Toran Singh Titu

গড়গড় করে বলেন পূর্বজন্মের কথা, চিনিয়ে দেন খুনিকে! ‘জাতিস্মর’ টিটুর কাহিনি আলোড়ন ফেলেছিল দেশে

১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের আগরা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বিড় গ্রামে জন্ম হয়েছিল তোরনের। তোরনের বেড়ে ওঠা আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো ছিল না।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪০
Share:
০১ ১৮

জন্ম এবং মৃত্যু— মানুষের হাতে থাকে না বেশির ভাগ সময়েই। এ নিয়ে অনেক লোকগাথাও প্রচলিত রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, দেশ-বিদেশে প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়, কেউ তার ‘আগের জন্মের’ সমস্ত ঘটনা অনর্গল বলে দিচ্ছেন। কেউ বা বলে দিচ্ছেন, তিনি কখন কী ভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁদের ‘জাতিস্মর’ বলা হয়।

০২ ১৮

‘জাতিস্মর’, এই শব্দ শুনলেই বাঙালির মনে পড়বে সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র মুকুল ধর কিংবা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’-এর কুশল হাজরার কথা। ‘জাতিস্মর’ ছবিতে জাতিস্মরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ‘সোনার কেল্লা’য় কুশল চক্রবর্তী।

Advertisement
০৩ ১৮

কেউ যে ‘জাতিস্মর’ হতে পারেন, সে কথা অনেকে বিশ্বাস করেন। পুনর্জন্মে বিশ্বাসী অনেক মানুষকেই আশপাশে দেখতে পাওয়া যায়। আবার অনেকে বিষয়টিকে স্রেফ বুজরুকি বলে উড়িয়ে দেন। তবে ‘জাতিস্মর’-এর প্রমাণ বিভিন্ন সময়ে একাধিক দেশে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। যদিও এই ‘পুনর্জন্মের’ কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও অবধি পাওয়া যায়নি।

০৪ ১৮

লোকগাথা অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধও নাকি তাঁর আগের জন্মের কথা বলতে পারতেন, যেগুলি ‘জাতকের গল্প’ নামে পরিচিত।

০৫ ১৮

বিগত জন্মের এমন এক ঘটনার সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর নামও জড়িয়ে। শান্তা দেবী নামে এক মহিলা গান্ধীকে তাঁর পুনর্জন্মের কথা বলেছিলেন। গান্ধী তা বিশ্বাস করেন এবং সে বিষয়ে তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন।

০৬ ১৮

তবে ভারতে এমন এক ‘জাতিস্মর’ও রয়েছেন যিনি পূর্বজন্মে হওয়া খুনের কথা এবং খুনিদের চিহ্নিত করে আলোড়ন তুলেছিলেন। তাঁর নাম তোরন সিংহ ওরফে টিটু সিংহ।

০৭ ১৮

১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের আগরা থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বিড় গ্রামে জন্ম হয়েছিল তোরনের। তোরনের বেড়ে ওঠা আর পাঁচটা সাধারণ শিশুর মতো ছিল না। ছোট থেকেই মেজাজ তুঙ্গে থাকত তার। কারণে-অকারণে জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলত। নিজের সঙ্গে কথা বলত একনাগাড়ে। কারও সঙ্গে বিশেষ মেলামেশাও পছন্দ করত না সে।

০৮ ১৮

১৯৮৮ সালে তোরনের বয়স যখন পাঁচ, তখন সে দাবি করতে শুরু করে যে জন্ম দেওয়া বাবা-মা তার আসল বাবা-মা নয়। পরিবারের কেউই নাকি তার আপন নয়। প্রথম প্রথম তার কথায় আমল দেয়নি পরিবার।

০৯ ১৮

পরিবারের ভয় ধরে যখন পাঁচ বছর বয়সি তোরন দাবি করে যে, তার আসল নাম সুরেশ বর্মা। বাড়ি আগরায়। বালক এ-ও বলতে শুরু করে যে, তার স্ত্রীর নাম উমা বর্মা। দুই সন্তানও রয়েছে তার।

১০ ১৮

ছোট্ট তোরনের এ-ও দাবি ছিল, সুরেশকে ১৯৮৩ সালের ২৮ অগস্ট, অর্থাৎ তোরনের জন্মের মাস চারেক আগে খুন করা হয়। বাবা মহাবীর প্রসাদ ও মা শান্তিকে তোরন নাকি জানিয়েছিল, ১৯৮৩ সালের ২৮ অগস্টের রাতে সুরেশ গাড়ি চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির সামনে পৌঁছোনোর পরেই তাঁর মাথায় গুলি করে পালায় আততায়ীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

১১ ১৮

তোরন নাকি আরও বলেন, ‘‘আমার পরিবারকে বলুন যাতে আমার সন্তান এবং স্ত্রীর যত্ন নেয়। আমি এখানে খাবার খাচ্ছি। কিন্তু ওরা কী অবস্থায় রয়েছে আমি জানি না।’’ বার বার তোরনের সেই সব কথায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে মহাবীরের পরিবার। তোরনের কথামতো আগরার সেই জায়গায় গিয়ে সুরেশ বর্মার খোঁজখবর করতে গিয়ে থ হয়ে যান বালকের দাদা অশোক সিংহ।

১২ ১৮

অশোক দেখেন তোরন যেমনটা বলেছিল, তেমনটা হুবহু মিলে যাচ্ছে। এমনকি, সুরেশের বাড়ির বাইরে যে গাছটি ছিল, তা-ও তোরনের বর্ণনার সঙ্গে নাকি মিলে গিয়েছিল। অশোক খোঁজ লাগিয়ে এ-ও জানতে পারেন, সত্যিই খুন হয়েছিলেন সুরেশ। তাঁর স্ত্রী-সন্তান-সহ পুরো পরিবার এখনও ওই বাড়িতেই থাকেন।

১৩ ১৮

এর পর সুরেশের পরিবারকে সব কথা জানান অশোক। তাঁরাও অশোকের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান। বাড়ি ফিরে তোরন এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে আবার সুরেশের বাড়ি যান অশোক।

১৪ ১৮

সুরেশের বাবা-মাকে দেখেই তাঁদের জড়িয়ে ধরেছিল তোরন। জড়িয়ে ধরে সুরেশের স্ত্রী উমা এবং তাঁর সন্তানদেরও। তাঁদের সকলের খোঁজখবর নেওয়াও শুরু করে। সুরেশের প্রিয় গাড়ির খোঁজও নাকি করেছিল সে।

১৫ ১৮

এর পর তোরনকে সুরেশ সংক্রান্ত একের পর এক প্রশ্ন করে সুরেশের পরিবার। তোরন নাকি সে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয়। উমা এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা নাকি বিশ্বাসও করে নিয়েছিলেন যে, সুরেশই আবার তোরন হয়ে জন্ম নিয়েছে। তবে উমা নাকি দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন, ‘স্বামী’কে আর আগের মতো করে ফিরে পাবেন না তিনি।

১৬ ১৮

জানা যায়, আগরা গিয়ে তোরন নাকি সুরেশের খুনিদেরও চিনিয়ে দিয়েছিল। জানিয়েছিল, সুরেশের ব্যবসায়িক শত্রুরাই তাঁকে খুন করেছে। এর পর আবার বিড় গ্রামে ফিরে গিয়েছিল তোরন।

১৭ ১৮

সেই সময় তোরনের খবর দেশ জুড়ে আলোড়ন ফেলেছিল। তবে সে খবরের সত্য-মিথ্যা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। অনেকেই মনে করেন, তোরন ‘জাতিস্মর’ ছিল না। তার গল্প ছিল নিছকই মনগড়া বা কাকতালীয়।

১৮ ১৮

এখন তোরন কোথায় আছেন, কী করেন, তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। যদিও অনেকে বলেন, বর্তমানে ৪২ বছর বয়সি তোরন যোগব্যায়াম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এখন এক জন সহকারী অধ্যাপক তিনি। বারাণসীতে থাকেন। তবে ভারতীয়দের কাছে রহস্য হয়েই থেকে গিয়েছেন তোরন। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে একটি পডকাস্টে এসে নিজেকে তোরন বলে পরিচয় দিয়েছিলেন এক যুবক।

ছবি: সংগৃহীত এবং প্রতীকী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement