চার বছর পর ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছে ভারত। কোহলি-রোহিতোত্তর তরুণ ভারতকে নেতৃত্ব দেবেন শুভমন গিল। ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে ফেলেছে ভারত। শুক্রবার থেকে শুরু হবে টেস্ট সিরিজ়।
এর আগে ভারত ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলতে গিয়েছিল ২০২১ সালে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে পাঁচটি টেস্ট খেলে ভারত। কাদের পক্ষে গিয়েছিল সেই সিরিজ়? কেমন খেলেছিল ভারতীয় দল?
প্রথম টেস্ট খেলা হয়েছিল ৪ অগস্ট, নটিংহ্যামে। বুমরাহ-শামিদের দৌলতে মাত্র ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংরেজদের প্রথম ইনিংস। অধিনায়ক জো রুটের ৬৪ রান ছাড়া বলার মতো স্কোর ছিল না কারও।
ব্যাট করতে নেমে লোকেশ রাহুল-রবীন্দ্র জাডেজার ব্যাটে ভর করে ২৭৮ রান তোলে ভারত। এগিয়ে যায় ৯৫ রানে। ৩৬ রান করেন রোহিত শর্মা। মাত্র এক বল খেলে আউট হন বিরাট।
দ্বিতীয় ইনিংসেও বুমরাহদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান রুট। ১০৯ রান করেন ইংরেজ অধিনায়ক। তিনি ছাড়া কেউই ভারতের পেস আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। পাঁচ উইকেট নেন বুমরাহ।
২০৯ রানের লক্ষ্য সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৪ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় ভারত। রাহুলের উইকেট খুইয়ে ওই সময়ে ৫২ রান তোলেন রোহিতেরা। ড্র হয় প্রথম টেস্ট। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন ইংরেজ অধিনায়ক জো রুট।
১২ অগস্ট লর্ডসে দ্বিতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় দুই দল। রোহিত-রাহুল ওপেনিং জুটিতে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩৬৪ রান তোলে ভারত। ১২৯ করেন রাহুল, রোহিত করেন ৮৩ রান। ৪২ রান করেন বিরাট কোহলি।
জবাবে আবার ‘কথা বলতে শুরু করে’ জো রুটের ব্যাট। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৮০ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। মূলত তাঁর ব্যাটে ভর করেই ৩৯১ রান তোলে ইংল্যান্ড। জনি বেয়রস্টো করেন ৫৭ রান। চার উইকেট নেন মহম্মদ সিরাজ।
২৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত। রাহানে-পুজারা মোটামুটি রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসের চমক ছিলেন শামি-বুমরা। নবম উইকেটে অপরাজিত ৮৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তাঁরা। ৫৬ রান করেন মহম্মদ শামি। বুমরাহ করেন ৩৪ রান।
২৭২ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। সিরাজ-বুমরাহদের দাপটে মাত্র ১২০ রান করতে পারে তারা। ১৫১ রানে জিতে সিরিজ়ে এগিয়ে যায় ভারত। ম্যাচের সেরা হন লোকেশ রাহুল।
লিডসে তৃতীয় টেস্টে অসাধারণ কামব্যাক করে ইংল্যান্ড। মাত্র ৭৮ রানে শেষ হয় ভারতের প্রথম ইনিংস। অ্যান্ডারসনদের সামনে মাত্র দু’জন দু’অঙ্কের স্কোর করেন। তিন জন করেন শূন্য।
ব্যাট হাতেও চমক দেখায় ইংরেজ বাহিনী। রুটের শতরানে ৪৩২ রানে থামে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। চার উইকেট নেন মহম্মদ শামি।
৩৫৪ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে রানের চাপেই হেরে যায় ভারত। পুজারা-রোহিত-কোহলিরা চেষ্টা করলেও ২৭৮ রানে শেষ হয় ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে এক ইনিংস ও ৭৬ রানে হারে ভারত। সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন ওলি রবিনসন।
ওভালে ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় চতুর্থ টেস্ট। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ওকস-রবিনসনদের সামনে সে ভাবে মাথা তুলতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটিং। কোহলির ৫০ আর শার্দুল ঠাকুরের ৩৬ বলে ৫৭ রানের সুবাদে ১৯১ রান করে ভারত।
জবাবে পোপ-ওকসের ব্যাটে ভর করে ২৯০ রান তোলে ইংল্যান্ড। তিন উইকেট নেন উমেশ যাদব। দু’টি করে উইকেট নেন বুমরাহ-জাডেজা।
প্রায় ১০০ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে ভারত। সেঞ্চুরি করেন রোহিত শর্মা। অর্ধশতরান করেন পুজারা, শার্দুল এবং পন্থ। ৪৬৬ রানে শেষ হয় ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস।
৩৬৮ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। রোরি বার্নস এবং হাসিব হামিদ, অর্ধশতরান করেন দু’জনেই। কিন্তু ওই দু’জন ছাড়া আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ২১০ রানে। ১৫৭ রানে টেস্ট জেতে ভারত। উমেশ যাদব তিন উইকেট নেন। সিরাজ বাদে বাকি তিন বোলার দু’টি করে উইকেট নেন।
সিরিজ় বাঁচাতে বার্মিংহ্যামে নামে ইংল্যান্ড। দু’পক্ষই দলে একাধিক পরিবর্তন করে। প্রথম ইনিংসে পন্থ-জাডেজার শতরানে ভর করে ৪১৬ রান করে ভারত। পাঁচ উইকেট নেন জেমস অ্যান্ডারসন।
ব্যাট করতে নেমে সিরাজ-বুমরাহদের দাপটে ২৮৪ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। শতরান করে ইংরেজদের মুখরক্ষা করেন জনি বেয়ারস্টো।
দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য খুব ভাল ব্যাট করতে পারেনি ভারত। পন্থ, পুজারা অর্ধশতরান করলেও ২৪৫ রানে আটকে যায় ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ৪ উইকেট নেন ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস।
৩৭৮ রানের লক্ষ্য মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে সিরাজ-বুমরাহদের নিয়ে ছেলেখেলা করে ইংল্যান্ড। অপরাজিত ১৪২ রান করেন জো রুট, জনি বেয়ারস্টো অপরাজিত থেকে যান ১১৪ রানে। মাত্র ৭৬ ওভারে বিশাল স্কোর তুলে ফেলে ইংল্যান্ড।
বার্মিংহ্যামে ইংল্যান্ড জেতায় ২-২ ফলে অমীমাংসিত থেকে যায় সিরিজ়। প্রায় চার বছর পর আবার ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছে ভারত। অধিনায়ক নতুন, দলও তরুণ। নতুন ভারত ইংরেজদের বিরুদ্ধে কেমন খেলে সে দিকেই থাকবে নজর।