স্বপ্ন বুনেছিলেন অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু পরিবার ছিল রক্ষণশীল। তাই মিথ্যা কথা বলে মাত্র ২০ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রেণু ধাড়িওয়াল। একটি ধারাবাহিকই জীবন বদলে দিল তাঁর। মাত্র চারটি পর্বে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন ‘রামায়ণ’-এর শূর্পণখা। এখন কী করছেন তিনি?
রেণুর বাবা ছিলেন পঞ্জাবি এবং মা বাঙালি। রক্ষণশীল পঞ্জাবি পরিবারে তাঁর জন্ম। বাড়ির মেয়ে বিনোদনের দুনিয়ায় কাজ করবেন, তা কল্পনা করাই যেন অবাস্তব ছিল রেণুর পরিবারে। তবে মেয়ের স্বপ্নপূরণের সঙ্গী ছিলেন মা। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার সিদ্ধান্তে রেণুকে সমর্থন করেছিলেন তিনি।
পরিবারের আপত্তি থাকায় সকলের কাছে সত্য গোপন করেছিলেন রেণু। মাত্র ২০ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে মুম্বইয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। মুম্বই— স্বপ্নপূরণের নগরী। রেণু যে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে যাচ্ছেন তা তাঁর মা ছাড়া বাড়ির অন্য কেউ জানতেন না।
মুম্বই গিয়ে রোশন তানেজার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন রেণু। সেখানে দীর্ঘ দিন অভিনয় শিখেছিলেন তিনি। বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে রেণুর সহপাঠী ছিলেন বলি অভিনেতা গোবিন্দ।
প্রশিক্ষণকেন্দ্রে অভিনয় শেখার পাশাপাশি রেণু থিয়েটারে অভিনয় করা শুরু করেছিলেন। সেই মঞ্চ থেকেই ছোট পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন রেণু।
আশির দশকের ঘটনা। মুম্বইয়ের এক মঞ্চে ‘পুরুষ’ নামের একটি নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছিলেন রেণু। দর্শকের আসনে বসে সেই নাটক দেখছিলেন রামানন্দ সাগর। রেণুর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পরে রেণুর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তিনি চমকে গিয়েছিলেন। এত কম বয়সে মায়ের চরিত্রে রেণুর বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় নজর কেড়েছিল রামানন্দের।
‘রামায়ণ’ নিয়ে একটি ধারাবাহিক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন রামানন্দ। সেই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য রেণুকে নিজের বাড়িতে অডিশন দিতে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এই সুযোগ হাতছা়ড়া করতে চাননি রেণু। রামানন্দের কথামতো একরাশ স্বপ্ন নিয়ে তাঁর বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে রেণু জানিয়েছিলেন, রামানন্দ নাকি রেণুকে রাক্ষসীর মতো হেসে দেখাতে বলেছিলেন। টেলি প্রযোজকের কথামতো জোরে জোরে হেসেছিলেন রেণু। তার পরেই ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে শূর্পণখার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রেণুকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন রামানন্দ।
৭৮ পর্বের ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে মাত্র চারটি পর্বে অভিনয় দেখা গিয়েছিল রেণুর। গুজরাতের একটি গ্রামে দু’মাস ধরে শুটিং হয়েছিল তাঁর। কানাঘুষো শোনা যায় যে, এই চারটি পর্বে অভিনয়ের জন্য নাকি ৩০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন রেণু।
শূর্পণখার চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছিলেন রেণু। এক সাক্ষাৎকারে রেণু বলেছিলেন, ‘‘শূর্পণখার চরিত্রে অভিনয়ের পর আমার জীবন বদলে গিয়েছিল। রাস্তাঘাটে সকলেই আমায় দেখে চিনতে পারতেন।’’ ‘রামায়ণ’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের পর প্রচুর প্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলেন রেণু।
বিআর চোপড়ার ‘চুন্নি’ নামের একটি টেলি সিরিজ়ে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন রেণু। আশির দশকে বড় পর্দায় অভিনয় করতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
১৯৮৯ সালে সুরিন্দর সিংহের পরিচালনায় ‘মারহি দা দীবা’ নামের পঞ্জাবি ভাষার একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। রাজ বব্বর এবং দীপ্তি নাভালের পাশাপাশি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রেণু।
১৯৯২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিল আশনা হ্যায়’। এই ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয়েছিল বলি অভিনেত্রী হেমা মালিনীর। শাহরুখ খান, দিব্যা ভারতী, জীতেন্দ্র, মিঠুন চক্রবর্তী, অমৃতা সিংহ, ডিম্পল কপাডিয়ার মতো নামকরা তারকারা এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এই ছবিতে শাহরুখের বোনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল রেণুকে।
তবে বেশি দিন অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না রেণু। অভিনয় থেকে দূরে সরে গিয়ে রাজনীতির দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মুম্বই প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। পরে অবশ্য রাজনীতি থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন রেণু।
এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন রেণু। তাঁর স্বামী অবশ্য অভিনয়জগতের কেউ নন। আবাসনের ব্যবসা রয়েছে রেণুর স্বামীর। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গেই তাঁর ব্যবসা সামলান রেণু। মহিলা এবং শিশু উন্নয়ন সংক্রান্ত অসরকারি দু’টি সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন ‘রামায়ণ’-এর শূর্পণখা।