Balochistan Liberation

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ‘পুনঃসম্প্রচার’, জন্ম নেবে স্বাধীন বালুচিস্তান! আতঙ্কে পাক কট্টরপন্থী নেতারাই

পাঁচ থেকে সাতটি জেলা নিয়ে জন্ম হবে স্বাধীন বালুচিস্তানের। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে শেহবাজ় সরকারকে সতর্ক করলেন পাকিস্তানের কট্টরপন্থী নেতা মৌলানা ফজ়ল-উর-রহমান।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩০
Share:
০১ ১৮

পাকিস্তান থেকে যে কোনও মুহূর্তে আলাদা হবে বালুচিস্তান। পশ্চিম এশিয়ায় জন্ম নেবে নতুন রাষ্ট্র। এই মর্মে এ বার ইসলামাবাদকে সতর্কবার্তা দিলেন প্রতিবেশী দেশটির এক কট্টরপন্থী নেতা তথা ধর্মগুরু। শুধু তা-ই নয়, এ ব্যাপারে ৫৪ বছর আগের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের উদাহরণও দিয়েছেন তিনি।

০২ ১৮

সম্প্রতি বালুচিস্তান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন পাক পার্লামেন্ট ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’র সদস্য তথা জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম পাকিস্তানের নেতা মৌলানা ফজ়ল-উর-রহমান। তাঁর দাবি, দেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশটির থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করবে পাঁচ থেকে সাতটি জেলা। নতুন দেশ হিসাবে বালুচিস্তানের ওই এলাকাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

Advertisement
০৩ ১৮

পাক সংসদ ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তেই বালুচিস্তান নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন মৌলানা ফজল-উর-রহমান। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘শেহবাজ় শরিফ সরকার মনোভাব বদল না করলে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। এক বার বালুচিস্তান থেকে জেলাগুলি আলাদা হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই তাতে মঞ্জুরি দেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আর তখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে পাকিস্তান।’’

০৪ ১৮

বর্তমানে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুর্রাম এলাকায় চলছে শিয়া ও সুন্নির মুসলিমদের মধ্যে জাতিদাঙ্গা। সেই হিংসার আঁচ গিয়ে পড়েছে দক্ষিণ লাগোয়া বালুচিস্তানেও। ইসলামাবাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত ওই এলাকার শিয়া-সুন্নি দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৫০ জন। এই সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

০৫ ১৮

পাক সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় উপজাতিরা। মেশিনগান থেকে শুরু করে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে তারা। ফলে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাটি মূল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে পাক ফৌজ, রেঞ্জার্স এবং পুলিশ।

০৬ ১৮

এই পরিস্থিতিতে মৌলানা ফজ়লের মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের কথায়, যে ভাবে হিংসা বাড়ছে, তাতে অচিরেই গৃহযুদ্ধের ‘জ্বলন্ত কুয়ো’য় পড়তে পারে ইসলামাবাদ। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরেই স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পাক ফৌজের দ্বারা অত্যাচারিত এবং সরকারের থেকে অবহেলিত বালুচরা।

০৭ ১৮

বালুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেহবাজ় সরকার এবং রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা যে কিছুই করছেন না, এমনটা নয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে বিবদমান গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষবিরতি চুক্তি করেছে ফৌজ ও প্রশাসন। কিন্তু কোনওটাই স্থায়ী হয়নি। উল্টে দ্বিগুণ উৎসাহে লড়াইয়ে জড়িয়েছে দুই পক্ষ।

০৮ ১৮

খাইবার পাখতুনখোয়ার পুলিশের দাবি, বিদ্রোহীদের হামলার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের গাড়িও। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চাল, আটা এবং রান্নার তেল বোঝাই ৩৩টি গাড়ির একটি কনভয়ে হামলা চালায় তারা। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১০ জন। বাকি চালক-সহ ছ’জনকে অপহরণ করেন বিদ্রোহীরা। তাঁদের হদিস এখনও মেলেনি।

০৯ ১৮

প্রসঙ্গত, এ বছরের জানুয়ারিতেও খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান নিয়ে শেহবাজ় সরকারের কড়া সমালোচনা করে মুখ খোলেন মৌলানা ফজ়ল। তিনি বলেন, ‘‘এই দু’টি প্রদেশের উপর সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইসলামাবাদ। সেখানকার জনগণ গত দুই দশক থেকে জীবন-জীবিকার জন্য সংগ্রাহ চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। অনেক দেরি হওয়ার আগে সমস্ত অংশীদারদের ডেকে সমাধানসূত্র বার করতে হবে। নইলে পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না।’’

১০ ১৮

পাক কট্টরপন্থী নেতার যুক্তি, যদি কোনও এলাকার শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তা হলে সেটির ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়। ‘‘আমরা পোড়া মাটির উপর বসে আছি। পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের নেতা-নেত্রীরা অবস্থার গুরুত্ব ঠিক বুঝতে পারছেন না। ওই সমস্ত এলাকায় বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ বাড়বে। কারণ, সেখানে অনেক মূল্যবান খনিজ দ্রব্য রয়েছে।’’ বলেছেন মৌলানা ফজ়ল।

১১ ১৮

কাতারের সংবাদ সংস্থা আল জ়াজিরায় প্রকাশিত বালুচিস্তান সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানকার নাগরিকদের বিনা বিচারে আটক বা গুম করার ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা বহু বালুচ যুবককে রাতারাতি গায়েব করেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। এর জেরে দেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশটিতে দিন দিন অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১২ ১৮

স্বাধীনতার দাবিতে পাকিস্তানের ওই প্রদেশে সক্রিয় রয়েছে ‘বালুচ লিবারেশন আর্মি’ বা বিএলএ। গত বছরর অগস্ট থেকে আক্রমণের ঝাঁজ তীব্র করেছে তারা। বিএলএর মূল নিশানায় থাকে পাক ফৌজ। শেষ সাত মাসে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির হামলায় ২৩ জন অসামরিক নাগরিক-সহ প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭০ জন।

১৩ ১৮

গত বছরের ১৯ নভেম্বর রাজধানী ইসলামাবাদে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ। সেখানেই দক্ষিণ-পশ্চিম বালুচিস্তানে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ছিলেন অসামরিক এবং পাক ফৌজের পদস্থ আধিকারিকেরা।

১৪ ১৮

ওই সেনা অভিযানে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং তাদের আত্মঘাতী বাহিনী মাজিদ ব্রিগেডকে নিকেশ করার পরিকল্পনা করে পাক ফৌজ। এ ছাড়াও বালুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এবং বালোচ রাজি আজোই সঙ্গরকে (বিআরএএস) নিশানা করা হবে বলে জানিয়েছে শরিফের দফতর। যদিও এই পন্থায় বিএলএকে একেবারেই বাগে আনতে পারেনি ইসলামাবাদ।

১৫ ১৮

২০১৩ সালে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বেজিং। শুরু হয় ‘চিন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর’-এর (সিপিইসি) কাজ। এই প্রকল্পের আওতায় বালুচিস্তানের গ্বদর বন্দর থেকে শুরু করে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা তৈরির কথা রয়েছে।

১৬ ১৮

এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা বালুচ জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের আগুনে নতুন করে ঘি পড়ে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের নামে এলাকার জমি দখল করছে পাক সেনা ও সরকার। স্থানীয়দের আর্থিক সমৃদ্ধির কোনও রকম সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না।

১৭ ১৮

বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বালুচদের হাতে অস্ত্র ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হল এই সিপিইসি। গত কয়েক বছরে এখানকার স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলি এই প্রকল্পে একাধিক হামলা চালিয়েছে। বিএলএ-র আক্রমণে প্রাণ গিয়েছে একাধিক চিনা শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারের।

১৮ ১৮

আয়তনের নিরিখে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হল বালুচিস্তান। এখানে রয়েছে ইউরেনিয়াম এবং সোনার খনি। মেলে প্রাকৃতিক গ্যাসও। খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির অন্যতম পিছিয়ে পড়া এলাকা এটি। বালুচদের ৭০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement