Laxmi Puja 2025

ক্ষীরেলা থেকে মোহনভোগ, লক্ষ্মীপুজোর ভোগের মিষ্টি আগে বাড়িতেই তৈরি হত, আজও সহজেই বানাতে পারেন

আশ্বিনের কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোর ঐতিহ্য বাংলার নিজস্ব সম্পদ। দেবী লক্ষ্মী যেন বাড়িরই মেয়ে। পুজোর আয়োজন, ভোগ রান্না, নানা রকম মিষ্টি সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করেন বাড়ির মহিলারাই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১১:০৬
Share:

লক্ষ্মীপুজোর ভোগের মিষ্টি বানাতে পারেন বাড়িতেই, প্রণালীও সহজ। ছবি: ফ্রিপিক।

সুন্দর করে নিকানো মেঝেতে পিটুলির আলপনা। জলচৌকির উপর বেতের চুপড়িতে উপচে পড়ছে ধান। দু’টি কাঠের লম্বা সিঁদুরকৌটো লাল চেলি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। সামনে থরে থরে সাজানো নাড়ু, মোয়ার মতো রকমারি ঘরে তৈরি মিষ্টি। আয়োজন সম্পূর্ণ করে ছড়া কাটতেন বাড়ির মহিলারা। পূর্ববঙ্গে ‘আড়ি লক্ষ্মী’ নামে পরিচিত এই পুজোয় কোনও পুরোহিত বা মন্ত্রের প্রয়োজন পড়ত না। ছড়া কেটেই মা লক্ষ্মীকে আবাহন করতেন মেয়েরা। এ ভাবেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হত অবিভক্ত বাংলার গ্রামে। এলাকা ভেদে বদলাত উপকরণ, আয়োজন। আশ্বিনের কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোর ঐতিহ্য বাংলার নিজস্ব সম্পদ। দেবী লক্ষ্মী যেন বাড়িরই মেয়ে। পুজোর আয়োজন, ভোগ রান্না, নানা রকম মিষ্টি সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করেন বাড়ির মহিলারাই।

Advertisement

সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়িতে বহু যুগ ধরেই লক্ষ্মীপুজো সম্পূর্ণ স্ত্রী আচারের পুজো হিসেবেই পরিচিত। অতীতে বর্ধিষ্ণু গৃহস্থের বাড়িতেই শুধুমাত্র পুরোহিত ডেকে লক্ষ্মী পুজো হত। ইদানীং তার চল বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু ঘরে ঘরে মেয়েরাই পুজোর জোগাড় ও আচারবিধি পাল করে আসছেন নিষ্ঠা ভরে। লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে কিন্তু বাঙালির খাওয়াদাওয়ার ইতিহাসও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনে আমিষ, বিশেষত জোড়া ইলিশ খাওয়ার চল বহুচর্চিত। ভিন্ন মত রয়েছে এ পার বাংলার বাঙালিদের মধ্যে। তাঁদের পুজো-পার্বণ মানেই নিরামিষ আর লক্ষ্মীপুজো মানেই খিচুড়ি ও লাবড়া! সঙ্গে নানা রকম মিষ্টি। দুধ, ছানা, নারকেল দিয়ে যে যেমন পারেন মিষ্টি গড়ে নিবেদন করেন। কেনা মিষ্টির যতই রমরমা হোক না কেন, এখনও নিজের হাতে মিষ্টি গড়ে ভোগে নিবেদনের আচার পালন করা হয় অনেক বাড়িতেই। নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ু থেকে শুরু করে ক্ষীর, চালের পায়েস, নানা রকম সন্দেশ— সে মিষ্টির তালিকাও লম্বা। গতানুগতিক মিষ্টির বাইরে গিয়েও নানা রকম মিষ্টি তৈরি করার রীতি আজও রয়ে গিয়েছে বাঙালি বাড়িতে।

চন্দ্রপুলি। ছবি: সংগৃহীত।

লক্ষ্মীপুজো মানেই নাড়ু, নারকেলের নানা মিষ্টির সম্ভার। নারকেল যদি বেশি আসে বাড়িতে, তা হলে নাড়ু গড়ার পাশাপাশি চন্দ্রপুলি বানিয়ে নেওয়াও কঠিন নয়। নারকেল কুরে নিয়ে ভাল করে পিষে দুধ বার করে নিতে হবে। কোড়ানো নারকেলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে পাক দিতে হবে কড়াইতে। ঘন ও চিটচিটে হয়ে এলে তাতে এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে। এই পাক ভাল করে মেখে চন্দ্রপুলির ছাঁচে গড়ে নিলেই হবে।

Advertisement

মোহনভোগ। ছবি: সংগৃহীত।

পুজোর দিনে কেউ চালের পায়েস রাঁধেন, কেউ আবার ক্ষীর বানান। আগেকার কালে দুধ ঘন করে জ্বাল দিয়ে ক্ষীরেলা বানানো হত অনেক বাড়িতেই। ক্ষীরেলা প্রস্তুত করতে পারলে তা থেকে ক্ষীরের নানা মিষ্টি গড়াও সহজ হয়। প্রথমে দুধ ভাল করে জ্বাল দিতে হবে। অর্ধেক দুধ মরে এলে তাতে কয়েকটি গুড়ের বাতাসা ফেলে নাড়তে হবে। ক্ষীরেলা তৈরি প্রক্রিয়া হল— নিরন্তর নেড়ে যেতে হবে। আঁচ এমন রাখতে হবে, যাতে কড়াইতে লেগে না যায়। দুধের সবটা মরে গিয়ে ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিতে হবে। ক্ষীরেলা থকথকে হবে, তাতে কাজু, কিশমিশ মিশিয়ে দিলে ঘন ক্ষীরের পাক তৈরি হয়ে যাবে।

ছবি: সংগৃহীত।

ক্ষীরেলার জন্য ক্ষীরটুকু রেখে বাকিটা দিয়ে ক্ষীরের বরফি বানানো কঠিন নয়। দোকান তেকে কেনা বরফির তুলনায়, তা অনেক গুণে বেশি সরেস ও সুস্বাদু। এর জন্য আগে চিনি জ্বাল দিতে হবে ভাল করে। শিরা তৈরি হলে তাতে কয়েকটি মিছরি ফেলে দিয়ে নাড়তে হবে। দানার মতো হয়ে এলে তবে তাতে ক্ষীর দিয়ে ভাল করে পাক দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। একটি থালায় এই ক্ষীরের পাক রেখে ঠান্ডা হলে বরফির আকারে গড়ে নিতে হবে।

ক্ষীরের বরফি। ছবি: সংগৃহীত।

লক্ষ্মীপুজোর দিনে গুড়ের মিষ্টি হবে না, তা কী হয়! বানিয়ে নিতে পারেন চিঁড়ের চাকতি। চিঁড়ে, মুড়ি বা খই দিয়ে চাকতি বানানো যায়, তাতে গুড়ের পাক থাকলে খেতেও সুস্বাদু হয়। চিঁড়ে শুকনো খোলায় নেড়ে নিতে হবে আগে। এ বার গুড় জ্বালে বসাতে হবে। চিটচিটে হয়ে এলে তাতে চিঁড়ে ফেলে নাড়তে হবে। শক্ত হয়ে এলে নামিয়ে গোল গোল করে গড়ে নিতে হবে আগে। তার পর হাতের চাপে চ্যাপ্টা চাকতি বানিয়ে নিলেই হল।

মাখা সন্দেশ। ছবি: সংগৃহীত।

মাখা সন্দেশও তৈরি করে নিতে পারলে ভালই হয়। এর প্রণালীও কঠিন নয়। ছানা কাটানোর পাউডার দোকানে পাওয়াই যায়। তা দিয়ে বা দুধে লেবু চিপে ছানা বানিয়ে নিতে হবে। এ বার ছানা একটি থালায় রেখে খুব ভাল করে পিষে নিতে হবে। অন্য দিকে, দুধ ফুটিয়ে তাতে গুঁড়ো দুধ, চিনি, কডেন্সড মিল্ক দিয়ে ঘন মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। এ বার দুধের মিশ্রণে ছানা দিয়ে মিনিট পাঁচেক নাড়াচাড়া করতে হবে, যত ক্ষণ না সেটি শুকিয়ে আসে। মিশ্রণটি শুকিয়ে এলে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা ছড়িয়ে দিলেই হয়ে যাবে।

যে কোনও পুজোয় মোহনভোগ দেওয়ার চল অনেক বাঙালি বাড়িতেই আছে। তবে এটি বানানোর ঝক্কি অনেকেই নিতে চান না। অথচ বাড়িতে সঠিক নিয়মে বানালে তার স্বাদ হয় অপূর্ব। হাতে যদি সময় থাকে, তা হলে মুগ ডালের মোহনভোগ বানিয়ে নেওয়া যাবে সহজেই। তার জন্য আগের দিন রাত থেকে মুগডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। নরম হলে ভাল করে বেটে নিতে হবে। এ বার কড়াইতে ঘি গরম করে তাতে ডাল দিয়ে নাড়তে হবে যত ক্ষণ না ঘন মিশ্রণ তৈরি হয়। এতে বাদাম, পেস্তা, ছোট এলাচের গুঁড়ো, কিশমিশ দিলে স্বাদ আরও বাড়বে। ভাল করে পাক দিয়ে নামিয়ে নিয়ে সামান্য কর্পূরের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে মোহনভোগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement