চার দশকের বেশি সময় অভিনয়জগতে কাটিয়ে ফেলেছেন। পাঁচ রকম ভাষায় ২০০টির বেশি ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেছেন তিনি। বলিপাড়ায় বিনোদ খন্না, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দ, শাহরুখ খানের মতো তাবড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলেও নায়িকা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন দক্ষিণী চলচ্চিত্রমহলে। ‘বাহুবলী’ ছবিতে শিবগামীর চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়া রাম্যা কৃষ্ণণের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি।
১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম রাম্যার। কিশোরী বয়স থেকে অভিনয় শুরু করেছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভেল্লাই মানাসু’ নামের তামিল ভাষার ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে পদার্পণ। তার পর কন্নড়, মলয়ালম, তেলুগু এমনকি হিন্দি ভাষার ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রাম্যাকে। টেলিভিশনের পর্দায় একাধিক দক্ষিণী ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি।
নব্বইয়ের দশক থেকে বলিপাড়ায় অভিনয় শুরু রাম্যার। ১৯৯৩ সালে বিনোদ খন্নার সঙ্গে ‘পরম্পরা’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। একই বছরে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে ‘খলনায়ক’ ছবিতে কাজ করতে দেখা যায় নায়িকাকে।
১৯৯৬ সালে বলিউডের শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘চাহত’ ছবিতে অভিনয় করেন রাম্যা। ঠিক এক বছর পর গোবিন্দের সঙ্গে ‘বেনারসি বাবু’ ছবিতে রাম্যাকে দেখা যায়। ১৯৯৮ সালে ‘বড়ে মিয়াঁ ছোটে মিয়াঁ’ ছবিতে ‘বিগ বি’ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও অভিনয় করার সুযোগ পান রাম্যা।
নানা পটেকর এবং মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়াজুদ’ ছবিতে অভিনয় করেন রাম্যা। তার পর বলিউড থেকে বিরতি নেন তিনি। দীর্ঘ দু’দশকের বিরতির পর ২০২২ সালে ‘লাইগার’ ছবির মাধ্যমে ফের বলিপাড়ায় দেখা পাওয়া যায় তাঁর।
দক্ষিণী সিনেমাজগতে জনপ্রিয় রাম্যা অবশ্য বলিপাড়ায় কাজ করে হতাশ হয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি থেকে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছেন, তা বলিউড থেকে করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর কোনও হিন্দি ছবিই নাকি বক্স অফিসে বিশেষ সাড়া ফেলেনি বলে দাবি রাম্যার।
অন্য দিকে, দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করার প্রচুর সুযোগ পেয়েছেন রাম্যা। বক্স অফিস কাঁপানো ‘বাহুবলী’ ছবিতে ‘শিবগামী’র মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করা রাম্যা বলিউডে বেশির ভাগ সময় পার্শ্বচরিত্র অথবা নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলেও জানিয়েছিলেন।
ফিল্মজগৎ সূত্রে খবর, ১৯৯৯ সালে ‘পদইয়াপ্পা’ ছবির শুটিংয়ের খাতিরে দক্ষিণী পরিচালক কেএস রবিকুমারের সঙ্গে আলাপ হয় রাম্যার। পেশাগত সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও ঘনীভূত হতে শুরু করে। পরে রবিকুমারের পরিচালনায় আরও দু’টি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান রাম্যা।
রাম্যার সঙ্গে কাজ করার সময় বিবাহিত ছিলেন রবিকুমার। তবে নায়িকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ক্রমশ ব্যক্তিগত হয়ে উঠছিল বলে একাংশের দাবি। বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, রবিকুমার যে বিবাহিত ছিলেন সে প্রসঙ্গে অবগত ছিলেন রাম্যা। তা সত্ত্বেও পরিচালকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে, রবিকুমারের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাম্যা। অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েছিলেন। সে কথা প্রেমিক-পরিচালককে জানাতে নাকি রাম্যার সঙ্গে সম্পর্কের কথা সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন রবিকুমার।
অধিকাংশের দাবি, রবিকুমার সম্পর্ক অস্বীকার করায় একা কী ভাবে সন্তানপালন করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না রাম্যা। তাই গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন শোনা যায় যে, গর্ভপাতের জন্য রবিকুমারের কাছে ৭৫ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন রাম্যা। নায়িকার দাবিও নাকি পূরণ করেছিলেন পরিচালক। গর্ভপাতের পর আর রবিকুমারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেননি রাম্যা।
পরকীয়া সম্পর্কে ইতি টানার পর অবশ্য আরও এক দক্ষিণী পরিচালকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাম্যা। কয়েক বছর ডেট করার পর তেলুগু পরিচালক কৃষ্ণ ভামসিকে ২০০৩ সালের জুন মাসে বিয়ে করেন নায়িকা।
বিয়ের দু’বছর পর ২০০৫ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রাম্যা। পুত্রের জন্মের পর একাধিক ছবিতে অভিনয় করলেও ২০১৫ সালে ‘বাহুবলী’ ছবিতে শিবগামীর চরিত্রে অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া সানি দেওলের ‘জাঠ’ ছবিতে শেষ অভিনয় দেখা গিয়েছে রাম্যার।