খান। সৈনিক জীবনে ইসলামাবাদের স্থলবাহিনীর এক নম্বর স্ট্রাইক কোরের কমান্ডার ছিলেন তিনি। পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে ‘যুদ্ধজয়ী’ সেনাপতি হিসাবে বিশেষ সম্মান রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি ‘গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস’ নামের একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন জেনারেল তারিখ। সেখানেই রাওয়ালপিন্ডির হাতে থাকা ‘অল-খালিদ’ ট্যাঙ্কের সক্ষমতা এবং কার্যকারিতার তুলোধনা করেন তিনি।

Advertisement
০৩ ১৮

২০০১ সাল থেকে ‘অল-খালিদ’ এমবিটি (মেন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক) ব্যবহার করছে পাক সেনা। হাতিয়ারটিকে তাদের আর্মার্ড কোরের স্তম্ভ বলা যেতে পারে। চিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করেছে ইসলামাবাদ। সাক্ষাৎকারে অস্ত্রটির কার্যকারিতা প্রসঙ্গে জেনারেল তারিখ বলেন, ‘‘অল-খালিদ আধুনিক লড়াইয়ের উপযুক্ত নয়। একে কখনওই বিশ্বমানের ট্যাঙ্ক বলা যাবে না। আমাদের বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা যৎসামান্য।’’

০৪ ১৮

ইসলামাবাদের বাহিনীর এমবিটির এ-হেন চাঁছাছোলা সমালোচনার নেপথ্যে একাধিক কারণ দেখিয়েছেন সাবেক কমান্ডার তারিখ। তাঁর কথায়, ‘‘চিনা সেনার কাছে যে ট্যাঙ্ক রয়েছে, তার পোশাকি নাম ‘টাইপ ৯০-২’। আমাদের ‘অল-খালিদ’কে ঠিক তার আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। নকশায় তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। ট্যাঙ্কটি তৈরির সময় পাক ফৌজের রণকৌশল বা ভূ-প্রাকৃতিক সমস্যা, কোনও কিছুর দিকেই নজর দেওয়া হয়নি।’’

০৫ ১৮

এর পরই ‘অল-খালিদ’কে নিয়ে একটি তাচ্ছিল্যে ভরা মন্তব্য করেন পাক ফৌজের ওই অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল। তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের মূল যুদ্ধ ট্যাঙ্কটির কোনও মূল্য নেই। বিশ্বের শক্তিশালী বাহিনীগুলির কেউই এই ধরনের দুর্বল হাতিয়ার ব্যবহার করে না।’’ যদিও বিপুল সংখ্যায় ‘অল-খালিদ’ রফতানির স্বপ্ন রয়েছে ইসলামাবাদের, যাকে ‘অলীক কল্পনা’ বলেই উল্লেখ করেছেন সাবেক সেনাকর্তা জেনারেল তারিখ।

০৬ ১৮

‘অল-খালিদ’ এমবিটির নির্মাণকারী জোড়া সংস্থা হল চিনের নোরিনকো এবং পাকিস্তানের হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ় তক্ষশীলা। এতে রয়েছে ইউক্রেনের তৈরি ১,২০০ অশ্বশক্তির ৬টিডি-২ ডিজ়েল ইঞ্জিন। ১২৫ মিলিমিটারের গোলা ছুড়তে পারে এই ট্যাঙ্ক। সেই কথা মাথায় রেখে কামানের মতো দেখতে এর মূল নলটিকে তৈরি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, বর্তমানে পাক সেনায় ৩০০-র বেশি ‘অল-খালিদ’ ট্যাঙ্ক রয়েছে।

০৭ ১৮

২০১১ সালে ৪৪টি এই ট্যাঙ্ক কেনার জন্য চিনের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোর সেনাবাহিনী এই ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে থাকে। হাতিয়ারটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এতে রয়েছে গোলা ভরার স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি। চিনা সংস্থা নোরিনকো এর নাম রেখেছে এনবিটি-২০০০। যদিও সেই পরিচয় বদলে দিয়েছে পাক সেনা। সপ্তম শতাব্দীর কিংবদন্তি মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন আল-ওয়ালিদ নামের ট্যাঙ্কটির নতুন নামকরণ করেছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা।

০৮ ১৮

এ-হেন ‘অল-খালিদ’-এর কথা বলতে গিয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কের প্রসঙ্গ টেনেছেন ইসলামাবাদের সাবেক সেনাকর্তা। সাক্ষাৎকারে তারিখ বলেন, ‘‘পাকিস্তানের কাছে এটা বড় ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে নয়। প্রযুক্তিগত এবং ধ্বংসক্ষমতার নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রের এম-১ অ্যাব্রাম্স বা জার্মানির লেপার্ড-২-এর কথা বলা যেতে পারে। যে কোনও সংঘর্ষের রং বদলে দেওয়ার ক্ষমতা এই ট্যাঙ্কগুলির আছে। সেখানে অল-খালিদ খেলনা ছাড়া কিছুই নয়।’’

০৯ ১৮

জেনারেল তারিখের দাবি, সংশ্লিষ্ট ট্যাঙ্কটি নির্মাণ করার সময়েই পাক প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি সমস্যার মুখে পড়েছিল। একাধিক পশ্চিমি কোম্পানিকে এর বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহের বরাত দেয় তারা। কিন্তু, মুনাফার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ায় একটা সময়ে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম পাঠাতে রাজি হয়নি ওই সমস্ত সংস্থা। দীর্ঘ টালবাহানার পর ইউক্রেনের থেকে ১,২০০ অশ্বশক্তির ৬টিডি-২ ডিজ়েল ইঞ্জিন হাতে পেতে সক্ষম হয় নির্মাণকারী সংস্থা হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ় তক্ষশীলা।

১০ ১৮

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান (স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন) শুরু করে রাশিয়া। তার পর থেকে গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে মস্কোর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ লড়ছে কিভ। সংঘাত পরিস্থিতিতে ‘অল-খালিদ’ ট্যাঙ্কের ইঞ্জিন ইসলামাবাদকে সরবরাহ করা বন্ধ রেখেছে পূর্ব ইউরোপের ওই দেশ। ফলে এর ব্যাপক হারে উৎপাদন নিয়ে আরও সমস্যার মুখে পড়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতর।

১১ ১৮

‘অল-খালিদ’ এমবিটিতে তাপীয় চিত্র (থার্মাল ইমেজিং) এবং স্বয়ংক্রিয় চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থার (অটো-ট্র্যাকার সিস্টেম) মতো প্রযুক্তি রয়েছে। তবে বিশ্বমানের ট্যাঙ্ক হওয়ার ক্ষেত্রে এগুলি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সাবেক জেনারেল তারিখ। তিনি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া, পেরু এবং সৌদি আরবকে সংশ্লিষ্ট ট্যাঙ্কটি বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু, নির্ধারিত কিছু পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় ইসলামাবাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেনি ওই তিন দেশ।

১২ ১৮

চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে পাকিস্তান। সেখানে বলা হয়েছে, তৃতীয় কোনও পক্ষ দ্বারা দুই তরফের কেউ আক্রান্ত হলে, তাকে যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করবে রিয়াধ এবং ইসলামাবাদ। সংশ্লিষ্ট সমঝোতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটোর (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) যথেষ্ট মিল রয়েছে। এই চুক্তির জেরে সৌদি সরকার বিপুল সংখ্যায় ‘অল-খালিদ’ ট্যাঙ্কের বরাত দিতে পারে বলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

১৩ ১৮

পাক ফৌজের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল খান অবশ্য এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘‘রিয়াধের এই ট্যাঙ্ক কেনার কোনও প্রশ্নই নেই। তা ছাড়া প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে সামরিক সাহায্যের জন্য, হাতিয়ারের ব্যবসা করতে নয়। সৌদির সেনা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক হাতিয়ার ব্যবহার করে থাকে। সেখান থেকে সরে এসে তারা অল-খালিদে নজর দেবে এই ধারণা কষ্টকল্পিত।’’

১৪ ১৮

গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে ব্যর্থ হয় পাক সেনার হাতে থাকা একাধিক চিনা হাতিয়ার। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে বেজিঙের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স) এইচকিউ-৯পির কথা। সংঘাতের গোড়াতেই ইজ়রায়েলি ড্রোন হামলায় সেগুলিকে উড়িয়ে দেয় নয়াদিল্লির বাহিনী। পাশাপাশি এখানকার কোনও ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিতই করতে পারেনি ওই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।

১৫ ১৮

সংঘর্ষের সময় ভারতীয় লড়াকু জেট ধ্বংস করতে চিনের তৈরি পিএল-১৫ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে পাক বিমানবাহিনী। কিন্তু বিস্ফোরণ না হয়ে পঞ্জাবের সীমান্ত লাগোয়া একটি গ্রামে এসে পড়ে ওই ক্ষেপণাস্ত্র। পরে সেটিকে উদ্ধার করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। এর ফরেন্সিক পরীক্ষাও করিয়েছিল নয়াদিল্লির ফৌজ।

১৬ ১৮

কিন্তু, তার পরেও চিনা অস্ত্র আমদানিতে হ্রাস টানেননি রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। সম্প্রতি পাক ফৌজের হাতিয়ার সক্ষমতা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ‘স্টকহলোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা সিপ্রি। তাদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ইসলামাবাদের আমদানি করা অস্ত্রের ৮১ শতাংশ এসেছে বেজিং থেকে। আগে এই পরিমাণ ছিল ৭৪ শতাংশ।

১৭ ১৮

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চিনের থেকে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেল্‌থ শ্রেণির জে-৩৫এ লড়াকু জেট কেনার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তবে ওই সময় যুদ্ধবিমানগুলি ২০২৭ সালের আগে পাক বায়ুসেনার বহরে শামিল হবে না বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু মে মাসে ভারতের হাতে মার খাওয়ার পরই দ্রুত পরিস্থিতি বদল হয়। ইসলামাবাদের হাতে তড়িঘড়ি এই লড়াকু জেট তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেজিং।

১৮ ১৮

পাক গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেজিঙের থেকে মোট ৪০টি জে-৩৫এ লড়াকু জেট কিনেছে ইসলামাবাদ। কূটনৈতিক মহলের দাবি, সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির দামে ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে রাজি হয়েছে ড্রাগন সরকার। এ ছাড়া চিনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জে-১০সি লড়াকু জেট তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছে রাওয়ালপিন্ডি। তাদের ভিটি-৪ ‘হায়দার’ ট্যাঙ্কটির নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছে মান্দারিনভাষীদের হাত।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement