Sunita Rajwar

ট্রাকচালক বাবার পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন, প্রেমিক ছিলেন নওয়াজ়উদ্দিন! পশুর মতো আচরণ সইতে হত ‘পঞ্চায়েত’ তারকাকে

উত্তরপ্রদেশের শহর বরেলীতে জন্ম, বেড়ে ওঠা হলদোয়ানিতে। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে স্নাতক হওয়ার পরও বলিউডে জমি শক্ত করতে তাঁকে দিনের পর দিন ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করে যেতে হয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ১০:০২
Share:
০১ ১৮

গৃহকর্ম সহায়কের ভূমিকায় একের পর এক অভিনয় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এক সময় অভিনয় ছেড়েও দেন। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে স্নাতক হওয়ার পরও বলিউডে জমি শক্ত করতে তাঁকে দিনের পর দিন ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করে যেতে হয়েছিল।

০২ ১৮

২০১৯ সালের পর থেকে তাঁর কেরিয়ারের অভিমুখ বদল হতে থাকে ধীরে ধীরে। ২০১৯ সালে ‘গুল্লক’ ওটিটির মঞ্চে ‘বিট্টু কি মাম্মি’ নামের চরিত্রটি তাঁকে প্রথম জনপ্রিয়তার স্বাদ এনে দিয়েছিল। তার পর ২০২২ সালে ‘পঞ্চায়েত’-এর প্রথম সিজ়ন আসে। ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজের ‘বনরাকস’-এর স্ত্রী ক্রান্তি দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করার পর প্রচারের আলো এসে পড়ে সুনীতা রাজওয়ারের উপর।

Advertisement
০৩ ১৮

‘পঞ্চায়েত’-এ তাঁর অসাধারণ অভিনয় দিয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছেন সুনীতা। একের পর এক গুরুত্বহীন চরিত্রে অভিনয় করে যাওয়া সুনীতা দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন গীতা শর্মার চরিত্রে। অস্কারে বাছাই হওয়া ‘সন্তোষ’ ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র গীতা শর্মা। সন্ধ্যা সুরির পরিচালনায় সেই ছবি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের জন্য মনোনীত হয় ২০২৫ সালে।

০৪ ১৮

কানের রেড কার্পেটে সুনীতার পা পড়েছে এই ছবির দৌলতেই। সেই পালকও জুড়েছে সুনীতার মুকুটে। মুম্বইয়ে একসময় ঘুপচি ঘর ভাগাভাগি করে থাকা ছোট শহরের এই মেয়েটির কাছে এটি ছিল স্বপ্নপূরণের মতো। সেই পালকও জুড়েছে সুনীতার মুকুটে।

০৫ ১৮

উত্তরপ্রদেশের শহর রায়বরেলীতে জন্ম সুনীতার। বেড়ে ওঠা হলদোয়ানিতে। বাবা ছিলেন পেশায় ট্রাকচালক। এক সাক্ষাৎকারে ‘পঞ্চায়েত’ খ্যাত অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন ছেলেবেলায় তিনি তাঁর বাবা পেশার পরিচয় দিতে লজ্জা পেতেন, গোপন করতেন। তিনি যে স্কুলে পড়তেন সেখানকার বহু ছাত্র-ছাত্রী বিত্তশালী পরিবার থেকে আসত।

০৬ ১৮

তাঁর ভাল স্কুলে পড়ার সুযোগ এসেছিল বাবার ট্রাক চালানোর আয় থেকেই। তবু বন্ধুবান্ধবের সামনে বাবার পেশা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে নানা মনগড়া পেশার কথা উল্লেখ করতেন সুনীতা। ছোট থেকে সুনীতার বাবার ছবি দেখার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। পরিবারকে নিয়ে তিনি প্রায়ই সিনেমা দেখতে চলে যেতেন। বাবার সেই ভালবাসা পরবর্তী কালে চারিয়ে গিয়েছিল সুনীতার মধ্যেও।

০৭ ১৮

স্কুলে পড়াকালীন প্রচুর নাটক, রামলীলা এবং নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর পর সুনীতাকে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরই এক পরিচিত বন্ধু। ১৯৯৭ সালে এনএসডি থেকে স্নাতক হন তিনি। মাত্র ৩০ হাজার টাকা ও চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন।

০৮ ১৮

অচিরেই স্বপ্নভঙ্গ হয় সুনীতার। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ধারাবাহিকে ছোট ছোট চরিত্র দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন। ‘ইয়ে রিশতা ক্যা কহলাতা হ্যায়’-তে ধনিয়া চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মন করে নেন। ধনিয়া চরিত্রটি ছিল বাড়ির কর্মসহায়কের। এর পর এই ধরনের চরিত্রগুলির জন্যই বাছাই হতে থাকেন সুনীতা।

০৯ ১৮

প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ‘টাইপকাস্টের’ বলি হতে থাকেন সুনীতা। এক বার রসিকতা করে বলেছিলেন, তিনি এত বার এই ধরনের চরিত্রের জন্য কাজ করে ফেলেছেন যে এর জন্য গিনেস বুকে নাম লেখাতে পারেন। একই চরিত্রের জন্য মনোনীত হতে হতে এক সময় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন এনএসডির এই প্রাক্তনী। সব কিছু ছেড়েছুড়ে মুম্বই থেকে পাততাড়ি গুটোনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন সুনীতা।

১০ ১৮

বেশ কয়েকটি বলিউডি সিনেমায় অভিনয় করেন সুনীতা। যেমন ‘ম্যায় মাধুরী দীক্ষিত বননা চাহতি হুঁ’ (২০০৩), ‘বুঢঢা মর গয়া’ (২০০৭), ‘দ্য হোয়াইট এলিফ্যান্ট’ (২০০৯), পঙ্কজ আডবাণী পরিচালিত ‘ডার্ক কমেডি’। সুশান্ত সিংহ রাজপুত এবং সারা আলি খানের সঙ্গে ‘কেদারনাথ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ২০২০ সালে ‘শুভ মঙ্গল জ্যাদা সাবধান’ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

১১ ১৮

মুম্বইয়ে একটি নাটকে অভিনয়ের সময়ে সুনীতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলিউড অভিনেতা নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকির। নওয়াজ়উদ্দিন তখন ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি পাওয়ার জন্য মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। মুম্বইয়ের মীরা রোডে তাঁর বাড়িতে প্রায়ই আসতেন সুনীতা। দেওয়ালে খুদে খুদে অক্ষরে তাঁর আর নওয়াজ়ের নাম লিখতেন। মুম্বইয়ের বিভিন্ন স্টেশনে মাঝেমাঝেই দেখা যেত দু’জনকে।

১২ ১৮

সেই প্রেমের সম্পর্ক নাকি ভেঙে দিয়েছিলেন সুনীতাই। এমনটাই অভিযোগ তুলেছিলেন নওয়াজ়উদ্দিন। আচমকাই যোগাযোগ বন্ধ করে দেন সুনীতা। নিজেই ফোনে জানান, তিনি আর নওয়াজের সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী নন। তবে সুনীতা পরে জানান, দু’জনের চিন্তাধারার মধ্যে মিল না থাকায় তিনি সম্পর্ক থেকে সরে এসেছিলেন।

১৩ ১৮

‘পঞ্চায়েত’-এর চারটি সিজ়নে সাফল্যের পর রুপোলি দুনিয়ার অন্ধকার দিক নিয়ে মুখ খুলেছেন সুনীতাও। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ‘পঞ্চায়েত’-এর ‘ক্রান্তি দেবী’ বিনোদন জগতের বৈষম্য নিয়ে সরব হয়েছেন। চরিত্রাভিনেতা অথবা যাঁরা ছোটখাটো ভূমিকায় অভিনয় করেন, তাঁদের সঙ্গে ‘পশুর মতো আচরণ করা হয়’ বলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।

১৪ ১৮

তাঁর দাবি, সেটে এক জন প্রধান অভিনেতা বা নায়ক-নায়িকাকে যে ভাবে খাতির করা হয়, তার তুলনায় সামান্য সম্মানটুকুও দেওয়া হয় না সহ-অভিনেতাদের। প্রধান অভিনেতারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও, সহ-অভিনেতাদের তাঁদের ন্যূনতম সুবিধার জন্য লড়াই করে যেতে হয় এখনও।

১৫ ১৮

ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেটে বসিয়ে রাখা হয় তাঁদের। মেকআপ ও বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ হয় নোংরা খুপরি ঘর। পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের বন্দোবস্ত পর্যন্ত করা হত না তাঁদের জন্য, অভিযোগ তোলেন সুনীতা।

১৬ ১৮

এ রকম অসংখ্য ঘটনার পর, অভিনয় থেকে সরে আসার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সুনীতা। এমনকি সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন কার্ড বাতিল করার মনস্থ করে ফেলেন অভিনেত্রী। ২০১৩ সালে অভিনয় থেকে বিরতি নেন তিনি। এই সময়ে তাঁকে অভিনয়ে ফিরে আসার অনুরোধ করেন নীনা গুপ্ত। সুনীতার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সাহসও জুগিয়েছিলেন নীনা।

১৭ ১৮

পঞ্চায়েত সিরিজে ফুলেরার গ্রামপ্রধান মঞ্জু দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নীনা। পঞ্চায়েতে প্রতিটি সিজ়নে মঞ্জু দেবী ও ক্রান্তি দেবীর আকচা-আকচি দর্শক উপভোগ করলেও বাস্তবে নীনা ও সুনীতা দু’জনেই ভাল বন্ধু। বিনোদন জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার পর নীনার মেয়ে মাসাবা গুপ্তের ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলেছেন সুনীতা। ২০১৫ সালে তিনি পুনরায় অভিনয়ের জন্য ডাক পান।

১৮ ১৮

‘পঞ্চায়েত’-এর সাফল্য তাঁর প্রতি সহকর্মীদের ব্যবহার বদলে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী। একই সঙ্গে সুনীতা স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁদের মতো অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে কখনও কখনও এই একই ধরনের চরিত্রের আবর্তে বাঁধা পড়ে গিয়ে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement