Pakistan’s Fear of India

ভারতের তাপে ভস্ম হওয়ার আতঙ্কে কাশ্মীর নিয়ে জুয়া! মার্কিন গুপ্ত নথিতে পাকিস্তানের পর্দাফাঁস

মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর ১৯৯৩ সালের নথিতে ভারতকে নিয়ে পাকিস্তানের ভয়ের বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের ফৌজি জেনারেলরা জুয়া খেলছেন বলে সেখানে দাবি করা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৫ ০৭:১০
Share:
০১ ২১

অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার ভয় থেকেই জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা? মার্কিন গোয়েন্দাদের নথিতে এ বার উঠে এল সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, সেই কারণেই গত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে বার বার উপত্যকাকে রক্তাক্ত করেছে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা। এমনকি ভূস্বর্গ পেরিয়ে মুম্বই, দিল্লি বা অহমদাবাদেও হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে তাঁদের।

০২ ২১

সম্প্রতি মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ বা সিআইএর ১৯৯৩ সালের বেশ কিছু নথি প্রকাশ্যে আনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ওই সময় জম্মু-কাশ্মীরে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের দাপাদাপি তুঙ্গে উঠেছিল। সংশ্লিষ্ট নথিতে ইসলামাবাদের গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাদের অর্থ ও হাতিয়ার সরবরাহের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন সিআইএর গোয়েন্দারা।

Advertisement
০৩ ২১

মার্কিন গুপ্তচরদের দাবি, জন্মের পর থেকেই ভারতকে যমের মতো ভয় পেয়ে এসেছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা এবং ফৌজি অফিসারেরা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তৃতীয় বার সম্পূর্ণ ভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার পর সেই আতঙ্ক আরও বেশি করে তাঁদের মনে চেপে বসে। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ নামের নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয় নয়াদিল্লি। ফলে আরও বেশি করে অস্তিত্বে সঙ্কটে ভুগেছে ইসলামাবাদ।

০৪ ২১

এ হেন ভারত-পাক জটিল সম্পর্কের সমীকরণ সংক্রান্ত সিআইএর দেওয়া তথ্যের মূল্যায়ন করেছে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স এস্টিমেট’ বা এনআইই। যুক্তরাষ্ট্রের মহাফেজখানা থেকে এই সংস্থার ৯০-এর দশকের নথি প্রকাশ্যে এনেছে ওয়াশিংটন। নথিগুলির উপসংহারে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধ সম্ভবত কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে শুরু হবে। আর লড়াইয়ের ময়দানে শত যোজন দূরে পিছিয়ে থাকবে পাকিস্তান।

০৫ ২১

সিআইএর পদস্থ আধিকারিক ব্রুস রিডেলের নেতৃত্বে এনআইই নামের দফতরটি তৈরি করে আমেরিকা। এদের কাজ ছিল গুপ্তচরদের পাঠানো তথ্যের বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করা। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। ওই সময়ে অভ্যন্তরীণ ভাবে স্থিতিশীল না হওয়ায় অস্থির ছিল পাকিস্তান। যদিও পরমাণু হাতিয়ার তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইসলামাবাদ।

০৬ ২১

১৯৭৪ সালে পরমাণু অস্ত্রের প্রথম সফল পরীক্ষা চালায় নয়াদিল্লি। সেই মিশনের নাম ছিল ‘অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধ’। মার্কিন গুপ্তচরদের দাবি, এর ফলে প্রমাদ গোনেন পাকিস্তানের ফৌজি জেনারেলরা। ভারতের আণবিক হাতিয়ারকে ‘নীরব হুমকি’ হিসাবে দেখেছিলেন তাঁরা। ১৯৯৮ সালে কেন্দ্র ফের রাজস্থানের পোখরানে পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালালে আর চুপ করে বসে থাকেনি ইসলামাবাদ। সঙ্গে সঙ্গে বালোচিস্তানে আণবিক পরীক্ষা চালান রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা।

০৭ ২১

পরমাণু শক্তি অর্জনের পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা ২০ শতাংশের চেয়েও কমেছে বলে রিপোর্টে স্পষ্ট করেছে সিআইএ। যদিও মার্কিন গুপ্তচরদের এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি জায়গায় খটকা রয়েছে। তাঁদের দাবি, ভুল বোঝাবুঝি, হঠাৎ কোনও পরিস্থিতির জেরে প্রত্যাঘাত, সামরিক মহড়া এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সেই আগুনে ঘি ঢালার কাজ করতে পারে।

০৮ ২১

সিআইএর নথিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান কেউই যুদ্ধ চায় না। কিন্তু, নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান আর্থিক এবং সামরিক শক্তির তাপ সহ্য করা ইসলামাবাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই প্রচণ্ড ভয় থেকেই কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত দিয়ে চলেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা। ভারতকে চাপে রাখতে তাঁদের সঙ্গে আঞ্চলিক জোট চায় ইসলামাবাদ।

০৯ ২১

যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরদের নথির এ-হেন ব্যাখ্যাকে পূর্ণ সমর্থন করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, দেশভাগের পর থেকে পাকিস্তানে কখনওই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, বার বার সেনা অভ্যুত্থানে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির অর্থনীতি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

১০ ২১

অন্য দিকে, ৯০-র দশকে উদার অর্থনীতির প্রবর্তন করে বিশ্বের সামনে ভারতের দরজা খুলে দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তথা সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এতে নয়াদিল্লির ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। ধীরে ধীরে আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী হতে শুরু করে ভারত। পাকিস্তান তখনও যে তিমিরে থাকার সেখানেই ছিল।

১১ ২১

সিআইএর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২১ শতকের গোড়াতেই পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর সামরিক ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ইসলামাবাদ বুঝতে পারে কোনও ভাবেই আর দীর্ঘমেয়াদি পুরোদস্তুর যুদ্ধ চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে কম খরচের ছায়া-যুদ্ধের রাস্তা অবলম্বন করে পাক গুপ্তচর সংস্থা। কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতকে রক্তাক্ত করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।

১২ ২১

মার্কিন গুপ্তচরেরা মনে করতেন, আর্থিক দিক থেকে একেবারে দেউলিয়ার দরজায় পৌঁছে গেলে হয়তো পাকিস্তানে ফের সেনা অভ্যুত্থান ঘটবে। নয়তো, বড় আকারের জঙ্গি হামলা ঘটিয়ে ভারতকে যুদ্ধের ময়দানে টেনে আনতে চাইবেন রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। দেশকে সংঘবদ্ধ রাখতে দ্বিতীয় কোনও উপায় তাঁদের সামনে খোলা থাকবে না। পহেলগাঁও হামলায় সেই তত্ত্বই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১৩ ২১

অস্তিত্বের এই সঙ্কট থেকে ভারতের ভিতরে পাক গুপ্তচরেরা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে পারে বলে ৯০-র দশকের নথিতে সিআইএর আধিকারিকদের সতর্কবার্তা দিতে দেখা গিয়েছে। ২০০০ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের ভারত সফরের সময় অনন্তনাগ জেলার ছত্তীসিংহপুরার গ্রামে হানা দিয়েছিল ঘাতকের দল। বেছে বেছে খুন করা হয়েছিল ৩৫ জন শিখ ধর্মাবলম্বীকে।

১৪ ২১

ছত্তীসিংহপুরা হত্যাকাণ্ডের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদতের অভিযোগ তুলে ক্লিন্টনের কাছে ইসলামাবাদ সফর বাতিলের জোরদার আর্জি জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। তাতে অবশ্য কান দেননি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বারও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের ভারত সফরের সময় পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।

১৫ ২১

সিআইএর মতোই ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ফৌজের অস্তিত্ব রক্ষা করতে গিয়ে এই ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তাদের চুলচেরা আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১৬ ২১

কাশ্মীরের গণহত্যার কোনও রকম প্রত্যাঘাতের আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনিরের রাজনৈতিক মতিগতিকে আতশকাচের তলায় ফেলে দেখছে নয়াদিল্লি। প্রথমেই পাকিস্তানের দিক থেকে গোটা ঘটনাটিকে সাজিয়েছেন ভারতীয় কর্তারা। তাঁদের দাবি, নিজেদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি প্রণয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন জেনারেল মুনির।

১৭ ২১

বর্তমানে পাকিস্তানে হু হু করে বাড়ছে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জনপ্রিয়তা। অন্য দিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের সশস্ত্র গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন।

১৮ ২১

খাইবার পাখতুনখোয়ার পাশাপাশি বালোচিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও (পাক অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) পাক সেনার বিরুদ্ধে দানা বেঁধেছে বিদ্রোহ। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল মুনির জুয়া খেলার মতো করে পহেলগাঁওয়ের মতো কাণ্ডে আশকারা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। পাক সেনাবাহিনীর মনোবল টিকিয়ে রাখার জন্য এখন মাত্র একটাই বিষয় বেঁচে রয়েছে, তা হল ভূস্বর্গের নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি)।

১৯ ২১

ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই ‘জুয়া খেলার’ যুক্তি রয়েছে পাকিস্তানের দিক থেকে। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলে পাক সেনাকে এক মঞ্চে নিয়ে আসা সম্ভব। পহেলগাঁওয়ে যে ইচ্ছাকৃত ভাবে হিন্দুদেরই হত্যা করা হয়েছে এই ঘটনায় দ্বিজাতি তত্ত্বকে হিমঘর থেকে টেনে আনলে ঘরোয়া রাজনীতিতে তাদের সুবিধা।

২০ ২১

পাকিস্তানের আশা, এর ফলে ভারতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি শুরু হবে এবং দেশটির রাজনৈতিক মনোবল দুর্বল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রের কথা তুলে জেনারেল মুনির আন্তর্জাতিক খবরদারি ডেকে আনতে পারবেন, ‘গেল গেল’ রব উঠবে এবং কাশ্মীর নিয়ে সমঝোতার জন্য ভারতকে চাপ দেওয়া সম্ভব হবে।

২১ ২১

যদিও এখনও পর্যন্ত এর কোনওটাই হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী জল-স্থল ও বায়ুসেনাকে পহেলগাঁও কাণ্ডের বদলা নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। ধীরে ধীরে তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বাহিনী। এতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে চড়েছে উত্তেজনার পারদ, যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে বদলাবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement