সত্তরের দশক থেকে বড় পর্দায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। নামডাক রয়েছে রাজনীতির আঙিনাতেও। বর্তমানে তিনি তৃণমূলের সাংসদ। তবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিতর্ক প্রচুর। শোনা যায়, নিজের বিয়েতেই নাকি তিন ঘণ্টা দেরি করে পৌঁছেছিলেন শত্রুঘ্ন সিন্হা। এমনকি, পরকীয়া করতে গিয়ে হাতেনাতে স্ত্রীর কাছে ধরাও পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
বলিউডের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, ট্রেনে সফর করার সময় অভিনেত্রী পুনম চন্দিরামনির সঙ্গে দেখা হয়েছিল শত্রুঘ্নের। তখন ১৯৬৫ সাল। কোনও কারণে ট্রেনে বসে কাঁদছিলেন পুনম। প্রথম দেখাতেই পুনমের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন শত্রুঘ্ন।
পুনমকে কাঁদতে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি শত্রুঘ্ন। একটি পত্রিকা হাতে নিয়ে তার পাতায় লিখে দিয়েছিলেন, ‘‘এমন সুন্দরীর চোখে জল মানায় না।’’ তার পর সেই পত্রিকাটি পুনমের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন শত্রুঘ্ন। লেখা পড়ে পত্রিকাটি নাকি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন পুনম।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, পুনমের কাকিমা তাঁদের মুম্বইয়ের ঠিকানা দিয়েছিলেন শত্রুঘ্নকে। এর পর পুনম এবং শত্রুঘ্নের বন্ধুত্বের শুরু। ১৪ বছর বন্ধুত্বের পর বিয়ের কথাবার্তাও চলতে থাকে তাঁদের। কিন্তু তার মধ্যেই পুনম এবং শত্রুঘ্নের মাঝে চলে এসেছিলেন অন্য এক বলি অভিনেত্রী।
১৯৭৬ সালে ‘কালীচরণ’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে প্রথম বার একসঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন শত্রুঘ্ন এবং রীনা রায়। পেশাগত সূত্রে আলাপ হলেও তাঁদের সম্পর্ক গাঢ় হতে শুরু করেছিল। ‘মিলাপ’, ‘সংগ্রাম’, ‘সৎ শ্রী অকাল’, ‘চোর হো তো অ্যায়সা’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে শত্রুঘ্নের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রীনা। বলিপাড়ার গুঞ্জন, রীনার সঙ্গে ছ’-সাত বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন শত্রুঘ্ন।
বলিউডের জনশ্রুতি, একই সঙ্গে নাকি দুই অভিনেত্রীর সঙ্গেই সম্পর্কে ছিলেন অভিনেতা। কিন্তু বিয়ের কথা এগোনোর সময় রীনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শত্রুঘ্ন। এক সাক্ষাৎকারে শত্রুঘ্ন বলেছিলেন, ‘‘আমার সামনে যখন বিয়ে নিয়ে আলোচনা করা হত তখন আমি সব সময় হিসাব কষতে থাকতাম। কাকে বিয়ে করা উচিত তার চেয়ে বেশি আমার ভাবনা ছিল কাকে বিয়ে করা উচিত নয় তা নিয়ে।’’
রীনার সঙ্গে শত্রুঘ্নের সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলেন পুনম। হাতেনাতে নাকি হবু স্বামীর পরকীয়া ধরে ফেলেছিলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে পুনম বলেছিলেন, ‘‘আমি যখন রীনা আর শত্রুঘ্নের কথা জানতে পারি তখন আমি নিজেই সরে এসেছিলাম। কিন্তু শত্রুঘ্ন এমন কাউকে বিয়ে করতে চায়নি যাকে ও বিশ্বাস করতে পারবে না।’’
১৯৮০ সালে পুনমকে বিয়ে করেছিলেন শত্রুঘ্ন। অভিনেতার দাবি, নিজের বিয়েতেই নাকি তিন ঘণ্টা দেরি করে পৌঁছেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে জয়পুরের সাহিত্য উৎসবে ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তিনি। তখনই শত্রুঘ্ন জনসমক্ষে স্বীকার করেছিলেন যে, পরকীয়া করতে গিয়ে পুনমের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন।
বলিউডের জনশ্রুতি, বিয়ের পরও নাকি রীনার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে ছিলেন অভিনেতা। এক সাক্ষাৎকারে শত্রুঘ্ন বলেছিলেন, ‘‘ত্রিকোণ সম্পর্কে থাকলে মন এবং শরীর— দুইয়ের উপরেই চাপ পড়ে। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গেলে মনে হয় স্ত্রীকে ঠকাচ্ছি। আবার স্ত্রীর সঙ্গে থাকলে প্রেমিকার মুখ মনে পড়ে। মনে হয়, তাকে হাতের পুতুল করে রেখে দিয়েছি।’’
শত্রুঘ্ন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ‘‘বিয়ের পর আমি রীনার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলাম শুনে অনেকে অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। রীনার পরিবারের সকলেই তা জানত। কোনও পরামর্শ নিতে হলে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসাবে আমাকেই মানত রীনা। আমি কী করে ওকে ছুড়ে ফেলে দিতাম?’’
স্ত্রীর কথা শুনে নাকি পরকীয়া সম্পর্ক থেকে সরে এসেছিলেন শত্রুঘ্ন। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘‘পুনম যখন সব সত্যি জানতে পারে, তখন ওর অবস্থা দেখে আমি একটা কথা দিয়েছিলাম। জীবনে আর কোনও দিন অন্য মহিলার দিকে না তাকানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এমনকি, এক নারীতেই সারা জীবন অনুরক্ত থাকব বলে কথা দিয়েছিলাম ওকে।’’
তবে বিয়েতে শত্রুঘ্নের দেরি করে পৌঁছোনোর কারণ ছিল ভিন্ন। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে, কোনও কালেই সময়ানুবর্তী ছিলেন না শত্রুঘ্ন। দেরি করে পৌঁছোনোর অভ্যাস ছিল তাঁর। দেরি করার অভ্যাসবশত নিজের বিয়েতেও দেরি করে পৌঁছেছিলেন তিনি। পেশাগত জীবনেও এর প্রভাব পড়ত বলে দাবি শত্রুঘ্নের।
শত্রুঘ্ন বলেছিলেন, ‘‘আমি শুটিং চলাকালীনও সেটে সময়মতো পৌঁছোতে পারতাম না। অধিকাংশ সময় দেরি করে ফেলতাম। কিন্তু দেরি করে পৌঁছোলেও আমি সময়ের আগে আমার সব কাজ সেরে ফেলতাম। ইন্ডাস্ট্রিতে এই সুনাম ছিল আমার।’’
বলিপাড়া সূত্রে খবর, শত্রুঘ্নের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহসিন খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রীনা। বলিউডের জনশ্রুতি, লন্ডনে বলি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের একটি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন রীনা। সেই অনুষ্ঠানে রীনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল মোহসিনের।
দীর্ঘ দিন মোহসিনের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর ১৯৮৩ সালে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন রীনা। বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ছ’বছর সংসার করার পর লন্ডন ছেড়ে আবার মুম্বই ফেরেন মোহসিন এবং রীনা। তবে মোহসিনের মন পড়ে ছিল লন্ডনেই।
বিয়ের পর কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন রীনা। ছ’বছর গৃহবধূ থাকার পর আবার অভিনয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। এমনকি, মোহসিনকেও তিন-চারটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন রীনা। কিন্তু এই আলোর দুনিয়া থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন মোহসিন।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, পাকাপাকি ভাবে লন্ডনে বসবাস করতে চেয়েছিলেন মোহসিন। কিন্তু রীনার তাতে মত ছিল না। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, মোহসিনের বিলাসবহুল জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারছিলেন না রীনা। তাই ১৯৯০ সালে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা।