Trump on Pak-Afghan Conflict

যুদ্ধ থামানোর চ্যাম্পিয়ন বলে নিজেকে নিজেরই সার্টিফিকেট! আফগান-পাকিস্তান সংঘর্ষে ‘শান্তির জল’ ছেটাতে ছুটবেন ট্রাম্প?

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সংঘর্ষ নিয়ে এ বার মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংঘর্ষ বন্ধ করতে উদ্যোগী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নজরে কি বাগরাম বিমানঘাঁটি?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:১৬
Share:
০১ ১৮

সীমান্ত সংঘাত হোক বা পুরোদস্তুর যুদ্ধ, লড়াইয়ের খবর পেলে আর চুপ করে বসে থাকা নয়। যুযুধান দুই পক্ষকে শান্ত করার গুরুদায়িত্ব যে নিজেই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি! এ-হেন বর্ষীয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নজরে এ বার ‘ডুরান্ড রেখা’য় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সংঘর্ষ। দুই প্রতিবেশীর ‘ঝগড়া’ থামাতে তিনি যে উদ্যোগী হতে চলেছেন, তা বলাই বাহুল্য। অন্য দিকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে ইরানও।

০২ ১৮

চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে মিশরে রওনা হন ট্রাম্প। এই সফরের জন্য ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ (মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ বিমান) ওঠার প্রাক্কালে কাবুল এবং ইসলামাবাদের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘‘সমস্যার সমাধান করার ব্যাপারে আমি খুবই পারদর্শী।’’ আর তাই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং লড়াইয়ের উপরে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি, এ ব্যাপারে ফের এক বার ভারত-পাক ‘যুদ্ধ’-এ মধ্যস্থতার দাবি করেন ট্রাম্প।

Advertisement
০৩ ১৮

‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ ওঠার মুখে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এই নিয়ে আটটা যুদ্ধের সমাধান করলাম। শুনেছি যে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। আমি শুধু এটাই বলব, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। তার পর আরও একটা (যুদ্ধের) সমাধান করে দেব। এতে আমার বেশ পারদর্শিতা রয়েছে।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের পরেই তুঙ্গে ওঠে জল্পনা। এ ব্যাপারে তাঁর কূটনৈতিক চাল কী হতে পারে, তাই নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

০৪ ১৮

পাক-আফগান যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে ট্রাম্পের এ-হেন উৎসাহ নিয়ে বিশ্লেষকদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পঠানভূমির বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত চেয়ে হুঙ্কার দেন তিনি। কাবুলের তালিবান সরকার অবশ্য তাতে সে ভাবে আমল দেয়নি। কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, সংঘাত থামানোর নামে সংশ্লিষ্ট বিমান ছাউনি মার্কিন বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়ার শর্ত দিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। কারণ, ‘আমেরিকা প্রথম’ তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরে এগোচ্ছে তাঁর বিদেশনীতি।

০৫ ১৮

কোন পথে পাক-আফগান দ্বন্দ্বের সমাধান, মিশর যাওয়ার আগে ট্রাম্প অবশ্য সে ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। উল্টে ভারত-পাক সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শুধুমাত্র শুল্কের কথা বলে কয়েকটা লড়াই থামিয়ে দিয়েছি। উদাহরণ হিসাবে দুই পরমাণু শক্তিধর নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের কথা বলা যেতে পারে। আমি বলেছিলাম যুদ্ধ চালিয়ে গেলে আমি শুল্ক আরোপ করব। ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ, ২০০ শতাংশ বা আরও বেশি। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ হয় গোলাগুলি।’’

০৬ ১৮

গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা সংঘর্ষে ভারতীয় ফৌজের হাতে বেদম মার খায় পাকিস্তান। ফলে চার দিনের মাথায় সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব দেয় ইসলামাবাদ। তাতে অবশ্য আপত্তি করেনি নয়াদিল্লি। ওই ঘটনার পর থেকেই নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তুলে ধরেন ট্রাম্প। যদিও সংসদে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি উড়িয়ে সেখানে তিনি বলেন, ‘‘তৃতীয় কারও কথায় লড়াই থামানো হয়নি।’’

০৭ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ট্রাম্পের পক্ষে পাক-আফগান বিবাদের নিষ্পত্তি করা মোটেই সহজ নয়। কারণ সেখানে মিশে আছে সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্ত সংঘাতের মতো বিষয়। তা ছাড়া বাগরাম নিয়ে ‘আগ্রাসী’ মন্তব্যের পর মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হিন্দুকুশের কোলের দেশটির তালিবান শাসকেরা আদৌ বিশ্বাস করবেন কি না, তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ঝামেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাক গলানো’ যে তাদের একেবারেই পছন্দ নয়, তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দিয়েছে কাবুল।

০৮ ১৮

অন্য দিকে, গত ১২ অক্টোবর পাক-আফগান সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে বিবৃতি দেন ইরানের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইসলামাবাদ এবং কাবুলের ভূখণ্ড এবং সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। আর তাই দু’পক্ষের সম্মতিতে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার ক্ষেত্রে তেহরানের কোনও সমস্যা নেই।’’ যদিও সাবেক পারস্য দেশটির এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি তালিবান এবং পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকার।

০৯ ১৮

এ দিকে আবার ১১ অক্টোবর রাতে ‘ডুরান্ড রেখা’য় হওয়া সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা নিয়ে একাধিক তথ্য সামনে এসেছে। পাক ফৌজের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর বা আইএসপিআরের (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০০-র বেশি তালিবানি যোদ্ধার। এ ছাড়া প্রাণ হারিয়েছে তাদের সহযোগী গোষ্ঠীর বেশ কিছু সন্ত্রাসীও। জখমের সংখ্যা আরও বেশি। বিশেষ গোয়েন্দা সূত্রে এই তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির জেনারেলরা।

১০ ১৮

আফগান তালিবানের মুখপাত্র জ়াবিহুল্লা মুজাহিদ আবার জানিয়েছেন, সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জন পাক ফৌজির, জখম ৩০। তালিবান যোদ্ধাদের মধ্যে নিহত অন্ততপক্ষে ২০ জন। তাঁর এই বিবৃতির পর বয়ান বদল করে ইসলামাবাদ। আইএসপিআর জানিয়েছে, সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জন পাক সৈনিকের। প্রথম পর্যায়ে যেটা ১২ থেকে ১৫ বলে উল্লেখ করেছিল রাওয়ালপিন্ডি।

১১ ১৮

সূত্রের খবর, ১১ অক্টোবর রাতে আট দিক থেকে ‘ডুরান্ড রেখা’য় পাক ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করে তালিবান বাহিনী। হিন্দুকুশের কোলের দেশটির হেলমন্দ এবং পাকতিকার দিক থেকে আক্রমণের তীব্রতা ছিল সবচেয়ে বেশি। কাবুলের দাবি, সীমান্তে ইসলামাবাদের সেনাবাহিনীর ২৫টি ঘাঁটি দখল করেছে তালিবানি আফগান ফৌজ। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র। এই তথ্য খারিজ করে পাল্টা আফগান ভূমির দখল নেওয়ার দাবি করেছে পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির শাহবাজ় শরিফের সরকার।

১২ ১৮

ইসলামাবাদের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘পিটিভি নিউজ়’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সীমান্তে আফগানিস্তানের অন্তত ১৯টি ঘাঁটি দখল করেছে পাক সেনা। সেখান থেকেই নাগাড়ে গোলাগুলি বর্ষণ করছিল তালিবান যোদ্ধারা। সূত্রের খবর, ঘাঁটিগুলিতে যত জন আফগান লড়াকু ছিল, তাদের প্রত্যেককে হত্যা করেছে ইসলামাবাদের ফৌজ। বেগতিক দেখে প্রাণভয়ে চম্পট দেয় বাকিরা।

১৩ ১৮

‘পিটিভি নিউজ়’-এর পাশাপাশি ‘ডুরান্ড লাইন সংঘর্ষ’ নিয়ে বড় তথ্য দিয়েছে ‘রেডিয়ো পাকিস্তান’। নিরাপত্তাবাহিনীর সূত্র উল্লেখ করে ইসলামাবাদের এই গণমাধ্যমটির দাবি, আফগান তালিবানের মানোজবা ক্যাম্প ব্যাটেলিয়নের সদর দফতর, জনদুসর ঘাঁটি, তুর্কমেনজ়াই ঘাঁটি এবং খরচার দুর্গ ধ্বংস করেছে রাওয়ালপিন্ডির ফৌজ।

১৪ ১৮

এ ছাড়া পাক সেনার একটি সূত্রকে উল্লেখ করে সংবাদসংস্থা ‘বিবিসি’ জানিয়েছে, ‘ডুরান্ড লাইন’-এর উপর অধিকাংশ সংঘর্ষই হয়েছে কুনার-কুরম এলাকায়। লড়াইয়ের সময়ে দু’পক্ষই মূলত ছোট অস্ত্র এবং কামান থেকে গোলাগুলি ছুড়তে থাকে। যুদ্ধ পরিস্থিতি সবচেয়ে তীব্র ছিল আঙ্গুর আড্ডা, বাজ়াউর, কুররম, দির, চিত্রাল এবং বড়মচায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুররাম জেলার জিরো পয়েন্টে মোতায়েন থাকা এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘স্থানীয় সময় রাত ১০টা নাগাদ আচমকাই হামলা শুরু করে তালিবানি বাহিনী। ফলে আমাদেরও জবাব দিতে হয়েছে।’’

১৫ ১৮

এ বারের পাক-আফগান সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত ৭ অক্টোবর। ওই দিন হিন্দুকুশের কোলের দেশটির সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ বা টিটিপির হামলায় প্রাণ হারান এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও মেজর-সহ ইসলামাবাদের ১১ জন সৈনিক। ঠিক এর দু’দিনের মাথায় (পড়ুন ৯ অক্টোবর) প্রতিবেশী দেশটির রাজধানী কাবুলে বিমানহানা চালায় রাওয়ালপিন্ডির বিমানবাহিনী। এ ছাড়া আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশেও বোমাবর্ষণ করে তারা।

১৬ ১৮

খাইবার-পাখতুনখোয়ায় সক্রিয় টিটিপিকে বহু আগেই জঙ্গিগোষ্ঠীর তকমা দিয়েছে পাক সরকার ও সেনা। ইসলামাবাদের অভিযোগ, পর্দার আড়ালে থেকে তাদের ক্রমাগত সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে কাবুলের তালিবান সরকার। অন্য দিকে, ২০০৭ সালে জন্ম হওয়া টিটিপির দাবি, ইসলামীয় রাষ্ট্রের যে সমস্ত রীতিনীতি মেনে চলা উচিত, ইসলামাবাদ মোটেই তা পালন করছে না। সেই কারণেই সরকার বদলের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে এই কট্টরপন্থী সংগঠন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, টিটিপিকে নিয়ে পাক সরকারের কোনও অভিযোগ কখনওই মানেনি আফগান তালিবান।

১৭ ১৮

ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীর বোমাবর্ষণের সঙ্গে সঙ্গেই কড়া বিবৃতি দেয় কাবুল। এই ঘটনাকে সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসাবে উল্লেখ করে তালিবান সরকার। সূত্রের খবর, ওই দিন থেকেই সীমান্তে হাতিয়ার জড়ো করা শুরু করে তাদের যোদ্ধারা। ফলে খুব দ্রুত যে তাঁরা পাক ফৌজের উপর হামলা চালাবে, তা একরকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

১৮ ১৮

আফগানিস্তানের দিক থেকে এই আক্রমণকে অবশ্য ‘কাপুরুষোচিত’ বলে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডির সেনা দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, আত্মরক্ষার্থে পাল্টা জবাব দিয়েছে বাহিনী। এখানে উল্লেখ্য, দুই প্রতিবেশীর আন্তর্জাতিক সীমান্ত ‘ডুরান্ড রেখা’য় বিভক্ত। ১৮৯৩ সালে সংশ্লিষ্ট সীমান্তটি তৈরি করে তৎকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার, যা নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে কাবুলের। ফলে এই নিয়ে দ্বন্দ্ব আগামী দিনে আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement