Indian Fighter Jets

অত্যাধুনিক রেডার-ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জামে রণসজ্জা, ইহুদিদের বুদ্ধিতে তেজ বাড়াচ্ছে ভারতের ‘তেজস’!

দেশীয় সংস্থা হ্যালের তৈরি সাড়ে চার প্রজন্মের তেজসকে আরও শক্তিশালী করতে এগিয়ে এসেছে ইজ়রায়েল। ভারতীয় লড়াকু জেটটির জন্য জটিল প্রযুক্তি সরবরাহ করছে ইহুদিদের প্রতিরক্ষা সংস্থা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৫
Share:
০১ ১৯

ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে ইজ়রায়েলের ‘পাওয়ার বুস্টিং’। ঘরের মাটিতে তৈরি তেজস লড়াকু জেটকে আরও শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইহুদিরা। তাঁদের প্রযুক্তি ওই হালকা ওজনের যুদ্ধবিমান বা এলসিএ-তে (লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট) যুক্ত হলে, পশ্চিমি জেটগুলির সম ক্ষমতাসম্পন্ন হবে তেজস। তখন অনায়াসেই শত্রুব্যূহে ঢুকে হামলা চালাতে পারবে এই যুদ্ধবিমান, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৯

বর্তমানে ইঞ্জিনের সমস্যায় ভুগছে তেজসের নির্মাণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল (হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড)। তার মধ্যেই যুদ্ধবিমানটির উন্নত সংস্করণ তৈরিতে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে একটি ইজ়রায়েলি সংস্থা। লড়াকু জেটটির উন্নত সংস্করণের পোশাকি নাম তেজস এমকে ১এ। একে পশ্চিমি যুদ্ধবিমানগুলির সম ক্ষমতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে চাইছেন এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

Advertisement
০৩ ১৯

আধুনিক লড়াকু জেটে রেডার ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি থাকে ইলেকট্রনিক যুদ্ধের একাধিক সরঞ্জাম। তেজস এমকে ১-এর জন্য এ সব কিছুই সরবরাহ করছে ইহুদি ভূমির সংস্থা ‘ইজ়রায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর শাখা সংস্থা এলটা। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এ দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে যথেষ্ট অবদান রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একাধিক সমরাস্ত্র তৈরিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই সংস্থা।

০৪ ১৯

হ্যাল সূত্রে খবর, তেজসের উন্নত সংস্করণকে আরও শক্তিশালী করতে এতে ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যানড অ্যারে’ বা এইএসএ প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি রেডার ব্যবস্থা। যেটা ইতিমধ্যেই সরবরাহ শুরু করেছে ‘ইজ়রায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর শাখা সংস্থা এলটা। তেজসের পূর্ববর্তী সংস্করণগুলিতেও ইহুদিদের তৈরি রেডারই ব্যবহার করেছিল হ্যাল।

০৫ ১৯

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর কোমর ভাঙা অবস্থায় থাকা পাকিস্তানের বায়ুসেনাকে ফের শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে ক্রমাগত সাহায্য করে যাচ্ছে চিন। সেই লক্ষ্যে চলতি বছরের অগস্টের মধ্যে ইসলামাবাদকে অন্তত ৩০টি পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির জে-৩৫এ লড়াকু জেট সরবরাহের কথা রয়েছে বেজিঙের। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানগুলিতে এইএমএ প্রযুক্তি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

০৬ ১৯

আর তাই মাঝ-আকাশের লড়াইয়ে (পড়ুন ডগফাইট) সাড়ে চার প্রজন্মের তেজস যাতে পিছিয়ে না পড়ে, তার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করছে না ইজ়রায়েলি সংস্থা এলটা। এইএসএ প্রযুক্তির পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জামও হ্যালকে সরবরাহ করছে তারা। এ ছাড়া যুদ্ধবিমানটির পাইলটদের জন্য বিশেষ ধরনের একটি হেলমেট তৈরি করেছে ইহুদিদের আর একটি সংস্থা ‘এলবিট সিস্টেম্‌স’। এতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সুবিধা হবে তাঁদের।

০৭ ১৯

তেজসের নতুন সংস্করণে ফরাসি সংস্থা ‘দাঁসো অ্যাভিয়েশন’-এর তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমানের মতো রেডার ভিত্তির ডার্বি ক্ষেপণাস্ত্র থাকার কথা রয়েছে। সেই কারণে ইজ়রায়েলি সংস্থার তরফে এইএসএ প্রযুক্তি হ্যালের হাতে তুলে দেওয়াকে ‘খেলা ঘুরিয়ে’ দেওয়া পদক্ষেপ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তেজসের মতো রাফালও সাড়ে চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমান।

০৮ ১৯

দ্য জেরুজ়ালেম পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাধিক ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ দেশের মাটিতেই ‘অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যানড অ্যারে’-এর মতো উন্নত প্রযুক্তি রেডার এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরি করছে ইজ়রায়েলি সংস্থা। মোট ৮৩টি তেজস এসকে ১এ লড়াকু জেটে এগুলি ব্যবহার হবে বলে জানা গিয়েছে।

০৯ ১৯

আগামী দিনে ঘরের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির ‘অ্যাডভান্স মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট’ বা অ্যামকা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের। এই লড়াকু জেট নির্মাণের বরাত পুরোপুরি পেতে পারে কোনও বেসরকারি সংস্থা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত নিলে ইজ়রায়েলি সমরাস্ত্র নির্মাণকারী কোম্পানিগুলির ওই প্রকল্পে সংযুক্তিকরণের সংখ্যা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

১০ ১৯

চলতি বছরের ১৪ জুলাই মার্কিন সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) অ্যারোস্পেসের থেকে ‘এফ৪০৪-আইএন২০’ নামের দ্বিতীয় ইঞ্জিন হাতে পায় হ্যাল। ফলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ১২টি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান ভারতীয় বিমানবাহিনীর হাতে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার সংস্থা ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করে ওই ইঞ্জিন সরবরাহ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

১১ ১৯

২০২১ সালের অগস্টে জিই অ্যারোস্পেসকে তেজস এমকে ১এ লড়াকু জেটের জন্য মোট ৯৯টি ইঞ্জিনের বরাত দেয় হ্যাল। এর জন্য মার্কিন সংস্থাটির সঙ্গে ৫,৩৭৫ কোটি টাকার চুক্তি করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তবে আমেরিকার কোম্পানির থেকে প্রথম ইঞ্জিন হাতে পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় দেড় বছর। গত এপ্রিলে সেটি এসে পৌঁছোয় হ্যালের বেঙ্গালুরুর ওয়ার্কশপে।

১২ ১৯

এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য ফ্রান্সের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ফরাসি সংস্থা সাফরান বা ব্রিটিশ সংস্থা রোলস রয়েসের থেকে ইঞ্জিন কিনতে পারে কেন্দ্র। তবে সেগুলি সবই অ্যামকায় ব্যবহার হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনগুলি ১২০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।

১৩ ১৯

ফরাসি সংস্থা সাফরান বা ব্রিটিশ সংস্থা রোলস রয়েসের সঙ্গে এর জন্য ৬১ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে অ্যামকার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইঞ্জিন সরবরাহের শর্ত রাখবে কেন্দ্র। পাশাপাশি, এই প্রযুক্তিতে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার উদ্যোগও রয়েছে মোদী সরকারের।

১৪ ১৯

অন্য দিকে, গত ১৬ জুলাই তেজস এমকে ১-এর ডানা হ্যালকে সরবরাহ করে বেসরকারি সংস্থা লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো। কোয়েম্বটুরের একটি অনুষ্ঠানে সেগুলি যুদ্ধবিমান নির্মাণকারী সংস্থাটির হাতে তুলে দেয় তারা। কোনও বেসরকারি সংস্থার থেকে লড়াকু জেটটির প্রথম ডানার সেট হাতে পাওয়ার ঘটনাকে ‘মাইলফলক’ বলে উল্লেখ করেছেন হ্যালের চেয়ারম্যান ডিকে সুনীল।

১৫ ১৯

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মোট ৮৩টি তেজস যুদ্ধবিমানের জন্য হ্যালকে বরাত দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এর জন্য ৪৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করেছে কেন্দ্র। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ অনুমোদনের পর আরও ৯৭টি লড়াকু জেট কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ফলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য বেঙ্গালুরুর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে মোট ১৮০টি তেজস জেট বানাতে হতে পারে।

১৬ ১৯

দীর্ঘ দিন ধরেই যুদ্ধবিমানের সঙ্কটে ভুগছে ভারতীয় বায়ুসেনা। চিন ও পাকিস্তানের মতো জোড়া শত্রুর মোকাবিলায় লড়াকু জেটের বহরকে অন্তত ৪২ স্কোয়াড্রন রাখতে চাইছেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমানে সেটা নেমে এসেছে ৩২ স্কোয়াড্রনে। পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির অন্তত তিন স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান বহরে শামিল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন নয়াদিল্লির বায়ুবীরেরা। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রকে সুপারিশও করেছেন তাঁরা।

১৭ ১৯

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় বায়ুসেনার এক পদস্থ আধিকারিক। তাঁর দাবি, এক লপ্তে ৬০টা যুদ্ধবিমান বাহিনীর বহরে শামিল করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঘরের মাটিতে যে হেতু পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির লড়াকু জেট তৈরি হয় না, তাই এ ব্যাপারে বিদেশের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়াদিল্লি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভারতকে লড়াকু জেট বিক্রি করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে আমেরিকা এবং রাশিয়ার।

১৮ ১৯

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে মার্কিন সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়। অন্য দিকে, মস্কো আবার তাদের ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’কে নয়াদিল্লির কাছে বিক্রি করতে ইচ্ছুক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, দু’টি লড়াকু জেটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার করে পছন্দের যুদ্ধবিমান বায়ুসেনাকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। তার পরই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে শুরু হবে কথাবার্তা এবং দামদস্তুর।

১৯ ১৯

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঘরের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র। আর সেই নিরিখে রুশ ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’-এর পাল্লা সামান্য ভারী বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement