Church of Bones

কোথাও রয়েছে হাজার হাজার কঙ্কাল, কোথাও আবার খুলি দিয়ে সাজানো, ‘পবিত্র’ গির্জার নেপথ্যকাহিনি কী?

‘হাড়ের গির্জা’ নামে অধিক পরিচিত এই গির্জা। কিন্তু গির্জার মধ্যে হাজার হাজার হাড়ের টুকরো এল কোথা থেকে? এই গির্জার নেপথ্যকাহিনিই বা কী?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫২
Share:
০১ ১৬

মোমবাতি কোথায়! গির্জার চতুর্দিক কঙ্কালে মোড়া। কোথাও দেখা যাচ্ছে সারি সারি খুলি, আবার কোথাও নানা রকম হাড় দিয়ে সাজানো। ‘হাড়ের গির্জা’ নামে অধিক পরিচিত এই গির্জা। কিন্তু গির্জার মধ্যে হাজার হাজার হাড়ের টুকরো এল কোথা থেকে? এই গির্জার নেপথ্যকাহিনিই বা কী?

০২ ১৬

মধ্য ইউরোপের চেক রিপাবলিকের কাছে কুটনা হোরা এলাকার সেডলেকে অবস্থিত সেডলেক ওসুয়ারি। রোমান ক্যাথলিক চ্যাপেলটি ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার হাড়ের টুকরো দিয়ে সাজানো।

Advertisement
০৩ ১৬

মানবদেহের কঙ্কালের খুলি, হাড়ের টুকরো দিয়ে সেডলেক ওসুয়ারির চতুর্দিক সাজানো। কঙ্কালের সাজে মোড়া এই গির্জাটি ১৯৯৫ সালে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ইমারতের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলে।

০৪ ১৬

প্রতি বছর দু’লক্ষেরও বেশি পর্যটক ঘুরতে যান সেডলেক ওসুয়ারিতে। কঙ্কালের সাজ দেখে ভয় পাওয়ার পাশাপাশি মুগ্ধও হয়ে পড়েন পর্যটকেরা। তবে এত কঙ্কাল, এত খুলি কোথা থেকে এল এই গির্জায়?

০৫ ১৬

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১২৭৮ সালে সেডলেকের সিস্টারসিয়ান মঠের অ্যাবট হেনরিকে জেরুসালেমে পাঠান বোহেমিয়ার তৎকালীন সম্রাট দ্বিতীয় অটোকার।

০৬ ১৬

বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের চারটি গসপেল অনুযায়ী, জেরুসালেম নগরপ্রাচীরের বাইরে গলগোথা পাহাড়ের শীর্ষে যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। সে জায়গার মাটিকে খ্রিস্টানরা পবিত্র বলে গণ্য করেন।

০৭ ১৬

কথিত, গলগোথা থেকে একটি কৌটোয় মাটি ভরে নিয়ে সেডলেকে ফেরেন হেনরি এবং সেডলেক মঠের কাছে অবস্থিত কবরস্থানে সে মাটি ছড়িয়ে দেন। এই কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় সেডলেকের কবরস্থানকেই সেই সময় মধ্য ইউরোপের পবিত্র কবরস্থান হিসাবে মনে করা হতে থাকে।

০৮ ১৬

চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্য ইউরোপে প্লেগ মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা যান। শোনা যায়, সে সময় সেডলেক কবরস্থানে ৩০ হাজার মৃতদেহ কবরস্থ হয়েছিল।

০৯ ১৬

পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে রোমান ক্যাথলিকদের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণকারী হাসাইটের যুদ্ধ হয়। এই সময় বহু যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছিলেন। শোনা যায়, যুদ্ধের পর প্রায় ১০ হাজার মৃতদেহ সেডলেক কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়েছিল। হাসাইটরা চেক দার্শনিক ও ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ জন হাস (আনুমানিক ১৩৬৯-১৪১৫ খ্রিস্টাব্দ)-এর ভাবনার দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। অনেকের মতে, হাসই সর্বপ্রথম ক্যাথলিক ধর্মের সংস্কার দাবি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে পোপতন্ত্রের আদেশে পুড়িয়ে মারা হয়। হাসের মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীদের দমন করতে পোপতন্ত্র পবিত্র রোমান সম্রাট ও ইউরোপের রাজন্যবর্গকে নির্দেশ দিলে বোহেমিয়া অঞ্চলে ১৪১৪ থেকে ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ যুদ্ধ চলে। বিপুল রক্তপাতের পর হাসাইটদের দমন করতে সক্ষম হয় ক্যাথলিক চার্চ।

১০ ১৬

কিন্তু সেডলেক কবরস্থানে এত মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছিল যে, নতুন ভাবে কবর দেওয়ার জন্য আর কোনও ফাঁকা জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। তাই ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে মাটি খুঁড়ে অবশিষ্ট কঙ্কালগুলি বার করার নির্দেশ দেওয়া হয় কবরস্থানের রক্ষীদের।

১১ ১৬

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, সেডলেক কবরস্থানের মাঝে গথিক ধাঁচে একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, এই গির্জার তলায় কবর থেকে খুঁড়ে পাওয়া কঙ্কালগুলি জমিয়ে রাখা হয়।

১২ ১৬

১৭০৩ সাল থেকে ১৭১০ সাল পর্যন্ত চেক স্থপতি জান সানটিনি আইকেল গির্জার আপার চ্যাপেলটি আবার নতুন করে তৈরি করেন। তার পর ১৮৭০ সালে সম্পূর্ণ গির্জাটি নতুন রূপ ধারণ করে।

১৩ ১৬

কাঠখোদাই শিল্পী হিসাবে অষ্টাদশ শতকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ফ্রান্টিসেক রিন্ট। তিনিই গির্জার তলায় জমানো হাড়গুলির উপর কারুকাজ করে তা দিয়ে সেডলেকের গির্জাটিকে তিনি সাজিয়ে তোলেন।

১৪ ১৬

সেডলেক গির্জার ঠিক মাঝখানে একটি ঝাড়বাতি রয়েছে, যা সম্পূর্ণ হাড় দিয়ে তৈরি। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের অন্তত একটি হাড় দিয়ে ঝাড়বাতিটি তৈরি করা হয়।

১৫ ১৬

শুধুমাত্র হাড় দিয়েই নয়, সেডলেক গির্জা যত্রতত্র সাজানো হয়েছে খুলি দিয়ে। এই খুলির ভিতর মোমবাতি রেখে সেগুলি জ্বালানো হয়। স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল ৯টায় এই গির্জার দরজা পর্যটকদের জন্য খোলা হয়। আবার সন্ধ্যার আগেই গির্জার দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

১৬ ১৬

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, চেক রিপাবলিকের গির্জাটি নাকি ‘ভূতুড়ে’। তবে, এর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসলে কঙ্কাল এবং খুলি দিয়ে তৈরি বলেই কেউ কেউ এই গির্জায় যেতে ভয় পান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement