House of Horror

‘হাউস অফ হরর্‌স’! অপরিচ্ছন্ন ঘরে তিন শিশুকে আটকে নির্যাতন, নেপথ্যে বাবা-মা! উঠে এল হাড়হিম করা তথ্য

চার বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল পরিবারের তিন শিশুকে। এই চার বছরে বাড়ির বাইরে পা রাখার অনুমতি ছিল না তাদের। মেনে চলতে হত মা-বাবার কঠোর নির্দেশ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ১০:২০
Share:
০১ ১৪

করোনাকাল অতীত। কিন্তু সেই অতিমারির ভয়াবহতা আজও বিদ্যমান একটি জার্মান পরিবারে। পরিবারটি যে বাড়িতে বাস করতেন আক্ষরিক অর্থেই সেই বাড়িটি যেন অভিশপ্ত। বাড়ির বাসিন্দারা দীর্ঘ চার বছর বাড়ির বাইরে বেরোতেন না। চার দেওয়ালের মধ্যেই আবর্তিত হত বাসিন্দাদের জীবন।

০২ ১৪

করোনার আতঙ্কে চার বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল পরিবারের তিন শিশুকেও। এই চার বছরে বাড়ির বাইরে পা রাখার অনুমতি ছিল না তাদের। মা-বাবার কঠোর নির্দেশ মেনে চলতে হত। মুখে সব সময় মাস্ক পরা ও বাইরের জগতের ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলা ছিল বাধ্যতামূলক। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলে যাওয়া ও সব রকম সামাজিক মেলামেশা।

Advertisement
০৩ ১৪

স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওভিদোর বাসিন্দা ওই জার্মান পরিবার। বিশ্ব জুড়ে কোভিডের বি‌ধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরেও চার বছর ধরে এই পরিবারটি নিজেদের শামুকের মতো গুটিয়ে রেখেছিল। প্রতিবেশীদের অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সেই বাড়িতে অভিযান চালায়। বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় তিন শিশুকে।

০৪ ১৪

তাদের এক জনের বয়স ১০ ও বাকি দুই যমজ ভাইবোনের বয়স আট। পুলিশ পৌঁছোতেই তাদের মা-বাবা জানান, বাড়িতে শিশুরা খুবই অসুস্থ। পুলিশ বাড়িতে ঢুকে হতবাক হয়ে যায়। খাঁচার মতো তিনটি বাক্সে বাচ্চারা শুয়ে ছিল। তাদের অবস্থা ছিল সঙ্গিন। চারিদিক অপরিচ্ছন্ন, স্যাঁতসেঁতে ভাব। আধো অন্ধকার ঘরে রাখা হত শিশুদের। চারদিকে আবর্জনা ও মাস্কের ডাঁই। দেওয়াল জুড়ে বিকৃত মুখের ছবি।

০৫ ১৪

সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক পোস্টে বলা হয়েছে, নাবালকদের বাবা ৫৩ বছর বয়সি এক জার্মান ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী ৪৮ বছর বয়সি, জন্মসূত্রে আমেরিকান। তাঁর জার্মান পাসপোর্টও রয়েছে। পারিবারিক হিংসা, শিশু নির্যাতন, মানসিক হেনস্থার অভিযোগে আটক করা হয়েছে এই দম্পতিকে।

০৬ ১৪

স্থানীয় এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, শিশুরা অপুষ্টিতে না ভুগলেও তাদের অবস্থা শোচনীয় ছিল। তাদের সঠিক পরিমাণে খেতে দেওয়া হলেও খুবই অপরিষ্কার অবস্থায় রাখা হয়েছিল। বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না। এমনকিবাচ্চাদের যখন বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তারা সামান্য শামুক দেখেও আঁতকে ওঠে।

০৭ ১৪

পুলিশের তত্ত্বাবধানে নাবালকদের বাড়ির বাইরে আনা হলে তারা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ঘরের বাইরে তাদের বার করে আনার পর সকলে যেন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়। আলো, গাছপালা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। যদিও বাইরে আসার সময় তাদের মুখে মাস্ক আঁটা ছিল।

০৮ ১৪

প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, পরিবারের দুই প্রধান সদস্য বাবা-মা উভয়ই ‘কোভিড সিনড্রোম’-এ ভুগছিলেন। তাঁদের এই ভীতি গোটা পরিবারকে বেশ কয়েক বছর ধরে লকডাউনের পরিবেশে থাকতে বাধ্য করেছিল। ভাইরাস সম্পর্কে অযৌক্তিক ভয় থেকে এই অদ্ভুত মানসিক অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এর ফলে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উপর কঠোর নিয়মকানুন আরোপ করেন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রায় কোনও যোগাযোগ ছাড়াই বেঁচে ছিলেন পাঁচ সদস্য।

০৯ ১৪

দম্পতির আশঙ্কা ছিল, ঘরের বাইরে পা রাখলেই তাঁরা ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। এর ফলে যে কারও প্রাণ যেতে পারে। তাই সন্তানদের ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছিলেন। ভিতরে ঢুকে পুলিশ দেখতে পায় যে বাড়িটি আবর্জনা, প্রচুর পরিমাণে ওষুধ, মুখোশ এবং অন্যান্য জিনিসপত্রে ভরা।

১০ ১৪

বাড়িটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির বহু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি নাবালকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

১১ ১৪

পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারটি ২০২১ সালের অক্টোবরে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। বাড়িতে কেবল পরিবারের কর্তার নামই লেখা ছিল। তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে যে, মুদিখানার জিনিসপত্র এবং চিঠি আনতে বাড়ি থেকে বেরোতেন পরিবারের কর্তা। খাওয়ার কোনও অভাব ছিল না তাঁদের।

১২ ১৪

প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে পরিবারটিকে তাঁরা বাড়ির বাইরে দেখেননি। বছরের পর বছর ধরে শিশুদের স্কুলে যেতে বা বাইরে খেলতে দেখা যায়নি। প্রতিবেশীরা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করার পর উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। বাড়ির ভেতরে ঢুকে তদন্তকারীরা শিশুদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করেন।

১৩ ১৪

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে যে বাচ্চারা মাস্ক পরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাচ্চারা চার বছরের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেয়ে অভিভূত। বাইরে এসে ঘাস স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় তারা। বাইরের পরিবেশ দেখে তারা বিস্মিত।

১৪ ১৪

মহামারির বিধিনিষেধ কেটে গিয়ে বর্তমানে সব কিছুই স্বাভাবিক। কিন্তু এখনও এই পরিবারটি সেই ভয়াবহতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এই কারণে তারা ঘটিয়েছে ভয়ঙ্কর কাণ্ডটি। উদ্ধারের পর তিন শিশুকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় মানবাধিকার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর পরিবার কল্যাণ দফতরের হেফাজতে পাঠানো হয়।

সব ছবি : সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement