Five countries without military forces

নেই কোনও সৈন্যসামন্ত, প্রতিরক্ষার জন্য খরচ হয় না কানাকড়িও! ‘অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে’ চলে যে পাঁচ দেশ

সামরিক বাহিনীকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হলেও পৃথিবীতে এমন পাঁচটি দেশ রয়েছে, যারা প্রতিরক্ষা বাজেটে এক টাকাও খরচ করে না। সেই দেশের কোনও স্থায়ী সেনাবাহিনীও নেই, কোনও প্রতিরক্ষা বরাদ্দও নেই তাদের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪৭
Share:
০১ ১৯

পৃথিবীর সামরিক ব্যয় বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যুদ্ধবিগ্রহের প্রস্তুতি, অস্ত্রাগার বাড়িয়ে তোলা আর বিধ্বংসী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের উৎসাহের অন্ত নেই। সকলেই চায় সকলকে টেক্কা দিতে। কোনও দেশের সামরিক বল কেমন, তা নির্ভর করে সেই দেশ কত ধনী তার উপর। যার পকেটে টাকা যত বেশি, তার সামরিক ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণও তত বেশি।

০২ ১৯

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জানিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে বেড়েছে নিরাপত্তাহীনতা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীকরণ এবং আঞ্চলিক বিবাদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার ফলে ভূরাজনৈতিক সংঘাতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই সংস্থার গবেষণা রিপোর্ট বলছে, পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলি বেশি পরিমাণে রক্তাক্ত হয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৯

ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ, ইরান-ইজ়রায়েলের সংঘর্ষ, আর্মেনিয়া-আজ়ারবাইজ়ান যু্দ্ধ থেকে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত। যুযুধান রাষ্ট্রশক্তিদের থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গবেষণা এবং সমর সরঞ্জামের ধার ও ভার বৃদ্ধিতে মন দিয়েছে বহু রাষ্ট্রই। গোটা বিশ্বের যা প্রতিরক্ষা বরাদ্দ, তার ৪০ শতাংশই আমেরিকার। এশিয়ার শক্তিধর দেশ হিসাবে চিন এবং ভারত প্রতিরক্ষা বাজেটে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে।

০৪ ১৯

সামরিক বাহিনীকে প্রায়শই জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হলেও পৃথিবীতে পাঁচটিরও বেশি এমন দেশ রয়েছে যারা প্রতিরক্ষা বাজেটে এক টাকাও খরচ করে না। কোনও স্থায়ী সেনাবাহিনী নেই, কোনও প্রতিরক্ষা বরাদ্দও নেই তাদের। বর্তমান পরিস্থিতিতেও সেনাবাহিনী, প্রতিরক্ষা দফতর না রাখার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মুষ্টিমেয় দেশগুলি।

০৫ ১৯

যদিও বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, তবুও এই হাতেগোনা দেশগুলি প্রতিরক্ষা খাতে কিছুই ব্যয় করে না। আক্ষরিক অর্থেই বিনিয়োগ বা খরচের পরিমাণ শূন্য। তবুও, তারা বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ স্থানগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য হয়েছে তালিকায় থাকা কয়েকটি দেশ। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন দেশ রয়েছে এই তালিকায়।

০৬ ১৯

এই তালিকার প্রথমেই আছে কোস্টারিকা। দক্ষিণ আমেরিকার এক‌টি রাষ্ট্র। এর উত্তরে নিকারাগুয়া, দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে পানামা, পশ্চিমে ও দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব দিকে ক্যারিবিয়ান সাগর। ১৯৪৯ সালে দেশটি এক সাহসী পদক্ষেপ করে। ১৯৪৮ সালে গৃহযুদ্ধের পর তার সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

০৭ ১৯

দেশ থেকে সামরিক বাহিনীকে সরিয়ে সেই বরাদ্দ জনগণের জন্য বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করে। প্রতিরক্ষা খাতে যে তহবিল ব্যয় করা হত তা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়। এর ফলে দেশটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী দেশ হিসাবে গোটা বিশ্বের পথপ্রদর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

০৮ ১৯

আজ দেশটি লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে সুখী এবং স্থিতিশীল দেশগুলির মধ্যে একটি বলে পরিচিতি পেয়েছে। দেশটিতে রয়েছে ৫ কোটি জনসংখ্যা। অস্ত্রের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং কূটনীতির অধীনে সুরক্ষিত রয়েছে কোস্টারিকা। আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছে ও সামরিক প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করা রয়েছে দেশটির। সামরিক সহায়তার প্রয়োজন হলে দেশটির সুরক্ষার জন্য সকলের প্রথমে এগিয়ে আসবে আমেরিকা।

০৯ ১৯

আইসল্যান্ড আরও একটি দেশ যার প্রতিরক্ষার দায়িত্বভার নেটোর কাঁধে অর্পণ করা রয়েছে। নেটোর নির্ভরশীলতার কারণে এই দেশে কোনও স্থায়ী সামরিক বাহিনীর অস্তিত্ব নেই। তারা প্রতিরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য নেটো দেশগুলির সঙ্গে জোটের উপর নির্ভর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটির।

১০ ১৯

কম অপরাধের হার এবং ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে, দ্বীপরাষ্ট্রটির সৈন্যের প্রয়োজন নেই। কেবল একটি শক্তিশালী উপকূলরক্ষী বাহিনী গঠন করা হয়েছে দেশটিতে। আইসল্যান্ড একটি বেসামরিক আইসল্যান্ডিক কোস্টগার্ডের উপর নির্ভর করে। এটি জাতীয় নিরাপত্তা, অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং সামুদ্রিক টহল পরিচালনা করে।

১১ ১৯

দেশটি ঐতিহ্যবাহী সামরিক বাহিনীর চেয়ে সমাজকল্যাণ, শান্তিপূর্ণ কূটনীতি, সহযোগিতামূলক প্রতিরক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক পরিষেবাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটি বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আইসল্যান্ডই একমাত্র নেটো সদস্য রাষ্ট্র যার নিজস্ব সামরিক বাহিনী নেই। আইসল্যান্ডের একটি বিশেষ দল রয়েছে যার নাম ‘ক্রাইসিস রেসপন্স ইউনিট’। এই দলটি সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী নয়। তবে প্রয়োজনে তারা গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে সহায়তা করে।

১২ ১৯

১৮৬৮ সালে ইউরোপীয় এক ক্ষুদ্র রাষ্ট্র তাদের সেনাবাহিনীকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ঘোষণা করে বিলুপ্ত করে দেয়। এর কোনও স্থায়ী সামরিক বাহিনী নেই। দেশটি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ছোট একটি পুলিশবাহিনীর অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। দেশটি হল লিখটেনস্টাইন।

১৩ ১৯

সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি করেছে ইউরোপের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম দেশটি। লিখটেনস্টাইন সামরিক সুরক্ষার জন্য সুইৎজ়ারল্যান্ডের উপর নির্ভর করে আসছে। দুই দেশের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। নিরপেক্ষ নীতি এবং আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাধ্যমে লিখটেনস্টাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

১৪ ১৯

এর নিরপেক্ষ অবস্থান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিটি বড় সংঘাত থেকে তাদের দূরে রেখেছে। লিখটেনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও নিরপেক্ষ ছিল এবং সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।

১৫ ১৯

বহু বছরের একনায়কতন্ত্র এবং সংঘাতের পর ১৯৯০ সালে পানামা তাদের সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করে। দেশটিতে এখন কেবল একটি পুলিশবাহিনী এবং একটি উপকূলরক্ষী বাহিনী রয়েছে। এর শান্তি ও নিরাপত্তা মূলত মার্কিন সম্পর্ক এবং পানামা খালের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের উপর নির্ভর করে।

১৬ ১৯

‘টরিজ়োস-কার্টার’ চুক্তি সম্পাদিত রয়েছে আমেরিকা ও পানামার মধ্যে। এই কূটনৈতিক বোঝাপড়ার ফলে সামরিক সহায়তা আসে আমেরিকার থেকেই। সংবিধান সংশোধনের পর ১৯৯৪ সালে সামরিক বাহিনী ভেঙে দেয় পানামা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলির সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়, যা মূলত পানামা খালের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য করা হয়।

১৭ ১৯

যদিও সম্প্রতি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ দখল নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে পানামার। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ জলপথের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দাবি মেনে দখল ছাড়তে রাজি নয় পানামা। বরং চিনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সে দেশের সরকার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করছে বলে দাবি আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের।

১৮ ১৯

পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটিরও নিজস্ব কোনও সেনাবাহিনী নেই। পোপের সুরক্ষার জন্য নিযুক্ত রয়েছে একটি বিশেষ দল। সেটির নাম সুইস গার্ড। অতীতে নিরাপত্তার জন্য এখানে সেনাবাহিনী থাকলেও ১৯৭০ সালে ভ্যাটিকানের সশস্ত্র বাহিনী, যার নাম প্যালাটাইন গার্ড এবং নোবেল গার্ড ভেঙে দেন তৎকালীন পোপ।

১৯ ১৯

তার পর থেকে ভ্যাটিকান সিটির প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ইটালির হাতে। যদিও ভ্যাটিকান এবং ইটালির মধ্যে প্রতিরক্ষা নিয়ে কোনও চুক্তি নেই। ভ্যাটিকানে শান্তি বজায় রাখার জন্য ইটালির সশস্ত্র বাহিনী আনুষ্ঠানিক ভাবে মোতায়েন থাকে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement