বিয়ের আগে অন্য এক জনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক। পরিবারের চাপে পড়ে অন্য পাত্রের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হওয়া। সেই বিয়ে মানতে না পেরে প্রেমিকের সঙ্গে যুক্তি করে স্বামীকে পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা। ইনদওরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী খুনের মামলায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে।
মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমা সারতে গিয়ে ‘ভাড়াটে খুনি’ ব্যবহার করে প্রেমের পথের কাঁটা দূর করতে চেয়েছিলেন রাজার স্ত্রী সোনম রঘুবংশী। পুলিশ সূত্রে খবর, স্বামী রাজা রঘুবংশীকে খুন করার জন্য ‘ভাড়াটে খুনি’দের ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলেন সোনম।
মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগে ১৭ দিন পর গ্রেফতার হয়েছেন সোনম। ২০ মে নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমায় যান। আগে থেকে সব পরিকল্পনা করাই ছিল। পরিকল্পনামাফিক ২৩ মে স্বামী রাজাকে খুন করান তিনি। তার পর গা-ঢাকা দেন নিজেও।
রাজা-হত্যায় জড়িত সন্দেহে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে এক জন এবং ইনদওর থেকে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেছে মেঘালয় পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উঠে এসেছে, সোনম এবং তাঁর চর্চিত ‘প্রেমিক’ রাজ সিংহ কুশওয়াহা ছাড়া বাকি যে তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরাই ওই ‘ভাড়াটে খুনি’।
মাস তিনেক আগে ঘটে যাওয়া আরও একটি খুনের ঘটনার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে এই ‘মেঘালয় মার্ডার’। উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলার ঘটনা। বিয়ের মাত্র দু’সপ্তাহের মাথায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে খুন করিয়েছিলেন প্রগতি যাদব নামের এক সদ্যবিবাহিতা তরুণী।
প্রেমিক থাকা সত্ত্বেও দিলীপ চৌধরি নামের এক যুবকের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন পরিজনেরা। প্রেমিকের সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় প্রগতির। ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দিলীপ। শেষমেশ দিলীপকে খুনের জন্য খুনি ‘ভাড়া’ করেন প্রগতি ও তাঁর প্রেমিক অনুরাগ যাদব। গুলি করে খুন করা হয় প্রগতির স্বামী দিলীপকে।
২৫ বছর বয়সি দিলীপের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল প্রগতির। এই বিয়ে নিয়ে একেবারেই খুশি ছিলেন না ২২ বছরের তরুণী। বিয়ের আগে অনুরাগের সঙ্গে চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রগতির। কিন্তু সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি প্রগতির পরিবার। ২০২৫ সালের ৫ মার্চ দিলীপের সঙ্গে এক প্রকার জোর করেই মেয়ের বিয়ে দেন তাঁরা।
দিলীপের সঙ্গে বিয়ের মাত্র ১৫ দিন পেরিয়েছিল প্রগতির। তবে সোনমের মতো মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেননি তাঁরা। বিয়ের পর পরই প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর পরিকল্পনা করতে শুরু করে দেন প্রগতি। প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার আগে স্বামীকে শেষ করে দেওয়ার ছক কষেন প্রগতি ও তাঁর প্রেমিক।
১৯ মার্চ একটি গমের খেতে গুলিবিদ্ধ দিলীপের দেহ উদ্ধার হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়র হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয় আউরিয়ার হাসপাতালে। ২ দিন পর ২১ মার্চ মারা যান দিলীপ। ঘটনার পর দিলীপের ভাই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই মৃত্যুর তদন্তে নামে পুলিশ। ময়নাতদন্তে জানা যায় যে দিলীপের মাথায় পয়েন্ট ৩১৫ বোরের পিস্তল থেকে গুলি করা হয়েছে।
তদন্তের পর খুনের নেপথ্যে নাম উঠে আসে দিলীপের নববিবাহিতা স্ত্রী এবং তাঁর প্রেমিক অনুরাগের। পুলিশ জানতে পারে দিলীপকে খুনের জন্য খুনি ‘ভাড়া’ করেন ওই যুগল। দিলীপকে খুনের জন্য দু’জনে মিলে রামজি চৌধরি নামে এক জন ‘ভাড়াটে খুনি’কে ভাড়া করেছিলেন বলে জানা যায়। এ জন্য রামজিকে অগ্রিম দু’লক্ষ টাকাও দিয়েছিলেন তাঁরা।
পুলিশ খুনের অকুস্থলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রামজি ও তাঁর দুই সহযোগীকে শনাক্ত করে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে টাকা পাওয়ার পর, রামজি মিথ্যা অজুহাতে দিলীপকে গমের খেতে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মারধর শুরু করেন রামজির সহযোগীরা।
এর পরে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে লুটিয়ে পড়েন দিলীপ। দিলীপকে মৃত ভেবে তখনই সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ফেলে এলাকা ছেড়ে চম্পট দেন তাঁরা। সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে রামজি-সহ তিন অভিযুক্তকে শনাক্ত করে পুলিশ। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দু’টি পিস্তল, চারটি কার্তুজ, একটি বাইক, দু’টি মোবাইল ফোন, আধার কার্ড এবং নগদ তিন হাজার টাকাও।
মৃত দিলীপ ক্রেনচালকের কাজ করতেন। তবে বিয়ের পরেও প্রগতি তাঁর গ্রামেরই যুবক অনুরাগ ওরফে বাবলু ওরফে মনোজ যাদবের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিলেন। এর ফলে তাঁর এবং দিলীপের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত। প্রগতির পরিকল্পনা ছিল ধনী দিলীপের টাকাপয়সা আত্মসাৎ করে অনুরাগের সঙ্গে সংসার পাতার।
রাজা ও দিলীপ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে প্রধান যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল পরকীয়া। দুই ক্ষেত্রেই বিয়ের আগের সম্পর্কের জেরে সদ্যবিবাহিত স্বামীকে খুন করাতে দ্বিধাবোধ করেননি তাঁদের স্ত্রীরা। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে ‘ভাড়াটে খুনি’দের। আর খুনের পরিকল্পনা সফল করতে সাহায্য করেন তাঁদের প্রেমিকেরাই।
পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুন করার আরও একটি কাণ্ড গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সেটি হল মেরঠের সৌরভ রাজপুত হত্যাকাণ্ড। মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত সৌরভ রাজপুতকে খুন করেছিলেন তাঁর স্ত্রী মুস্কান রস্তোগী। খুনের পর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ড্রামে ভরে সিমেন্ট ঢেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ড্রামের মুখ। সেই খুনেও সহযোগী ছিলেন মুস্কানের প্রেমিক।