Bees Leaving Villages for Cities

কীটনাশকের তাড়ায় উঠেছে গ্রামের পাট, ভরসা এখন শহুরে বহুতল! মৌমাছির অস্তিত্বসঙ্কট ডরাচ্ছে গোটা পৃথিবীকে

ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে মৌমাছি-সহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ। রাসায়নিক সার ব্যবহার, কৃত্রিম উপায়ে চাষ এর অন্যতম কারণ। ফলত চিন্তা বাড়ছে পতঙ্গবিদদের। বিশ্বে মোট ফসলের প্রায় ৭৫ শতাংশের পরাগায়ণ নির্ভরশীল মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের উপর। তাই তাদের বাঁচাতে বিশ্ব জুড়ে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৫ ১৭:১১
Share:
০১ ১৮

বিশ্ব জুড়ে বিলুপ্তির পথে কীটপতঙ্গ। প্রজাপতি থেকে শুরু করে মৌমাছি, ভীমরুল, বোলতা— কোনও কিছুই আর আগের মতো চোখে পড়ে না। কিন্তু পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে মৌমাছির মতো কীটকে বেঁচে থাকতেই হবে। বংশবিস্তারও করতে হবে। গবেষণা অনুযায়ী মৌমাছি-শূন্য হলে পৃথিবীও ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যাবে।

০২ ১৮

ফুল, ফল তো ছেড়েই দিন। সব্জি, ডাল, তেলবীজ-সহ প্রায় সব শস্য তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে মৌমাছি। বেশ কিছু গবেষণা অনুযায়ী, মৌমাছি রয়েছে বলেই পৃথিবী চলছে। কারণ একমাত্র এই কীট প্রত্যক্ষ ভাবে চাষের সঙ্গে যুক্ত। গবেষকেরা বলেন, বিশ্বে মোট ফসলের প্রায় ৭৫ শতাংশের পরাগায়ণ নির্ভরশীল মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের উপর।

Advertisement
০৩ ১৮

গবেষণা অনুযায়ী, মৌমাছি থাকলে ফসলের উৎপাদন গড়ে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। কিন্তু যে হারে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ছে এবং কৃত্রিম উপায়ে চাষ চলছে তাতে মৌমাছিদের আর গ্রামে দেখা যায় না বললেই চলে। এর ফলে চিন্তা বাড়ছে পতঙ্গবিদদের।

০৪ ১৮

কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক (বিশেষত নিকোটিনয়েডস) ব্যবহারে মৌমাছির স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে মৌমাছির দিক চিনতে সমস্যা হয়। তারা আর মৌচাকে ফিরতে পারে না। বিষাক্ত ফুলের মধু খেয়ে অনেক মৌমাছি মারাও যায়। এক ফসলের জমি বার বার চাষ করায় মৌমাছির খাবারের বৈচিত্র কমে যায়। রাসায়নিক ভাবে প্রক্রিয়াজাত ফুলে পরাগরেণুর গুণমান কমে যায়, ফলে মৌমাছির পুষ্টি কমে। গবেষণা অনুযায়ী এই সব কারণে দ্রুত বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে মৌমাছি।

০৫ ১৮

এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মৌমাছির স্বাভাবিক জীবনচক্রে সমস্যা হয়। অস্বাভাবিক বৃষ্টি, খরা বা ঝড় ফুল ফোটার সময় নষ্ট করে দেয় তখন মৌমাছির খাবার কমে যায়। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ চললেও মৌমাছির ‘ফাঙ্গাল ইনফেকশনের’ মতো নানা রোগ হয়। এ ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে বিস্ফোরণ, আগুন, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারেও মৌমাছি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

০৬ ১৮

গ্রামে যে হেতু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই মৌমাছি প্রজাতিও গ্রাম ছেড়ে শহরে বাসা বাঁধছে। বিজ্ঞানীদের মতে, মৌমাছি এখন শহরে বেশি নিরাপদ বোধ করছে, তাই সেখানেই চাক বাঁধছে। বহুতল, পার্ক, বাড়ির বাগান, বড় গাছের গোড়াকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে চাক বাঁধতে শুরু করেছে মৌমাছি।

০৭ ১৮

কিন্তু এখনও সাধারণ মানুষ মৌমাছি বাঁচিয়ে রাখার গুরুত্ব সে ভাবে উপলব্ধি করে উঠতে পারেনি। তাই বাড়ির আশপাশে মৌচাক দেখলেই তা ভেঙে দেন। এর ফলে শুধু যে মৌচাক নষ্ট হয় এমনটা নয়, বহু মৌমাছি মারাও যায়। এই পতঙ্গ যদি বংশবিস্তার না করতে পারে তা হলে একটা সময়ের পর পৃথিবী বলে আর কিছু থাকবে না বলে মনে করেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।

০৮ ১৮

বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী কয়েকশো বছরের মধ্যেই পতঙ্গশূন্য হয়ে পড়বে গোটা পৃথিবী, যার মারাত্মক প্রভাব পড়বে মানুষের উপর। এমনকি সেই পরিস্থিতি মানব সম্প্রদায়কে বিলুপ্তির পথেও নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

০৯ ১৮

মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্যোগী মহারাষ্ট্র প্রশাসন। মুম্বইয়ের বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে মিলিত হয়ে মুম্বই পুরসভা কাজ করছে। হেল্পলাইন নম্বরও চালু করা হয়েছে। কোনও স্কুল অথবা বাসস্থানে যদি মৌচাক থাকে তা নিরাপদ ভাবে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য জায়গায়। যাতে কোনও মৌমাছি আহত না হয় সেই দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।

১০ ১৮

‘ডোন্ট কিল দ্য বিজ়’— এমন স্লোগান-সহ আন্দোলন চলেছে মায়ানগরীতে। যেখানে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হচ্ছে মৌমাছি না মারতে। সাহায্য পাওয়ার নম্বরে ফোন করলে বিশেষজ্ঞরা গিয়ে সমস্যার সুরাহা করবেন বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ওই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। এ ছাড়া মুম্বইয়ের দমকল ও পুলিশের কিছু সদস্যকেও মৌচাক সরানো এবং মৌমাছি উদ্ধারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

১১ ১৮

মৌমাছি যাতে বিলুপ্ত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য মহারাষ্ট্রের পাশাপাশি এ রাজ্যেও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি, মৌমাছি পালনের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে এই শহরে।

১২ ১৮

ইকো পার্কের ‘বি করিডর’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল শহুরে পরিবেশ ও মৌমাছির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। কৃত্রিম মৌচাক বসানো রয়েছে। তাতে বিশেষ সেন্সরও দেওয়া রয়েছে, যার সাহায্যে মৌমাছির স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করা যায়। পাশাপাশি, মৌচাকের ভিতরের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, শব্দ, নড়াচড়া ইত্যাদি সেন্সরের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়।

১৩ ১৮

২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হিডকো এবং ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের তরফে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গ্রামের মানুষদের মৌমাছি সংরক্ষণের সচেতনতার পাঠ দেওয়া হয়েছিল। সচেতনতার পাশাপাশি মৌমাছি পালন, চাক বসানো, মধু সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। চাকরির সুযোগ তৈরি করা, মধুর উৎপাদন বাড়ানো, আর পরিবেশবান্ধব সচেতনতা বৃদ্ধি করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রশিক্ষণের।

১৪ ১৮

চলতি বছর ১১ মার্চ কোচবিহারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এক বিশেষ সচেতনতার কর্মসূচি। কলকাতার আইসিএআর-এটিএআরআই আয়োজন করেছিল কর্মশালাটি। প্রায় ২০০ জন কৃষক এবং মধু উৎপাদনকারী অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে মৌমাছি পালন কী ভাবে বৃদ্ধি করা যায়, মধু উৎপাদন বৃদ্ধির পথ কী কী, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংরক্ষণ কী ভাবে সম্ভব এবং পরবর্তী কালে আয়বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

১৫ ১৮

শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও মৌমাছি সংরক্ষণে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০ মে দিনটিকে ‘বিশ্ব মৌমাছি দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গর গুরুত্ব তুলে ধরতে এবং তাদের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই বিশেষ দিন বাছা হয়েছে।

১৬ ১৮

ফাও (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজ়েশন অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস্) এবং সিবিডি (কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি) মিলিত ভাবে একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘পরাগরেণু-বান্ধব চাষের নির্দেশিকা’।

১৭ ১৮

নির্দেশিকায় কীটনাশক ব্যবহার কমানো, একজাতীয় ফসলের বদলে বৈচিত্রময় ফসল ফলানোর বিষয়ে পরামর্শ রয়েছে, যাতে মৌমাছির জন্য খাবার ও আশ্রয় বাড়ে। জমির চারপাশে বা মাঝখানে ‘ফুলের দালান’ তৈরি করতে হবে। জলাধার এবং ঝোপঝাড় সংরক্ষণ করে মৌমাছির জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জৈব চাষের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

১৮ ১৮

মৌমাছি না থাকলে ধীরে ধীরে পৃথিবীও যে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে তা বেশ কিছু বছর ধরেই বুঝতে পেরেছিলেন পরিবেশবিদেরা। তাই মৌমাছির মতো কীটপতঙ্গ সংরক্ষণে গবেষণা হয়ে চলেছে নিরন্তর। কৃষিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ, পরিবেশ রক্ষা, ফসল চাষের স্বার্থে সকলকেই এগিয়ে আসার বার্তা হামেশাই দিয়ে থাকেন নানা পরিবেশবিদ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement