Joshimath

অতীতের ভূমিধসের উপর তৈরি হয়েছিল জোশীমঠ! তাই কি বার বার বিপর্যয়?

জোশীমঠে বার বার হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বার বার নেমেছে ভূমিধস। সেই অতীত থেকে। কেন এ রকম হয় প্রাচীন এই জনপদে? কী সেই কারণ?

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
দেহরাদূন শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১২
Share:
০১ ২০

গাড়োয়াল হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক জনপদ জোশীমঠ। ধউলিগঙ্গা এবং অলকানন্দার সঙ্গমস্থল বিষ্ণুপ্রয়াগ এই স্থান থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। কথিত আছে, আগে জয়ত্রীমঠ নামে পরিচিত ছিল জোশীমঠ। আদি গুরু শ্রী শংকরাচার্য‌ এই অঞ্চলে চারটি মঠের সন্ধান পেয়েছিলেন। সেই থেকে এই জায়গার নাম হয় জয়ত্রীমঠ। বর্তমানে উত্তরাখণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটককেন্দ্র এই জোশীমঠ। যা এখন আতঙ্কের প্রহর গুনছে।

০২ ২০

উত্তরাখণ্ডের বহু পর্যটকস্থলে যাওয়া যায় জোশীমঠ হয়ে। জোশীমঠ থেকে মাত্র ৪৬ কিলোমিটার দূরে বদ্রিনাথ। শীতকালে যখন বদ্রিনাথে মন্দিরের দ্বার বন্ধ হয়ে যায়, তখন বদ্রিবিশাল পূজিত হন জোশীমঠের বাসুদেব মন্দিরে।

Advertisement
০৩ ২০

জোশীমঠ থেকে ট্রেক করে যাওয়া যায় নন্দাদেবী ন্যাশনাল পার্ক। ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স’ নামেও যা পরিচিত। গাড়োয়াল হিমালয়ের প্রবেশদ্বার বলা হয় জোশীমঠকে। দয়রা বুগিয়াল, চন্দ্রভাগা লেক, তপোবন, বিষ্ণুপ্রয়াগের, কিংবা হেমকুণ্ডের মতো স্থানে পায়ে হেঁটে যেতে হলে এক রাত কাটাতে হয় জোশীমঠে। উত্তরাখণ্ডের ২,৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত জনপ্রিয় হিল স্টেশন জোশীমঠ। যে জোশীমঠের বহু বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। ভয়ে এলাকা ছাড়ছেন বহু বাসিন্দা।

০৪ ২০

জোশীমঠে বার বার হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বার বার নেমেছে ভূমিধস। সেই অতীত থেকে। কেন এ রকম হয় প্রাচীন এই জনপদে? কী সেই কারণ?

০৫ ২০

সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, জোশীমঠে অন্তত ৫৬১টি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। কিছু জায়গায় মাটির ফাটল থেকে উঠে আসছে জল। ইতিমধ্যে পর্যটকদের জন্য বন্ধ করা হয়েছে এশিয়ার দীর্ঘতম রোপওয়ে।

০৬ ২০

দু’টি হোটেল পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। ৬৬টি পরিবার ঘরছাড়া। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন বহু মানুষ। কিন্তু প্রাচীন এই শহরের কেন হঠাৎ এই অবস্থা?

০৭ ২০

ভূবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর নেপথ্যে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, ‘পুরনো ভূমিধ্বসের উপর’ তৈরি হয়েছিল শহর। সে কারণেই বিপদ এসেছে বার বার।

০৮ ২০

সোমবার মাঝরাতে ফের মাটির নীচে থেকে কিছু শব্দ শুনতে পান জোশীমঠের কিছু অংশের বাসিন্দারা। তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। বুধবার অনেক পরিবারই নিরাপদ স্থানে সরে যায়। বৃহস্পতিবার ফের শহরের কিছু অংশের মাটি ফেটে জল উঠে আসতে দেখা যায়।

০৯ ২০

বুধবার পথে নামেন শহরবাসী। সরকারের সামনে দাবি রাখেন, শহরে সব রকম নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হোক। শহরবাসীদের একাংশের দাবি, ‘পুরনো ভূমিধ্বসের উপর’ তৈরি হয়েছিল বলেই এক দিন নিশ্চিহ্ন হবে শহর।

১০ ২০

শহরবাসীকে শান্ত করতে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞানীদের একটি দল তৈরি করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। তারা যে সব এলাকা এবং বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে, সে সব পরিদর্শন করে দেখবে।

১১ ২০

জোশীমঠ পুরসভার চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘প্রতি মুহূর্তে ফাটল বাড়ছে। এটাই উদ্বেগের বিষয়।’’

১২ ২০

জোশীমঠে এই ফাটল প্রথম লক্ষ করা গিয়েছিল ২০২১ সালে। চামোলিতে হড়পা বানে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তখনই জোশীমঠের বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। অনেকেই সে সময় কাঠের খুঁটি দিয়ে বাড়িতে ঠেকনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

১৩ ২০

জোশীমঠের বিভিন্ন বাড়িতে ফাটলের কারণ জানতে ২০২২ সালেও একটি কমিটি তৈরি করেছিল উত্তরাখণ্ড সরকার। সেই কমিটি জানিয়েছিল, জোশীমঠ ক্রমেই ‘বসে যাচ্ছে’। এর জন্য মানুষ এবং প্রকৃতি উভয়ই দায়ী।

১৪ ২০

২০২২ সালের ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, শহরের অন্তত ৫০০ বাড়িতে ফাটল ধরেছে। গান্ধীনগরে অন্তত ৪০ পরিবার ‘বিপজ্জনক’ বাড়িতে বাস করছে।

১৫ ২০

কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)-এর প্রধান বিজ্ঞানী ডিপি কানুনগো জানিয়েছেন, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালে চামোলি-জোশীমঠে ১২৮টি ভূমিধস হয়েছে।

১৬ ২০

চার ধাম সড়ক প্রকল্পের হাই পাওয়ার কমিটি (এইচপিসি)-র প্রাক্তন প্রধান রবি চোপড়া মনে করেন, জোশীমঠের বার বার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হল, পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি এবং রাস্তার জন্য পাহাড়ের ধাপ কাটা।

১৭ ২০

এ রকম যে হতে পারে, ৫০ বছর আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিটি উত্তরাখণ্ড নিয়ে সতর্ক করে কিছু সুপারিশ করেছিল। রিপোর্টে জানিয়েছিল, ‘‘সড়ক মেরামতি বা অন্য নির্মাণ কাজের জন্য বোল্ডার খনন করে সরানো উচিত নয়। পাহাড়ের ধারে বিস্ফোরণ ঘটানোও অনুচিত। আর গাছকে শিশুর মতো লালনপালন করা উচিত।’’

১৮ ২০

তৎকালীন উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়ালের কমিশনার এমসি মিশ্রের নির্দেশে সেই কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। কমিটিতে ছিলেন ১৮ জন। সেনা, আইটিবিপি, শ্রী কেদারনাথ-বদ্রিনাথ মন্দির কমিটির সদস্যরাও ছিলেন কমিটিতে। ১৯৭৬ সালের ১০ থেকে ১৫ মে জোশীমঠ-সহ গাড়োয়ালে ভূমি পরিদর্শন করে সেই কমিটি।

১৯ ২০

পরিদর্শনের পরেই রিপোর্ট দিয়ে মিশ্র কমিটি বলে, ‘‘অতীতের ভূমিধসের উপর তৈরি হয়েছে জোশীমঠ।’’ কমিটি সুপারিশ করে, প্রাচীন ওই শহরে বেশি নির্মাণকাজ চালানো ঠিক নয়।

২০ ২০

সেই সতর্কবাণী না মেনে উত্তরাখণ্ড ফল ভুগেছিল ২০১৩ সালে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৬ হাজার জনেরও বেশি মানুষ। সেই ফল ভুগেছিল জোশীমঠও। তার পর মাথা তুলে দাঁড়ালেও ক্ষত আর সেরে ওঠেনি। বার বার জানান দিয়েছে সেই ক্ষত। তার থেকে রক্তপাত এখনও অব্যাহত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement