পান থেকে চুন খসলেই মনে হয় এই জীবন বৃথা! আর পারছেন না। ভাবেন যে, কেন আপনার সঙ্গেই এমন হয়? তা হলে বাঁচার রসদ, লড়াই করার সাহস খুঁজে নিন জ়িয়নের থেকে।
এই মানুষটি জন্ম থেকে একাই লড়েছেন। তা-ও আবার দু’টি পা ছাড়াই। একাধিক হার মানা পরিস্থিতি এলেও পিছপা হননি তিনি। বরং বিশ্ব জুড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন।
জ়িয়ন ক্লার্ক এক জন আমেরিকান। ১৯৯৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কলম্বাসে জন্ম তাঁর। জন্মের সময়ই বিরল রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
কডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত জ়িয়ন। আমৃত্যু তাঁকে এই রোগ নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এমন রোগে শরীরের নিম্নাংশের কোনও বিকাশ হয় না। ফলে জন্মের সময় থেকে জ়িয়নের দু’টি পা-ই ছিল না।
জ়িয়নের বাবা-মা যখনই বুঝতে পারেন তাঁদের সন্তান এমন বিরল রোগের শিকার, তখনই তাঁরা আর জ়িয়নকে গ্রহণ করেননি। রেখে এসেছিলেন এক অনাথ আশ্রমে।
অনাথ আশ্রমেই বড় হয়েছেন জ়িয়ন। বেশ কয়েক বার তাঁকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। প্রতি বার জ়িয়ন ভেবেছেন এ বার হয়তো তিনি বাবা-মায়ের ভালবাসা পাবেন, কিন্তু প্রতি বারই আশাহত হয়ে ফিরে এসেছেন আশ্রমে।
দত্তক নিলেও বেশি দিন তাঁকে আশ্রয় দিতেন না কেউ। অবশেষে ১৭ বছর বয়সে মা পান তিনি। কিম্বারলি হকিন্স নামে এক মহিলা তাঁকে দত্তক নেন। তিনি আর ফিরিয়ে দেননি জ়িয়নকে।
পালিকা মাকে পেয়ে নতুন ভাবে বাঁচার চেষ্টা করছেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন জ়িয়ন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মা আমাকে বাঁচার একটি উদ্দেশ্য দিয়েছেন।”
তার পর থেকেই জ়িয়নের জীবনে অনেক রকম সুযোগ আসতে থাকে। পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। যদিও সেখানে সহপাঠীদের নানা রকম টিপ্পনী সহ্য করতে হয়েছে জ়িয়নকে।
কখনও বন্ধুরা হাসাহাসি করতেন, কখনও দলবল মিলে ঘিরে ধরা হত জ়িয়নকে। তবুও কোনও কিছুই তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। জ়িয়ন খেলাধুলা পছন্দ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে শুরু করেন।
পা নেই, খেলাধুলা করতেন কী ভাবে! হ্যাঁ, মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন উঁকি দেওয়া স্বাভাবিক। তবে জানলে অবাক হবেন এই জ়িয়নের কিন্তু ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’-এও নাম রয়েছে। তা-ও আবার খেলাধুলা বিভাগেই।
পা নেই তো কী হয়েছে! দুই হাতই যথেষ্ট। জ়িয়ন নিজের দুই হাত দিয়ে এত দ্রুত দৌড়োতে পারেন যে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের পায়ে দৌড়োনোও তাঁর কাছে হার মানাবে।
মাত্র ৪.৭৮ সেকেন্ডে হাত দিয়ে সবচেয়ে দ্রুত ২০ মিটার হাঁটার কারণে তাঁর নাম উঠেছে বিশ্বরেকর্ডের বইয়ে। এ ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আরও রেকর্ড। তিনি মাত্র তিন মিনিটে ২৪৮টি ‘পুশ-আপ’ করতে পারেন।
বিশ্বরেকর্ড গড়ার লড়াই সহজ ছিল না জ়িয়নের জন্য। জিমে যাওয়া শুরু করেছিলেন তিনি। সেখানেও তাঁকে প্রচুর কটূক্তি শুনতে হয়েছিল। শরীর গঠনের পাশাপাশি জ়িয়ন এ-ও উপলব্ধি করেছিলেন যে, তাঁর মতো আরও অনেকে রয়েছেন যাঁরা হয়তো বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলছেন। তাঁদের কাছে পৌঁছোতে হলে বিশেষ কিছু করতে হবে।
আরও পরিশ্রম করতে শুরু করেন জ়িয়ন। হাত দিয়ে দৌড়ে বিশ্বরেকর্ডের স্বপ্ন বুনতে থাকেন। সে সময় অনেক রকম প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে তাঁকে। অনেক সময় হাত কেটে রক্তও বেরিয়ে যেত।
তবুও থেমে থাকেননি বলেই তিনি আজ গোটা বিশ্বের অনুপ্রেরণা। ২০১৮ সালে তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্তরের বিভিন্ন ‘রিয়্যালিটি শো’-তেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
আজ বিশ্ব জুড়ে নাম জ়িয়নের। সমাজমাধ্যমেও তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর। সকালে উঠে পোষ্যের দেখভালের পরই অনুশীলন শুরু করে দেন জ়িয়ন। তাঁর অনুশীলনের বিভিন্ন ভিডিয়ো এবং ছবি প্রায়শই অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। উদ্দেশ্য একটাই, তাঁকে দেখে যেন আরও অনেকে লড়াই করার কারণ খুঁজে পান।