Jeetendra

স্ত্রীর ‘করবা চৌথ’ অল্পের জন্য বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচায় বলি নায়ককে! তবে প্রাণরক্ষা হয়নি অভিনেত্রীর

বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছিলেন বলি অভিনেতা। মনে মনে স্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘‘ও যদি সে দিন আমায় না আটকাত, তা হলে আমি ওই বিমানে থাকতাম। আমিও মারা যেতাম সে দিন। ও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে।’’

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ১৪:২৫
Share:
০১ ১৭

বৃহস্পতিবার দুপুরে অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছু সময় পরেই ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান (এআই ১৭১)। রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি ভেঙে পড়ে। মুহূর্তে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারপাশ। বিমানে আগুন ধরে যায়। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৭০। বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে সারা দেশ তোলপাড়। এমনই এক বিমান দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন বলি অভিনেতা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি এক অভিনেত্রীর। এক অনুষ্ঠানে এসে সে কথাই জানিয়েছিলেন বলিউডের সেই অভিনেতা।

০২ ১৭

ছোট পর্দার এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলিউডের ‘জাম্পিং জ্যাক’ জীতেন্দ্রকে। সেই অনুষ্ঠানে এসে তাঁর জীবনের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। জীতেন্দ্র জানিয়েছিলেন, তিনি এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে পারতেন। কিন্তু স্ত্রীর কারণে সেই বিমানে উঠতে পারেননি তিনি। ভাগ্যক্রমে প্রাণরক্ষা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু জীতেন্দ্রের সমসাময়িক এক অভিনেত্রী সেই বিমানে ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনার মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।

Advertisement
০৩ ১৭

অনুষ্ঠানে এসে ১৯৭৬ সালের একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন জীতেন্দ্র। ১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে মুম্বই (তৎকালীন বম্বে) বিমানবন্দর থেকে ছাড়ার কথা ছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭১-এর। ওই বিমানে চেপে চেন্নাই যাবেন বলে নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিনেতা।

০৪ ১৭

জীতেন্দ্র জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যা ৭টার সময় বিমান ছাড়ার কথা ছিল। তাঁর সহযাত্রী হিসাবে ছিলেন দক্ষিণী ফিল্মজগতের অভিনেত্রী রানি চন্দ্র। নাচের অনুষ্ঠান সেরে পশ্চিম এশিয়া থেকে মা এবং তিন বোনকে নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। মুম্বই হয়ে চেন্নাই যাওয়ার কথা তাঁদের। কিন্তু মুম্বই থেকে যাত্রা শুরুর পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন তাঁরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে বিমানটি। সেই দুর্ঘটনায় রানি এবং তাঁর পরিবারের চার সদস্যই মারা যান।

০৫ ১৭

ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন জীতেন্দ্র। কারণ, তিনি বিমানে উঠতেই পারেননি। জীতেন্দ্র জানান, সন্ধ্যা ৭টার সময় বিমান ছাড়ার কথা জেনে নির্ধারিত সময়ের আগেই মুম্বই বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন যে, চেন্নাই যাওয়ার বিমান ছাড়তে দু’ঘণ্টা দেরি হতে পারে। তা শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে জীতেন্দ্র তাঁর স্ত্রী শোভা কপূরকে ফোন করেন।

০৬ ১৭

ঘটনার দু’বছর আগে ১৯৭৪ সালে শোভাকে বিয়ে করেছিলেন জীতেন্দ্র। স্বামীর মঙ্গল কামনার জন্য ‘করবা চৌথ’ পালন করেছিলেন শোভা। সারা দিন উপোস করে ছিলেন তিনি। নিয়মানুযায়ী, চাঁদ ওঠার পর স্বামীর মুখ দেখে উপোস ভাঙেন বিবাহিতারা। শোভাও তা-ই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জীতেন্দ্র সেই সময় ছিলেন বিমানবন্দরে। তা নিয়ে মনখারাপ হলেও জীতেন্দ্রকে মুখে কিছু বলেননি শোভা।

০৭ ১৭

বিমান যে দেরি করে ছাড়বে সে কথা শোভাকে ফোন করে জানিয়ে জীতেন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘আমার বিমান ছাড়তে ছাড়তে সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা বাজবে। আমি বাড়ি ফিরছি। করবা চৌথের জন্য যা যা করতে হবে, তুমি মন ভরে করে নিয়ো।’’

০৮ ১৭

জীতেন্দ্রের কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন শোভা। দেরি না করে ‘করবা চৌথ’-এর আয়োজন করতে শুরু করেন তিনি। জীতেন্দ্র বাড়ি ফিরতেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছিলেন শোভা। কিন্তু তাড়াহুড়ো করেও কোনও লাভ হয়নি।

০৯ ১৭

জীতেন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘সে দিন যেন চাঁদের দেখাই পাওয়া যাচ্ছিল না। এ দিকে শোভাও সব আয়োজন সেরে ফেলেছিল। হঠাৎ আমার কাছে ও আবদার করে বসল যে, চাঁদ না উঠলে কিছুতেই আমার বাড়ি থেকে বেরোনো চলবে না। অগত্যা স্ত্রীর কথায় রাজি হয়ে গেলাম।’’

১০ ১৭

জীতেন্দ্রের দাবি, শোভার জোরাজুরিতে সে দিন বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলেন তিনি। আর চেন্নাই যাওয়া হয়নি তাঁর। অন্য দিকে, মুম্বই বিমানবন্দর থেকে দেরি করে চেন্নাইগামী বিমানটি ছাড়ে। কিন্তু উড়ানের কিছু ক্ষণ পরেই বিমানটি আছড়ে প়ড়ে। চারদিকে কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। সেই সময় বিমানের ভিতর মা এবং তিন বোনকে নিয়ে বসেছিলেন অভিনেত্রী রানি।

১১ ১৭

জীতেন্দ্র বলেন, ‘‘যখন বিমান দুর্ঘটনা হয়, তখন আমি মুম্বইয়ের পালি হিলের বাড়িতে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, হঠাৎ যেন আকাশে আগুনের গোলা ভেসে উঠল। তার পর চারদিকে ধোঁয়া। সে কী ভয়ানক দৃশ্য! সেই বিমানে আমার থাকার কথা ছিল।’’

১২ ১৭

বিমান দুর্ঘটনার হাত থেকে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছিলেন জীতেন্দ্র। মনে মনে শোভাকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘‘শোভা যদি সে দিন আমায় না আটকাত, তা হলে আমি ওই বিমানে থাকতাম। আমিও মারা যেতাম সে দিন। শোভা আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে।’’

১৩ ১৭

মুম্বই বিমানবন্দরের ২৭ নম্বর রানওয়ে থেকে উড়েছিল বিমানটি। কিন্তু ইঞ্জিনের গোলযোগ দেখা দেওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে মুম্বই বিমানবন্দরে আপৎকালীন অবতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাইলট। বিমান ঘুরিয়ে রানওয়েতে অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মাটিতে আছড়ে পড়ে সেটি।

১৪ ১৭

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ১৯৭৬ সালের বিমান দুর্ঘটনায় মোট ৯৫ জনের প্রাণহানি হয়েছিল। মৃত যাত্রীদের তালিকায় ছিলেন রানি, তাঁর মা এবং তিন বোনও। জীতেন্দ্র জানিয়েছিলেন, অনেকেই বিমান দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি যে ওই বিমানে ওঠেননি, তা বিশেষ কেউ জানতেন না। খোঁজ নিতে জীতেন্দ্রের বাড়িতে টেলিফোনের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। এমনটাই দাবি করেছিলেন অভিনেতা।

১৫ ১৭

বলিপাড়া সূত্রে খবর, সেই সময় ‘ভদ্রকালী’ নামের তামিল ভাষার একটি ছবির শুটিং করছিলেন রানি। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ছবির শুটিং মাঝপথে থেমে যায়। পরে ‘বডি ডাবল’ এবং পুরনো ফুটেজ ব্যবহার করে ছবির কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।

১৬ ১৭

অহমদাবাদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে মোট ২৪২ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী, ১০ জন ক্রু সদস্য এবং দু’জন পাইলট। এক যাত্রী বাদে সকলেরই মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

১৭ ১৭

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছু সময় পরেই ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিমান (এআই ১৭১)। সেই বিমান গিয়ে ধাক্কা খায় অহমদাবাদের মেঘানি নগরের বসতি এলাকায় বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ভবনে। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৭০।

মূল ছবি: এআই। অন্যান্য ছবি: পিটিআই এবং সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement