India Pakistan War

‘সিঁদুর’-এর ঘা গায়ে নিয়েই যুদ্ধে নামার চেষ্টা! পাকিস্তানের আকাশ দখল করবে কোন কোন ভারতীয় জেট?

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর প্রত্যাঘাতের হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানের সেনা ও সরকার। পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধলে ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীকে নাকানিচোবানি খাওয়াবে নয়াদিল্লির কোন কোন যুদ্ধবিমান?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৭:৫১
Share:
০১ ২০

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে কাঠগড়ায় পাকিস্তান। ভারতের রাফাল-সহ মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। অন্য দিকে, পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির এ হেন দাবিকে ‘ভুয়ো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার)। তবে এর জেরে ফের এক বার খবরের শিরোনামে চলে এসেছে ভারতের লড়াকু জেটগুলির সক্ষমতা।

০২ ২০

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, মাঝ-আকাশের ডগফাইটে পাক বিমানবাহিনীর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এর অন্যতম কারণ হল রাফাল। ফরাসি সংস্থা দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের তৈরি সাড়ে চার প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমান মোট ৩৬টি রয়েছে নয়াদিল্লির হাতে। ২০১৬ সালে প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুযায়ী সেগুলি ভারতীয় বায়ুসেনাকে সরবরাহ করে ওই ফরাসি সংস্থা।

Advertisement
০৩ ২০

লড়াকু জেট রাফালে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হল মেটিওর এবং স্ক্যাল্প। দ্বিতীয়টির আবার পোশাকি নাম ‘স্টর্ম শ্যাডো’ বা ঝড়ের ছায়া। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। ফলে এই অভিযানে রাফাল ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও তথ্য দেয়নি নয়াদিল্লি।

০৪ ২০

উল্লেখ্য, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারতের উপর প্রত্যাঘাত হানার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাক সেনা ও সরকার। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ পুরোদস্তুর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে আকাশের দখল কে আগে নেবে, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। আর তখন বেশ কয়েকটি ভারতীয় জেটকে ইসলামাবাদ, সিয়ালকোট বা রাওয়ালপিন্ডির আকাশে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যেতে পারে।

০৫ ২০

সেই তালিকায় রাফালের পাশাপাশি অবশ্যই থাকবে রাশিয়ার তৈরি এসইউ-৩০ লড়াকু জেট। একে ভারতীয় বিমানবাহিনীর শিরদাঁড়া বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ, বিমানবাহিনীর হাতে যত ধরনের বিমান রয়েছে, তার মধ্যে সুখোই ৩০-র সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

০৬ ২০

রুশ যুদ্ধবিমানগুলিও আকাশ ও মাটিতে হামলা চালাতে সিদ্ধহস্ত। সম্প্রতি এগুলিতে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ফলে সুখোইয়ের শক্তি কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।

০৭ ২০

বিদেশি যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই যুদ্ধবিমানগুলি ওজনে হালকা হওয়ায় পাহাড়ি যুদ্ধে খুবই কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর মহড়ায় শক্তি প্রদর্শন করে প্রশংসা কুড়িয়েছে তেজস।

০৮ ২০

এগুলি ছাড়াও ফ্রান্সের তৈরি মিরাজ-২০০০, রাশিয়ার তৈরি মিগ ২১ বাইসন ও ব্রিটেনের তৈরি জাগুয়ার যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই যুদ্ধবিমানগুলি বেশ পুরনো। আর তাই এগুলিকে ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০৯ ২০

তবে এগুলির মধ্যে অবশ্যই শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকবে রাফাল। মোট ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে উড়তে পারে এই মাল্টিরোল ফরাসি যুদ্ধবিমান। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার। ডগফাইটের সময় এই লড়াকু জেট ব্যবহার করে মেটিওর। আর ৩০০ কিলোমিটার দূরে মাটিতে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে গুঁড়িয়ে দিতে স্ক্যাল্পের ব্যবহার হয়ে থাকে। এ ছাড়া পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েও হামলা চালাতে পারে এই ফরাসি যুদ্ধবিমান।

১০ ২০

ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে শত্রু ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানোর জন্য রয়েছে একাধিক হেলিকপ্টার। সেই তালিকায় প্রথমেই নাম আসবে আমেরিকার তৈরি অ্যাপাচের। বিমান নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি এই কপ্টার থেকে নিখুঁত নিশানায় ছোড়া যায় রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়াও কপ্টারটিতে লাগানো রয়েছে এম২৩০ চেন গান।

১১ ২০

অ্যাপাচের পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ধ্রুব, রুদ্র ও প্রচণ্ড নামের আরও তিনটি কপ্টার ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনা। এর মধ্যে হ্যাল নির্মিত প্রচণ্ড নিয়ে অনায়াসেই পৌঁছে যাওয়া যায় লাদাখের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। এটি থেকেই শত্রুর উপর হানা যায় প্রাণঘাতী হামলা।

১২ ২০

হামলাকারী কপ্টারের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার তৈরি এমআই-২৪। সোভিয়েত আমলে রুশ ফৌজ আদর করে একে ডাকত ‘কুমির’ বলে। শত্রু ঘাঁটিতে আক্রমণের পাশাপাশি বাহিনীকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ও এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের কাজেও ব্যবহার হয় এই কপ্টার।

১৩ ২০

এগুলি ছাড়াও চেতক ও চিতা নামের আরও দু’ধরনের কপ্টার রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে। এগুলি মূলত নজরদারির কাজে ব্যবহার করে বিমানবাহিনী। এই দু’টি কপ্টারই বেশ পুরনো হওয়ায় এগুলিকে বদল করা হচ্ছে।

১৪ ২০

বায়ুসেনার মালবাহী বিমানগুলির মধ্যে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার ও সি১৩০জে সুপার হারকিউলিস উল্লেখযোগ্য, যা তৈরি করেছে আমেরিকার সংস্থা বোয়িং ও লকহিড মার্টিন। দুর্গম জায়গায় অস্ত্রশস্ত্র, গোলা-বারুদ বা রসদ পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে সৈন্য নামানো, সব ধরনের কাজই করে থাকে এই দুই বিমান।

১৫ ২০

পাশাপাশি, ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে রয়েছে আমেরিকার দুই পাখাওয়ালা মালবাহী চিনুক হেলিকপ্টার, যা কার্গিল বা লাদাখের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ১৫৫ ক্যালিবারের এম-৭৭৭ আল্ট্রা লাইট হাউইৎজ়ার কামানকে পৌঁছে দিতে সক্ষম।

১৬ ২০

গত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সফল অভিযানের পর এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করেন ভারতীয় সেনার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। তাঁরা জানিয়েছেন, রাত ১টা বেজে পাঁচ মিনিটে শুরু হওয়া ‘অপারেশন সিঁদুর’ শেষ হয়ে যায় মাত্র ২৫ মিনিটেই। এতে মূলত পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বা ও জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিকে নিশানা করে সশস্ত্র বাহিনী।

১৭ ২০

সেনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের শুভান আল্লা মসজিদ , বিলাল মসজিদ, কোটলির একটি মসজিদ এবং মুজফ্‌ফরাবাদের জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া বহাওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বর, চক আমরু এবং বাগ এলাকার সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানাগুলিকে নিশানা করে সশস্ত্র বাহিনী। এর জন্য আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করতে হয়নি।

১৮ ২০

কিন্তু, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের দাবি, মোট ৮০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় ফৌজ। দেশের পার্লামেন্ট বা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘মোট ছ’টি জায়গায় আক্রমণ হয়েছে। তবে আমাদের বায়ুসেনা ধ্বংস করেছে দু’টি রাফাল-সহ মোট পাঁচটি ভারতীয় জেট।’’ সেগুলি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এবং পঞ্জাবের ভাতিন্দায় ছিটকে পড়ে বলে পার্লামেন্টে করা বক্তৃতায় উল্লেখ করেন তিনি।

১৯ ২০

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারতীয় লড়াকু জেট ধ্বংসের খবর সমাজমাধ্যম এবং পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশ্যে আসে বেশ কয়েকটি ছবিও। যার কোনওটাই সঠিক নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থা এক্স হ্যান্ডল। এই অভিযানে কোনও ভারতীয় জেটের ক্ষতি হয়েছে কি না, তা এখনও জানায়নি নয়াদিল্লি।

২০ ২০

উল্লেখ্য, আকাশের যুদ্ধে এর আগেও ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে হার মানতে হয়েছে পাক বিমানবাহিনীকে। ২০১৯ সালে ইসলামাবাদের অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে মাঝ-আকাশের লড়াইয়ে ধ্বংস করেন ওই সময়ে উইং কমান্ডার পদে থাকা অভিনন্দন বর্তমান। পুরনো আমলের মিগ-২১ বাইসনের ককপিটে ছিলেন তিনি। পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধলে ভারতীয় বায়ুসেনার রুদ্র রূপ যে বেরিয়ে আসবে, তা বলাই বাহুল্য।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement