চলতি বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণ আজ, ৭ সেপ্টেম্বর। ভাদ্রপদ পূর্ণিমা তিথিতে হওয়া এই পূর্ণগ্রাস গ্রহণটি ভারতেও দৃশ্যমান। চন্দ্রগ্রহণকে জ্যোতির্বিদ্যার দিক থেকে একটি বিরল ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদ কুম্ভ রাশিতে প্রবেশ করেছে। সেখানে ছায়া গ্রহ রাহু ইতিমধ্যেই অবস্থান করছে। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, যখন চন্দ্র এবং রাহু একই রাশিতে অবস্থান করে, তখন এটি গ্রহণ যোগ তৈরি করে।
চাঁদ এবং সূর্যের ঠিক মাঝখানে পৃথিবী চলে এলে, তখন তার ছায়া পড়ে চাঁদে। সে সময় হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। ৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সময়ে রাত ১১টা থেকে ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ২২ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৮২ মিনিট সময় ধরে চলবে সেই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই সময়ে রাহু এবং চন্দ্র উভয়েই কুম্ভ রাশিতে অবস্থান করবে।
চন্দ্র দশা বা মহাদশা রয়েছে এবং চন্দ্র ষষ্ঠ, অষ্টম এবং দ্বাদশ স্থানে অবস্থিত, তাদের এই চন্দ্রগ্রহণ বেশি প্রভাবিত করবে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, বিশেষ করে কয়েকটি রাশির ক্ষেত্রে নেতিবাচক ফল দান করতে পারে। সেই প্রভাব পড়তে পারে সংসার, স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা ও ধনসম্পত্তির ক্ষেত্রে। এই চন্দ্রগ্রহণ রাশিচক্রের পাঁচ রাশির জন্য সুফল দান করলেও আরও পাঁচটি রাশির ভাগ্যে পড়তে পারে গ্রহণের অশুভ ছায়া।
জ্যোতিষশাস্ত্রে দেবগুরু বৃহস্পতিকে পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের অধিপতি বলে মনে করা হয়। এই নক্ষত্রে গ্রহণের সময় পড়ার জন্য বেশ কিছু রাশির ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তে পারে পরিবারের মধ্যে বিরোধ। স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন কিছু রাশির জাতক-জাতিকারা। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন রাশিকে সাবধানতা মেনে চলতে হবে। চন্দ্রগ্রহণের সময় এবং এমনকি গ্রহণের পরেও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত।
মিথুন: চন্দ্রগ্রহণের প্রভাবের কারণে মিথুন রাশির জাতকদের মনে গোপন উদ্বেগ তৈরি হবে। সেই উদ্বেগের প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যের উপরও। পারিবারিক জীবনে নেমে আসবে সঙ্কট। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মানসিক ফারাক তৈরি হবে। সন্তানের জন্য মন উতলা হতে পারে। সন্তানের কারণে মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হবে।
কর্মেও প্রভাব ফেলবে চাঁদ। কর্মক্ষেত্রে চাপ অনেক বেশি থাকবে। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ভুল বোঝাবুঝি বা আকস্মিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেই পরিস্থিতি মিথুন রাশির বিপক্ষে যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ বা বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
কর্কট: কর্কট রাশির জাতকদের জন্য চন্দ্রগ্রহণ শুভ ফলদান করবে না। এই রাশির জাতক-জাতিকারা ব্যক্তিগত কিছু কারণে মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে পারেন। চন্দ্রগ্রহণের সময় তাঁরা আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠবেন। আবেগের তীব্রতা বেশি থাকবে। কারণ চাঁদের প্রভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয়। জাতিকাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত এবং তাঁদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা উচিত। তা না হলে নানা অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।
চাঁদের পাশে রাহুর উপস্থিতি এই রাশির জাতকদের বিচারবুদ্ধিকে ম্লান করে দিতে পারে। ফলস্বরূপ ছোটখাটো বিষয় নিয়ে জটিলতা বাড়বে। অপ্রত্যাশিত ব্যয় ঘটতে পারে। উত্তরাধিকার, কর বা ঋণের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যার দিকে নজর দিতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তিরা সমস্যার সম্মুখীন হবেন। তর্কের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
সিংহ: চন্দ্রগ্রহণ সরাসরি প্রভাব ফেলবে সিংহ রাশির উপর। চন্দ্রগ্রহণের পর সিংহ রাশির জাতকের পরিবারে নানা জটিলতা বাড়বে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন সিংহ রাশির মানুষজন। দূরত্ব তৈরি হবে কাছের মানুষের সঙ্গে। বৈবাহিক জীবন টালমাটাল হতে পারে।
চাঁদের উপর রাহু এবং শনির প্রভাবের কারণে সিংহ রাশির নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন অনেকে। এমনকি নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েও মনে মনে দোলাচলে ভুগবেন সিংহ রাশির জাতকেরা। প্রতিটি সিদ্ধান্তই মেপে নিতে হবে।
বৃশ্চিক রাশি : বৃশ্চিক রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য গ্রহণের সময় নিজের ও পরিবারের মানসিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। গ্রহণের কাছাকাছি দিনগুলি ভারী মনে হতে পারে। পুরনো স্মৃতিগুলি বার বার ফিরে আসতে পারে। ফলে মানসিক চাপ বাড়তে পারে। পারিবারিক বিষয়গুলি নিয়ে মনোযোগ দিতে হতে পারে।
বিশেষ করে এই সময়টিতে দীর্ঘ ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উচিত। আঘাত বা দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই রাশির জাতক-জাতিকাদের উপর গ্রহণের প্রভাব তাঁদের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে, সতর্ক থাকা উচিত।
মীন: মীন রাশি হল জলের রাশি। মীন রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য এই চন্দ্রগ্রহণ আধ্যাত্মিক ও গোপন দিককে উন্মুক্ত করে দেবে। একই সঙ্গে চন্দ্র এবং রাহুর সংযোগ মীন রাশির জাতকদের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক চাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারও সঙ্গে বিবাদ হতে পারে। মন বিভ্রান্ত থাকবে।
মীনের জাতক যদি হন তাহলে উদ্বেগ এবং অমীমাংসিত সমস্যা ফিরে ফিরে আসবে। প্রিয়জন বা পরামর্শদাতার সাহায্য নিলে সংশয় কেটে যাবে। অপ্রয়োজনীয় টাকা ব্যয় করতে হতে পারে যার উপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।