Chinese Electromagnetic Weapon

তড়িচ্চুম্বকীয় অস্ত্রে ভারতীয় সৈনিকদের গলিয়ে ফেলেছে চিন! বেজিং-নয়াদিল্লি ‘সখ্য’ বাড়তেই প্রলাপ বকছেন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ নেতা?

২০২০ সালে গলওয়ান সংঘর্ষের সময়ে তড়িচ্চুম্বকীয় অস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় সৈনিকদের নাকি গলিয়ে ফেলেছিল চিন। নয়াদিল্লি ও বেজিং কাছাকাছি আসতেই এ বার এমন অদ্ভুত দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলের এক রাজনীতিবিদ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৬
Share:
০১ ১৮

গলওয়ান সংঘর্ষে তড়িচ্চুম্বকীয় হাতিয়ার ব্যবহার করে ভারতীয় সৈনিকদের গলিয়ে দেয় চিন! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এক রাজনীতিবিদের এ-হেন মন্তব্যে দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। নয়াদিল্লি ও বেজিঙের সম্পর্কে চিড় ধরাতেই কি পাঁচ বছর আগের সীমান্ত সংঘাতকে টেনে আনলেন তিনি? ওই ধরনের অস্ত্রের আদৌ কি অস্তিত্ব আছে? ট্রাম্পের দলের ওই নেতার ‘আজব’ দাবি ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

০২ ১৮

গলওয়ান সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে ১১ সেপ্টেম্বর বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মার্কিন রাজনীতিবিদ বিল হ্যাগার্টি। বর্তমানে আমেরিকার পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এর উচ্চকক্ষ ‘সেনেট’-এর সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। ট্রাম্পের দল রিপাবলিকার পার্টির ওই নেতার অবশ্য দাবি, ওই সংঘাতের পর নয়াদিল্লি ও বেজিঙের সম্পর্ক কখনওই পুরোপুরি মেরামত হয়নি। দু’তরফে বজায় আছে অবিশ্বাস এবং সন্দেহ।

Advertisement
০৩ ১৮

হ্যাগার্টির কথায়, ‘‘ভারত-চিনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মাত্র পাঁচ বছর আগে একটি বিতর্কিত জায়গার দখল নিয়ে দু’পক্ষ লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে বেজিঙের বাহিনী তড়িচ্চুম্বকীয় একটি অস্ত্র ব্যবহার করে। সেটা আক্ষরিক অর্থে নয়াদিল্লির ফৌজের গলা টিপে ধরেছিল। তাঁদের গলিয়ে পর্যন্ত দেয়।’’ এই বিবৃতি দেওয়ার সময়ে অবশ্য স্পষ্ট করে গলওয়ান উপত্যকার নামে উল্লেখ করেননি তিনি।

০৪ ১৮

গলওয়ানের লড়াইয়ে চিনের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএর তড়িচ্চুম্বকীয় হাতিয়ার ব্যবহারের প্রসঙ্গটি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘ভয়েস অফ আমেরিকা’। ২০২০ সালের নভেম্বরে পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। সেখানে জ়িন কানরং নামের বেজিঙের এক অধ্যাপককে উদ্ধৃত করে সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটির কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করা হয়।

০৫ ১৮

প্রতিবেদনে জ়িন কানরং দাবি করেন, গলওয়ান উপত্যকায় সীমান্তের একটি কৌশলগত এলাকা দখল করে নেয় ভারতীয় সেনা। সেখান থেকে কিছুতেই তাঁদের সরানো যাচ্ছিল না। ফলে ত়ড়িচ্চুম্বকীয় অস্ত্র ব্যবহারে একরকম বাধ্য হন পিএলএ। এর প্রয়োগে নয়াদিল্লির বাহিনীর অনেকেই তৎক্ষণাৎ বমি করে ফেলেন এবং মাথা ঘুরে পড়ে যান। শুধু তা-ই নয়, কিছু ক্ষণের মধ্যেই পিছু হটতে হয় তাঁদের।

০৬ ১৮

কিন্তু, কিছু দিনের মধ্যেই চিনা অধ্যাপকের তড়িচ্চুম্বকীয় অস্ত্রটির অস্তিত্ব ঘিরে প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের বহু প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এবং সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এই ধরনের হাতিয়ারের প্রয়োগে সৈনিকদের মধ্যে মাথা ঘোরা বা বমি হওয়ার মতো উপসর্গ দেখতে পাওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, মানবদেহ কিছু পরিমাণে তড়িচ্চুম্বকীয় আঘাত সহ্য করতে সক্ষম। আর তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।

০৭ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ফৌজি অফিসারদের যুক্তি, আধুনিক চিকিৎসায় ‘ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং’ বা এমআরআইয়ের অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। এটিও প্রকৃতপক্ষে একটি তড়িচ্চুম্বকীয় যন্ত্র, যেটির ব্যবহারে মানবদেহের কোনও ক্ষতি হয় না। তা ছাড়া তড়িচ্চুম্বকীয় হাতিয়ার চালাতে হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন। সেটা পূর্ব লাদাখে হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় কী ভাবে পেল চিনের লালফৌজ?

০৮ ১৮

গলওয়ান সংঘর্ষের পর এই প্রশ্নে অবশ্য প্রথম থেকেই নীরব বেজিং। তবে এই ইস্যুতে বিবৃতি দেয় ভারতীয় সেনা। এক্স হ্যান্ডলে (আগে নাম ছিল টুইটার) একটি পোস্টে ফৌজির তরফে লেখা হয়, ‘‘পূর্ব লাদাখে চিনা পিএলএ তড়িচ্চুম্বকীয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং ভুয়ো। ওখানে এ রকমের কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’

০৯ ১৮

এ দেশের অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারেরাও মনে করেন, রেডিয়ো তরঙ্গ বা তড়িচ্চুম্বকীয় অস্ত্র প্রয়োগ করে সৈনিকদের গলিয়ে ফেলা বাস্তবে অসম্ভব। প্রযুক্তি এবং চিকিৎসাশাস্ত্র, কোনও দিক দিয়েই এর যুক্তিগ্রাহ্য কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া গলওয়ানের নিহত সৈনিকদের মৃতদেহ তাঁদের পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয় ফৌজ। মারণাস্ত্র প্রয়োগে তাঁদের শরীর পুরোপুরি গলে গেলে তা কোনও ভাবেই সম্ভব হত না।

১০ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ট্রাম্পের বেপরোয়া শুল্কনীতির জেরে ধীরে ধীরে আমেরিকার থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি। শুধু তা-ই নয়, সীমান্ত সংঘাতকে সরিয়ে রেখে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভারতের এ-হেন পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ‘কৌশলগত অংশীদার’কে তাই ফের নিজের দিকে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন।

১১ ১৮

বিশেষজ্ঞদের কথায়, সেই কারণেই অদ্ভুত অস্ত্রের কথা বলে মোদী সরকারের ‘মানভঞ্জন’-এর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ। নয়াদিল্লি ও বেজিঙের মধ্যে ফাটল তৈরি করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এ দেশে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসাবে সার্জিয়ো গোরকে নিয়োগ করতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতকে চিনের থেকে দূরে নিয়ে যাওয়াই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য বলে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন ওই ব্যক্তি।

১২ ১৮

ভারতের ব্যাপারে সুর নরম করেছেন খোদ ট্রাম্পও। ১২ সেপ্টেম্বর ‘ফক্স নিউজ়’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘নয়াদিল্লির উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানো মোটেই সহজ ছিল না।’’ এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে যে মূল্য চোকাতে হচ্ছে, তা একরকম মেনেই নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে দু’তরফে দ্রুত বাণিজ্যচুক্তি হতে চলেছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

১৩ ১৮

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হতেই মস্কোর উপর ১৬ হাজার নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি বাঁচাতে ভারতকে সস্তা দরে অপরিশোধিত খনিজ তেল বিক্রির প্রস্তাব দেয় ক্রেমলিন। সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নিয়ে রুশ ‘তরল সোনা’ আমদানি বৃদ্ধি করে মোদী সরকার।

১৪ ১৮

এ বছরের জানুয়ারিতে কুর্সি পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মস্কোর থেকে খনিজ তেল আমদানি বন্ধ করতে ভারতের উপরে চাপ বাড়ান ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি, এর জেরে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ হাতে পাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ওই যুক্তি পত্রপাঠ খারিজ করে ক্রেমলিনের তেল কেনা বজায় রেখেছে মোদী সরকার।

১৫ ১৮

ফলে ‘অবাধ্য’ ভারতকে শাস্তি দিতে গত ২৭ অগস্ট থেকে এ দেশের পণ্যে ৫০ শতাংশ করে শুল্ক নেওয়া শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের জেরে মুনাফা ঠিক রেখে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা করা নয়াদিল্লির পক্ষে বেশ কঠিন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোমর বেঁধে বিকল্প বাজারের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রের মোদী সরকার।

১৬ ১৮

গত ৩১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চিনের তিয়ানজ়িনে বসে ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিওর (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন) বৈঠক। সেখানে যোগ দিয়ে ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন মোদী। তিন জনকে একসঙ্গে খোশগল্পও করতে দেখা যায়। ফলে ‘রাশিয়া-ভারত-চিন ত্রিশক্তি’ জোট তৈরি হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমি দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক তার পরেই গলওয়ানের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্পের দলের সেনেটরের এই মন্তব্যের তাই আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১৭ ১৮

২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা’ বা এলএসির (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) গলওয়ান উপত্যকায় হঠাৎ করেই আগ্রাসী মনোভাব দেখায় চিনা পিএলএ। ওই সময়ে বেজিঙের লালফৌজের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান কর্নেল বি সন্তোষ বাবু-সহ ১৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টের ২০ জন সৈনিক। সূত্রের খবর, ড্রাগনের লালফৌজে নিহতের সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৪২। তবে তা কখনওই স্বীকার করেনি চিন।

১৮ ১৮

সীমান্ত সংঘাত মেটাতে ১৯৯৬ সালে একটি চুক্তি করে ভারত ও চিন। ওই সমঝোতা অনুযায়ী, দু’পক্ষের সৈনিকেরা কোনও আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক ছাড়াই ওই এলাকায় টহল দিয়ে থাকেন। সেই কারণেই বেজিঙের বাহিনী তড়িচ্চুম্বকীয় হাতিয়ার ব্যবহার করেছিল বলে খবর ছড়িয়েছিল, মত বিশ্লেষকদের একাংশের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement