Ancient termite Tunnel

মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান কোটি কোটি রহস্যময় মাটির ঢিবি! শুষ্ক কাঁটাঝোপের আড়ালে লুকিয়ে কাদের ‘নগরসভ্যতা’?

ব্রাজ়িলের আধা শুকনো মরুতে ২০ কোটি ঢিবি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে থাকা মাটির ঢিবিগুলিকে সাধারণ কোনও ভৌগোলিক কাঠামো বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। ঢিবিগুলিকে প্রথমে এলোমেলো স্তূপ বলে মনে করা হত। ২০১৮ সালে একটি ‘বায়োলজি জার্নালে’ প্রকাশিত নতুন উপগ্রহচিত্র সেই ধারণাকে বদলে দেয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৫ ১০:১১
Share:
০১ ১৪

প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো কাঠামো। একটা-আধটা নয়, মাইলের পর মাইল জুড়ে রহস্যময় ঢিবি ছড়িয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। পিরামিডের মতো ঢিবিগুলি যে পরিমাণ জায়গা নিয়ে রয়েছে, সেটি আয়তনে ব্রিটেনের সমান। উত্তর-পূর্ব ব্রাজ়িলের কাটিঙ্গা অঞ্চলে দেখা মেলে অদ্ভুত তিনকোনা শুকনো মাটির কোটি কোটি ঢিবির।

০২ ১৪

একটি নির্দিষ্ট নকশায় তৈরি করা হয়েছে এই ঢিবিগুলি। ৩০ ফুট প্রশস্ত এবং ৬ থেকে ১৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মাটির কাঠামোগুলি মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান। একটির থেকে আর একটির দূরত্ব মোটামুটি ৬০ ফুট। শঙ্কু আকৃতির এই ঢিবিগুলি ৮৮ হাজার ৮০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই এলাকায় এই ধরনের মাটির ঢিবির সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।

Advertisement
০৩ ১৪

ব্রাজিলের কাঁটাযুক্ত ঝোপঝাড়ের মধ্যে পর্ণমোচী গাছ দিয়ে আবৃত একটি আধা শুষ্ক জমিতে ঢিবিগুলি লুকিয়ে ছিল। বিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য ও স্থানীয় পশুপালকেরা চারণভূমির জন্য জমি পরিষ্কার করার ফলে এগুলি আবিষ্কার হতে শুরু করে।

০৪ ১৪

ব্রাজিলের আধা শুকনো এই অঞ্চলে ২০ কোটি ঢিবি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। যুগের পর যুগ ধরে থাকা মাটির ঢিবিগুলিকে সাধারণ কোনও ভৌগোলিক কাঠামো বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। ঢিবিগুলিকে প্রথমে এলোমেলো স্তূপ বলে মনে করা হত। ২০১৮ সালে একটি ‘বায়োলজি জার্নালে’ প্রকাশিত নতুন উপগ্রহচিত্র সেই ধারণাকে বদলে দেয়।

০৫ ১৪

উপগ্রহচিত্রটির সঙ্গে গবেষণার ফলাফল মিলিয়ে দেখেন গবেষকেরা। জানা যায়, রহস্যময় এই কাঠামো তৈরিতে হাত রয়েছে এই পৃথিবীরই বাসিন্দাদের। প্রকৃতির ক্ষুদ্রতম ইঞ্জিনিয়ারদের জটিল বাস্তুতন্ত্র এটি। এই ঢিবিগুলির নীচে রয়েছে অত্যন্ত হিসাবনিকাশ ও সতর্কতার সঙ্গে তৈরি করা উইপোকাদের সংগঠিত ‘নগরসভ্যতা’ বা কলোনি।

০৬ ১৪

এই বিশাল কীর্তিটি ‘সিনটারমেস ডিরাস’ নামের এক বিশেষ প্রজাতির উইপোকার। ব্রাজিলের অধিবাসী এই কীটগুলি আকারে মাত্র আধ ইঞ্চি লম্বা। উইপোকারা ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের বিশাল ও বিস্তৃত এলাকা জুড়ে বাসগৃহ তৈরির জন্য সুপরিচিত। এই ঢিবিগুলি ‘মুরুন্ডাস’ নামে পরিচিত।

০৭ ১৪

অনেক প্রজাতির উইপোকা রয়েছে, যারা মাটির নীচে তৈরি করা কলোনির কামরাগুলিতে বায়ু চলাচলের জন্য এই টিলাগুলির উপরে বড় চিমনি তৈরি করে। কিছু আফ্রিকান প্রজাতির উইপোকার ক্ষেত্রে সেই টিলাগুলি ৩০ ফুট উঁচু হতে পারে।

০৮ ১৪

সিনটারমেস ডিরাস হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় উইপোকা। ব্রাজিলের অ্যামাজ়নের স্থানীয় উপজাতিরা প্রায়শই এগুলিকে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেন। বাকি সমস্ত উইপোকার মতো এই প্রজাতিও মাটির নীচে বাস করে। রাতে মরা পাতা খেয়ে জীবনধারণ করে এরা।

০৯ ১৪

বেশির ভাগ উইপোকার মতো এই প্রজাতির শ্রমিক ও সৈনিক উইপোকাও কার্যত অন্ধ। ফেরোমোনের সাহায্যে এরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে। তাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের ক্ষমতা দিয়ে বিপদ, খাবার, কম্পন শনাক্ত করে সিনটারমেস ডিরাসেরা। মাটির ঢিবি তৈরিতে এদের দক্ষতা চোখে পড়ার মতো। হাজার হাজার বছর ধরে ব্রাজ়িলের মাইলের পর মাইল জমিকে আবর্জনা দিয়ে সাজিয়ে ভাস্কর্যে পরিণত করেছে ক্ষুদ্র কীটগুলি। সেই ‘নগর’ উপগ্রহচিত্রে দৃশ্যমান।

১০ ১৪

সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফেইরা ডি সান্তানা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ঢিবিগুলির গঠন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, শ্রমিক উইপোকারা ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের বিশাল গোলকধাঁধা তৈরি করেছে। সেই কাজটির জন্য নীচের মাটি ভূপৃষ্ঠের উপরে ঠেলে তুলে বার করে দেয়। এই প্রক্রিয়াটি ধীর। তাই উইপোকারা হাজার হাজার বছর ধরে এই কাজটি করে আসছে।

১১ ১৪

এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলির উদ্দেশ্যই হল কঠোর ও রুক্ষ পরিবেশে মাটির নীচে একটি টেকসই পরিবেশ তৈরি করা। উইপোকারা যখন ভূপৃষ্ঠের নীচে সুড়ঙ্গ খোঁড়ে, তখন তারা মাটিকে উপরে ঠেলে দেয়। সেগুলিই স্থায়ী ঢিবি তৈরি করে যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রয়ে গিয়েছে।

১২ ১৪

সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান স্টিফেন মার্টিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই ঢিবিগুলি একটি একক উইপোকা প্রজাতির দ্বারা সৃষ্ট। এরা ভূগর্ভে বিশাল সুড়ঙ্গ খনন করেছিল যাতে তারা বন থেকে নিরাপদে এবং সরাসরি কাঠ ও পাতা খেতে পারে।

১৩ ১৪

বিজ্ঞানীরা ১১টি ঢিবি থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, ঢিবিগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি ৩ হাজার ৮২০ বছরের পুরনো। আবার বেশ কয়েকটি ৬৯০ বছর আগের তৈরি। ব্রাজ়িলে পাওয়া ঢিবিগুলির কিছু কিছু আফ্রিকায় অবস্থিত বিশ্বের প্রাচীনতম বলে পরিচিত উইপোকার ঢিবির বয়সের সমসাময়িক।

১৪ ১৪

২০ কোটি ঢিবি তৈরি করতে যে পরিমাণ মাটি খুঁড়েছে প্রাণীগুলি, তা দিয়ে ৪ হাজারটি গিজ়ার পিরামিড তৈরি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, কোনও একক প্রজাতির দ্বারা তৈরি বাস্তুতন্ত্রের কাঠামোর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ এই ঢিবিগুলি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement