চার দিনের বিদেশ সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফ্রান্সে দু’দিন কাটানোর পর ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার আমেরিকা পৌঁছেছেন মোদী। শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হয় তাঁর।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পরে এটি মোদীর প্রথম ওয়াশিংটন সফর। কূটনীতিকেরা মনে করছিলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে মোদীর প্রথম সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে নতুন ঘোষণা হতে পারে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। দু’দেশের বৈঠকে মূলত শুল্ক, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রই প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরে ভারতের পক্ষ থেকে সদর্থক বার্তা নিয়েই ওয়াশিংটন পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর আতিথ্যের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও ‘এক্সক্লুসিভ’ হোটেল। এটি সাধারণ কোনও হোটেল নয়। হোয়াইট হাউসের বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য বরাদ্দ এই ‘ব্লেয়ার হাউস’।
১৬৫১ পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত ব্লেয়ার হাউস রয়েছে হোয়াইট হাউসের উল্টো দিকে। এই ঐতিহাসিক বাড়িটি কোনও সাধারণ অতিথিশালা নয়। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর পরিবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিশ্বনেতাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নির্দিষ্ট এই অতিথিশালা।
অতীতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গল, ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার, সাইমন পেরেস এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মতো বিশ্বখ্যাত নেতা-নেত্রী ও ব্যক্তিত্ব আমেরিকা সফরকালে ব্লেয়ার হাউসের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন।
৭০০০ বর্গফুট আয়তনের ব্লেয়ার হাউসে রয়েছে চারটি পরস্পর সংযুক্ত ভবন। ১১৯টি কক্ষ রয়েছে এখানে। এর মধ্যে রয়েছে ১৪টি অতিথি শয়নকক্ষ, ৩৫টি বাথরুম, তিনটি আনুষ্ঠানিক ডাইনিং রুম। অভিজাত গঠন ও বিলাসিতায় মোড়া ব্লেয়ার হাউসকে আমেরিকার জাতীয় আতিথেয়তার প্রতীক হিসাবেও গণ্য করা হয়।
আপাদমস্তক বিলাসবহুল উপকরণে মোড়া এই অতিথিশালার অন্দরসজ্জা যেমন নিপুণ, তেমনই শৈল্পিক। সাজসজ্জায় মেলে আমেরিকার ইতিহাস এবং কারুশিল্পের প্রতিচ্ছবি। সমস্ত ঘরেই প্রাচীন আসবাবপত্র, সূক্ষ্ম শিল্প এবং অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে এই অতিথিশালায়।
এর মার্জিত অন্দরসজ্জা ও ঐতিহাসিক সৌন্দর্য এক দিকে যেমন নজরকাড়া, তেমনই উন্মুক্ত এর বাইরের প্রকৃতি। এর ভিতরে রয়েছে একটি ঝর্না। আইভিলতা দিয়ে ঢাকা ভবনগুলির দেওয়াল। চৌহদ্দিতে রয়েছে একটি পার্কও।
ব্লেয়ার হাউস দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বনেতা থেকে শুরু করে রাজপরিবারের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আতিথেয়তা দিয়ে আসছে। এটি এমন একটি ঐতিহাসিক স্থান যেটি বহু কূটনৈতিক সম্পর্কের সমীকরণ তৈরির সাক্ষী।
১৮২৪ সালে নির্মিত এই ভবনটি শীঘ্রই ওয়াশিংটন গ্লোব সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক এবং রাষ্ট্রপতি অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ফ্রান্সিস প্রেস্টন ব্লেয়ার কিনে নেন। ১৯৪২ সালে, আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজ়ভেল্টের তৎপরতায় ব্লেয়ার হাউসের মালিকানা আসে সরকারের হাতে। সরকারি সম্পত্তি হিসাবে ঘোষিত হয় ব্লেয়ার হাউস।
প্রেসিডেন্টের অতিথিদের আপ্যায়নের পাশাপাশি ঐতিহ্য মেনে আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে শপথগ্রহণের আগে কয়েক দিন কাটাতে হয় এই ব্লেয়ার হাউসেই।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের আগে ব্লেয়ার হাউস ভারতীয় পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছিল, যা ভারত-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্বকে আরও বেশি করে তুলে ধরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার এই ব্লেয়ার হাউসেই সাক্ষাৎ করেন টেসলা সিইও ইলন মাস্ক। মাস্কের সঙ্গী ছিল তাঁর তিন সন্তান। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আলাপচারিতার সময় মাস্কের সঙ্গে বসে ছিল তাঁর সন্তানেরাও।
মোদী এবং মাস্ক মহাকাশ অনুসন্ধান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে ভারত ও আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।