প্রত্যেক বাবা-মা চান তাঁদের সন্তান সুস্থ ভাবে জন্ম নিক। একই ইচ্ছা ছিল কেনিয়ার বাসিন্দা অ্যাগনেসেরও। কিন্তু তাঁর ইচ্ছাপূরণ হল কই?
অ্যাগনেস ১১ সন্তানের মা। কিন্তু তাঁর ১১ সন্তানই জন্মান্ধ।
১১ সন্তানই দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে অ্যাগনেস স্থানীয়দের কাছে ‘পৃথিবীর সব থেকে দুর্ভাগ্যবতী মা’ হিসাবে পরিচিত।
২১ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১ সাল নাগাদ গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন অ্যাগনেস। বিয়ের বছরখানেকের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। প্রথম সন্তানের জন্ম দেন তার কয়েক মাসের মধ্যে।
কিন্তু দেখা যায়, অ্যাগনেস যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সে জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও ওই শিশুর দৃষ্টিশক্তি ছাড়া জন্ম নেওয়ার কারণ খুঁজে বার করতে পারেননি। দৃষ্টিহীন সন্তান জন্ম নেওয়ার অ্যাগনেস-সহ পরিবারের সকলে মুষড়ে পড়েছিলেন।
তবে অ্যাগনেস সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এর পর আবার মা হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি।
অ্যাগনেসের স্বামীও সুস্থ সন্তান জন্মানোর আশায় বুক বাঁধতে থাকেন। দু’বছরের মাথায় দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন অ্যাগনেস। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় সন্তানও জন্মান্ধ ছিল।
এর পর থেকে পর পর আরও ৯ সন্তানের জন্ম দেন অ্যাগনেস। কিন্তু তারা সবাই জন্মান্ধ ছিল।
অ্যাগনেসের আশা ছিল, তাঁর এক জন সন্তানের অন্তত দৃষ্টিশক্তি থাকবে। যাতে সেই সন্তান তার বাকি দাদা-দিদিদের খেয়াল রাখতে পারে। কিন্তু অ্যাগনেসের সেই আশা পূর্ণ হয়নি।
চিকিৎসকেরা অ্যাগনেসের বার বার দৃষ্টিহীন সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণ খুঁজে পাননি। তবে অ্যাগনেসের গ্রামবাসীদের একাংশের মতে তিনি ‘অভিশপ্ত’। আবার একাংশের মতে কেউ বা কারা তাঁর উপর ‘কালো জাদু’ করেছে। আর সেই কারণেই নাকি অ্যাগনেস বার বার দৃষ্টিহীন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
যদিও অ্যাগনেস এবং তাঁর স্বামী এ সব কথায় পাত্তা দেননি। দু’জনে মিলে সন্তানদের বড় করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর অ্যাগনেসের লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
১১ সন্তানকে একাই বড় করছেন অ্যাগনেস। সংসারে অভাব-অনটন থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের যত্নআত্তিতে কোনও রকম ত্রুটি রাখেন না তিনি।
পোশাক থেকে শুরু করে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, সন্তানদের সব প্রয়োজন একাই মেটান মা অ্যাগনেস। তার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি।
অ্যাগনেসের এই কাহিনি সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে অ্যাগনেস এবং তাঁর দৃষ্টিহীন ১১ সন্তানকে দেখা গিয়েছে।