Lotus blooms in Wular Lake

৩০ বছর পর কাশ্মীরের উলার হ্রদে ফিরল ‘ঈশ্বরের উপহার’, আনন্দে আত্মহারা স্থানীয়েরা! কী ভাবে হারিয়েছিল ‘অমূল্য রতন’?

বান্দীপোরা এবং সোপোর শহরের মধ্যে অবস্থিত এবং প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত উলার হ্রদ একসময় পদ্মে পরিপূর্ণ ছিল। কাশ্মীরের স্থানীয়েরা পদ্মের কাণ্ডকে ‘নাদরু’ বলেন। কাশ্মীরে এটি একটি জনপ্রিয় খাদ্য।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ১৫:৫১
Share:
০১ ১৭

কাশ্মীরের বান্দীপোরার উলার হ্রদে ফুটে রয়েছে রাশি রাশি গোলাপি পদ্ম। যেন গোলাপি পদ্মের সমুদ্র! আর সে দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে এক প্রৌঢ়। মাঝেমধ্যে ছুঁয়ে দেখছেন পদ্মপাপড়ি। এ-ও কি সম্ভব! নিজের চোখকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি। কাশ্মীরের ওই প্রৌঢ়ের নাম আবদুল রশিদ দার। কিন্তু কেন বিস্ময় গ্রাস করেছে আবদুলকে?

০২ ১৭

বান্দীপোরায় রয়েছে উলার হ্রদ। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিষ্টি জলের হ্রদ সেটি। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৬৭ কিলোমিটার দূরে, কুয়াশাচ্ছন্ন হরমুখ পাহাড়ে ঘেরা সেই মনোরম হ্রদ জুড়ে সম্প্রতি শয়ে শয়ে পদ্ম ফুটতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৭

উলার হ্রদে শেষ পদ্ম ফুটেছিল বছর তিরিশেক আগে। ভয়াবহ বন্যায় ওই এলাকা থেকে সম্পূর্ণ রূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল পদ্ম। ৩০ বছরেরও বেশি পরে আবার পদ্ম ফুটেছে উলারে।

০৪ ১৭

আবদুলের বাবা পেশায় পদ্মচাষি ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে পদ্মকাণ্ড সংগ্রহে যেতেন আবদুল। তাঁর কাছে উলারে আবার পদ্ম ফোটার ঘটনা ‘অলৌকিক’।

০৫ ১৭

সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে আবদুল বলেছেন, ‘‘যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবার সঙ্গে পদ্মের ডালপালা কাটতে যেতাম। কিন্তু সে অনেক আগের কথা। আমি ভেবেছিলাম আমরা ঈশ্বরের এই উপহার চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।’’

০৬ ১৭

বান্দীপোরা এবং সোপোর শহরের মধ্যে অবস্থিত এবং প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত উলার হ্রদ একসময় পদ্মে পরিপূর্ণ থাকত। কাশ্মীরের স্থানীয়েরা পদ্মের কাণ্ডকে ‘নাদরু’ বলেন। কাশ্মীরে এটি একটি জনপ্রিয় খাদ্য। মাছ বা দই দিয়ে পদ্মকাণ্ড রান্না করে ‘নাদরু ইয়াখনি’ নামে একটি সুস্বাদু পদ বানানো হয়।

০৭ ১৭

কাশ্মীর উপত্যকার ডাল এবং মানসবল হ্রদেও পদ্ম ফোটে। সেখানে পদ্মের কাণ্ড সংগ্রহ করে জীবনযাপন করেন বহু মানুষ। তবে সেই কাজ যথেষ্ট পরিশ্রমের। হ্রদে মাথা ডুবিয়ে সঠিক পদ্মের কাণ্ড বেছে সংগ্রহ করতে হয় সেগুলি।

০৮ ১৭

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে কাশ্মীর। উলার হ্রদের সমৃদ্ধ বাস্তুতন্ত্রের যথেষ্ট ক্ষতি করে সেই বন্যা। প্রচুর পরিমাণে পলি জমা হয় সেই হ্রদে। ফলে পদ্ম ফোটাও বন্ধ হয়ে যায়।

০৯ ১৭

স্থানীয়দের একাংশের জন্য সেই বন্যা ছিল জীবিকা কেড়ে নেওয়ার অভিশাপ। হ্রদের ধারে অবস্থিত লঙ্ক্রেশিপোরা গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সে বছর পদ্ম ফুল ফুটেছিল উলারে। হ্রদটি পদ্মে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তার পরেই সেই ভয়ানক দুর্যোগ। আমার মনে হয়েছিল চিরতরে পদ্ম হারিয়েছে উলার। অন্তত কিছু দিন আগে পর্যন্তও তেমনটা মনে করছিলাম।’’

১০ ১৭

কিন্তু কী করে অসাধ্যসাধন হল? উলার সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের সংরক্ষণ প্রচেষ্টার জন্য এই পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। বন্যার ফলে জমা পলি পরিষ্কার করে হ্রদটি পলিমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

১১ ১৭

ঘটনা প্রসঙ্গে উলার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জ়োনাল অফিসার মুদাসির আহমেদের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে আমরা যে সব এলাকায় পলি অপসারণ করেছি, সেখানে পদ্ম ফুটেছে। পদ্মের বীজ পলি এবং মাটির গভীরে চাপা পড়ে থাকায় জন্মাতে পারেনি। এখন পলি সরানোয় আবার পদ্ম ফুটতে শুরু করেছে।’’

১২ ১৭

অন্য এক সরকারি কর্তা জানিয়েছেন, ১৯৯২ সাল থেকে পলির নীচে চাপা পড়ায় উলারে আর পদ্মের কাণ্ড বৃদ্ধি পায়নি। তবে পদ্মের রাইজোম বা এর লতানো মূলের কাণ্ড ২৫ বছর আগে পর্যন্ত হ্রদে ছিল।

১৩ ১৭

২০২০ সালে উলার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হ্রদ এবং হ্রদের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেন। হ্রদ থেকে পলি অপসারণ করাও ওই প্রকল্পের অংশ ছিল।

১৪ ১৭

২০২৪-এ সেই প্রচেষ্টা সফল হয়। বহু বছর পর উলারে পদ্ম ফোটার লক্ষণ আবার দেখা গিয়েছিল। উৎসাহিত হয়ে হ্রদে পদ্মের বীজ ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ধীরে ধীরে উলারের একাংশে পদ্ম ফোটা শুরু হয়।

১৫ ১৭

কিন্তু গত বছর ফোটা ফুলগুলি কাউকে কাটতে দেওয়া হয়নি। উলার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ চাননি যে, উলার আবার পদ্মহারা হয়ে যাক। তবে এ বছর পদ্মের ফলন আরও বেশি হয়েছে।

১৬ ১৭

তবে উলারের বাস্তুতন্ত্রকে পুরোপুরি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা এখনও অব্যাহত। উলার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সদ্যপ্রাক্তন এক কর্তা জানিয়েছেন, হ্রদ থেকে এখনও পর্যন্ত ৭৯ লক্ষ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে।

১৭ ১৭

উলার হ্রদে পদ্ম ফেরায় তা নিয়ে উৎসাহিত স্থানীয় মানুষদের একাংশ। ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য উলারে পদ্ম ফোটা আনন্দের। কারণ, পদ্মের কাণ্ড সংগ্রহ করা স্থানীয়দের মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী পেশা। ফলে পদ্ম স্থানীয়দের একাংশের অর্থনৈতিক হাল ফেরাবে বলেও অনেকে মনে করছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement