বুধবার পণ্য পরিষেবা করের (জিএসটি) কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। ৩ সেপ্টেম্বরের দীর্ঘমেয়াদি বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ নতুন জিএসটি হার ঘোষণা করেন। আমজনতার সুবিধার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিল জিএসটি কাউন্সিলকে। বৈঠকে তা অনুমোদন করেছে কাউন্সিল।
আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন জিএসটি হার কার্যকর করা হবে। যে সব পণ্যের কর কাটছাঁট করা হয়েছে সেই তালিকায় রয়েছে ছোট গাড়ি। অর্থাৎ, পুজোর আগে যাঁরা নতুন বাহন কেনার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য ‘বোনাস’-এর ব্যবস্থা করলেন অর্থমন্ত্রী।
টিভি, এসি, ছোট গাড়ি, ৩৫০ সিসি-র নীচে বাইকের দাম কমার কথা ঘোষণা করেছে জিএসটি কাউন্সিল। এখন থেকে এই পণ্যগুলিতে ২৮ শতাংশের বদলে ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হবে। তবে বিলাসবহুল গাড়ির দিকে হাত বাড়ালে গ্যাঁটের কড়ি বেশি খরচ করতে হবে নতুন জিএসটি কাঠামোয়।
এক ধাক্কায় অনেকটাই কমতে পারে ছোট গাড়ির দাম। ভারতীয় গাড়ির বাজারের মেরুদণ্ড হিসাবে ধরা হয় ছোট গাড়িগুলিকে। গত কয়েক বছর ধরেই গাড়ি বিক্রিতে ভাটার টান। সারা বছর ব্যবসা যতই মন্দা হোক, উৎসবের মরসুমে বরাবর বিক্রি বাড়তে দেখেছে গাড়িশিল্প। সেই প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে কয়েক বছরের পরিসংখ্যান। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যানে প্রকাশিত, লাখ লাখ গাড়ি মজুত হয়ে পড়েছিল শোরুমেই। মূলত গাড়ির দাম বৃদ্ধির কারণেই ছোট গাড়ির চাহিদা ঝিমিয়ে পড়েছে।
চলতি করকাঠামোয় ১২০০ সিসির ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন এবং ৪ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের ছোট পেট্রল, এলপিজি ও সিএনজি গাড়িগুলিতে বর্তমানে ২৮ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য ছিল। এ ছাড়াও ১ শতাংশ সেস মিলিয়ে মোট ২৯ শতাংশ কর দিতে হত ক্রেতাকে।
১৫০০ সিসি বা তার কম ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৪ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের ছোট ডিজ়েল গাড়িগুলিতে ২৮ শতাংশ জিএসটি এবং ৩ শতাংশ সেস বসানো হত। মোট করের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াত ৩১ শতাংশে।
নতুন কাঠামোয় সোজাসুজি ১০ শতাংশ কমে গিয়ে মোট ১৮ শতাংশ কর দিতে হবে এই দুই শ্রেণির গাড়িকে। এর ফলে ছোট গাড়ির বাজার আবার চাঙ্গা হতে চলেছে বলে আশাবাদী গাড়িবিক্রেতা সংস্থাগুলি। করব্যবস্থার সরলীকরণ নতুন করে শোরুমমুখী করতে পারে ক্রেতাদের। দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন গাড়ির দাম এক ধাপে কতটা দাম কমল।
ভারতের সবচেয়ে সাশ্রয়ী গাড়ি বলে ধরা হয় মারুতি-সুজ়ুকিকে। এই ব্র্যান্ডের বহুলবিক্রিত একটি মডেল হল মারুতি সুজ়ুকি অল্টো কে-১০। পেট্রল ইঞ্জিনের হ্যাচব্যাকের মধ্যে এই বিশেষ মডেলটির চাহিদা রয়েছে ভারত জুড়ে। ব্যক্তিগত এবং ট্যাক্সি পরিষেবা উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় অল্টোকে। পুনর্গঠিত জিএসটি-র ফলে অল্টো কে১০-এর দাম কমবে। এর দাম ৪.২৩ লক্ষ টাকা (এক্স-শোরুম) থেকে কমে প্রায় ৩.৮১ লক্ষ টাকা (এক্স-শোরুম) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে হুন্ডাই। ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার জনপ্রিয় মডেলগুলির মধ্যে একটি হল আই-টেন নিয়ো। গাড়িপ্রেমীদের মনে আই-টেন নিয়োস বেশ ভালই সাড়া ফেলেছে। ১.২-লিটার ইঞ্জিনচালিত ছোট হ্যাচব্যাকটির দাম ৫.৯৮ লক্ষ টাকা (এক্স-শোরুম)। সেই দাম ৫.৫১ লক্ষ টাকায় (এক্স-শোরুম) নেমে আসতে পারে বলে ধারণা গাড়িবিক্রেতাদের।
কম দামে হ্যাচব্যাক ও সেডান গাড়ির চাবি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে জনপ্রিয় সুইফ্ট ও ডিজ়ায়ার গাড়ি দু’টির দৈর্ঘ্য কমিয়ে চার মিটারের চেয়ে ছোট করেছিল মারুতি-সুজ়ুকি। চার মিটারের চেয়ে ছোট ‘কমপ্যাক্ট’ গাড়ি তৈরিতে জোর দিয়েছিল সংস্থাটি। প্রথম বার গাড়ি কিনছেন এমন ক্রেতাদের সিংহভাগেরই পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে গাড়ি দু’টি। পরবর্তী কালে একই পথে হাঁটে হোন্ডা, টাটা মোটরস, হুন্ডাই, ফোর্ডের মতো সংস্থা।
এই জনপ্রিয় গাড়িটির উপর নতুন হারে ১৮ শতাংশ জিএসটি প্রযোজ্য হলে গাড়িগুলির দাম প্রায় ৬০,০০০ টাকা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজ়ায়ারের এক্স শোরুম দাম প্রায় ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা। সেই দাম কমে ৬ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার আশপাশে নেমে আসতে পারে। সুইফ্টের দাম কমে ৬ লক্ষ টাকায় নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধ্যের মধ্যে টেকসই গাড়ি কেনার পছন্দের তালিকায় রয়েছে টাটার নাম। নিরাপদ এবং চালকের জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক বলে পরিচিতি রয়েছে টাটার গাড়ির। ১.২ লিটার মাল্টি ড্রাইভ পেট্রল ইঞ্জিন, ১.০৫ লিটার ডিজ়েল ইঞ্জিন। মাইলেজ় প্রায় ৪০ কিমি। টাটার টিয়াগো গাড়িটি আত্মপ্রকাশ করেছিল ২০১৬ সালে।
পেট্রল এবং পেট্রল-সিএনজি, উভয় বৈশিষ্ট্যেই পাওয়া যায় টিয়াগো। গাড়িটির প্রারম্ভিক মডেলের দাম (এক্স শোরুম) ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। জিএসটি কমার ফলে ৫০ হাজার টাকা দাম কমতে পারে গাড়িটির। ৫.১৫ লক্ষের কাছাকাছি দাম হতে পারে গাড়িটির।
মারুতি-সুজ়ুকি অল্টো কে-১০-এর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী, ফরাসি সংস্থার একমাত্র হ্যাচব্যাক রেনঁ–এর কিউইড। জিএসটি হারের পরিবর্তনের সঙ্গে এর দাম আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা হ্রাস পেতে পারে। ১.০-লিটার ইঞ্জিন দ্বারা চালিত আর একটি সাশ্রয়ী মূল্যের মারুতি হ্যাচব্যাকের দাম কমবে। জিএসটি হার পরিবর্তনের ফলে ৪.২৬ লক্ষ মূল্যের গাড়িটির দাম এখন ৩.৮৩ লক্ষ টাকা হতে পারে।
এসইউভির ক্ষেত্রে করকাঠামো ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। ১,৫০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ৪ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এসইউভিগুলিতে ২৮% জিএসটি এবং ২২% সেস-সহ ৫০% হারে কর নেওয়া হত। সেস তুলে দিয়ে সরাসরি ৪০ শতাংশ করের আওতায় আনা হচ্ছে এসইউভিকে। সে ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর কমার ফলে এই গাড়িগুলিরও দাম কমার আশায় বুক বাঁধছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক বিক্রিত এসইউভিগুলির মধ্যে একটি হল টাটা নিক্সন। গাড়িটির বেস মডেলের দাম আনুমানিক ৮০ হাজার টাকা কমতে পারে। ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় এসইউভি হুন্ডাই ক্রেটার উপর ৪৩ শতাংশ কর ধার্য ছিল। তিন শতাংশ কর কমার ফলে কিছুটা হলেও দাম কমতে পারে গাড়িটির।
একই ভাবে নতুন করের আওতায় আসার ফলে মাহিন্দ্রার স্করপিও ও থর নামের দু’টি এসইউভির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে দাম কমার আশা রয়েছে। স্করপিও ও থরের বিভিন্ন মডেলের জন্য ২৮ শতাংশ জিএসটি এবং ২২ শতাংশ সেস ধার্য করা হত। এখন ৪০ শতাংশ কর চাপবে।